নয়া দিল্লি: দেশে নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি নিয়ে চলতি বিতর্কের মধ্যে বিজেপির কাছে ঝাড়খণ্ড নির্বাচনের (Jharkhand Election) ফলাফল নিয়ে কোনও সুসংবাদ নেই। রাজ্যে ২২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বিজেপিকে এবার ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও প্রাথমিক প্রবণতা থেকে মনে হয়েছিল যে ঝাড়খণ্ডের ফলাফল (Jharkhand Election Resuts) কারও পক্ষেই যাবে না, তবে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই ফলাফল ক্রমশ কংগ্রেস এবং জেএমএম জোটের অনুকূলে যেতে থাকে। তবে নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি-র মতো ইস্যুর কারণেই বিজেপির জন সমর্থনে ভাঁটা কিনা তাও এখনও স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না । বিজেপির নির্বাচনী কৌশলের দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে প্রচার চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সমাবেশগুলিতে বারবারই জাতীয় স্তরের নানা ইস্যু এবং 'জাতীয়তাবাদ'-এর প্রসঙ্গে উঠে এসেছে। তবে বিজেপির ইস্তাহারে ঝাড়খণ্ডের স্থানীয় ইস্যুতে জোর দেওয়া হয়।
১- অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব
ঝাড়খণ্ড নির্বাচনে অর্থনৈতিক মন্দা যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে জামশেদপুর, বোকারো, ধানবাদের মতো শিল্পাঞ্চলগুলিতে। এখানকার জামশেদপুরের আদিত্যপুর অঞ্চলে কারখানা বন্ধের ঘটনা এখন নিত্য নৈমিত্তিক। টেলকোর তত্ত্বাবধানে এখানে প্রায় ১৪০০টি শিল্প চলে। সম্প্রতি, টেলকোতে এমন অনেক দিন যাচ্ছে যখন এখানকার কাজ বন্ধ থাকছে। এর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কারখানার উপর নির্ভরশীল শ্রমিকদের জীবন। স্পষ্টতই, ওই শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং এর জন্যেই বিজেপি ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে।
দ্বিতীয় মেয়াদেও সরকার গড়ার স্বপ্ন দেখছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস!
২- বিরোধী শক্তির উত্থান
ঝাড়খণ্ডে, এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করলেন এবং এই প্রথম কোনও দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল। তবে গত পাঁচ বছরে, বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের কণ্ঠ ক্রমশই জোরালো হয়েছে। তার কারণ রাজ্য সরকারের দুর্নীতি।
৩- নির্বাচনী টিকিট বিতরণে রঘুবর সরকারের স্বৈরতন্ত্র
ঝাড়খণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী রঘুবার দাসের একনায়কতন্ত্র নিয়ে প্রচণ্ড অসন্তোষ তৈরি হয়। নির্বাচনী টিকিট বিতরণেও এর প্রভাব দেখা গেছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হ'ল বিজেপির প্রবীণ নেতা সারিউ রাইকে ভোটের টিকিট না দেওয়া। অথচ ভানু প্রতাপ শাহীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়েছিল।
৪- জেএমএম এবং কংগ্রেসের শক্তিশালী জোট
বিজেপির চাপে পড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল গেরুয়া দলের বিরুদ্ধে জেএমএম এবং কংগ্রেসের একটি শক্তিশালী জোট গঠন। বিপরীতে, বিজেপি এই নির্বাচনে একা লড়েছে। এবার বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছে অল ঝাড়খণ্ড ছাত্র ইউনিয়নও, অথচ গতবার ওদের সঙ্গেই জোট বেঁধে লড়েছিল বিজেপি। এবার আলাদা ভাবে লড়েছে ওই দল।
Jharkhand Election Results: "ঝাড়খণ্ডের ভোটের ফলাফলের সঙ্গে এনআরসিকে জোড়া ভুল": বিজেপি
৫- বিজেপির কাছে আদিবাসী উপজাতির কোনও মুখ নেই
গত ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী পদে আলাদা করে কোনও মুখ ঘোষণা করেনি। তবে ঝাড়খণ্ডে উপজাতীয় ভোট বরাবরই একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করে এবং গতবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে বিজেপি উপজাতির বাইরে থেকেই রঘুবর দাসকে মুখ্যমন্ত্রী করে। অন্যদিকে জেএমএমের হেমন্ত সোরেন আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে উঠে এসেছেন এবং তাঁর বাবা শিবু সোরেনও ঝাড়খণ্ডের বড় নেতা।