জেএনইউ হামলার ঘটনায় দিল্লি পুলিশের হাতে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল। তাঁরা (Delhi Police) জানিয়েছে যে সন্দেহভাজন ৬০ জনের মধ্যে ৩৭ জনের একটি দলকে চিহ্নিত করা হয়েছে যাঁরা 'বামপন্থী বিরোধী ঐক্য' নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ দলের (JNU whatsApp group) সদস্য। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে যে জেএনইউয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের উপর গত সপ্তাহের হামলার (JNU violence) ঘটনার পিছনে তাঁদের হাত রয়েছে। এখনও পর্যন্ত এঁদের মধ্যে কমপক্ষে ১০ জনকে বহিরাগত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে যাঁরা ওই হামলার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন বলে অভিযোগ। দিল্লি পুলিশ একথাও জানিয়েছে বাম সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ও এবিভিপি দুই দলই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে হামলা চালাতে বহিরাগতের সাহায্য নিয়েছিল। জেএনইউয়ের পড়ুয়ারাই ওই বহিরাগতদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ। রবিবার দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃশংস হামলা চালায় একদল মুখোশধারী, ঘটনায় আহত হন কমপক্ষে ৩৪ জন।
"পুলিশ এবিভিপির হয়ে কথা বলছে": জেএনইউ হামলা প্রসঙ্গে বললেন কানহাইয়া কুমার
ওই হামলার পরেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবদের ঝড় ওঠে। অনেকেই কাঠগড়ায় তোলেন দিল্লি পুলিশকে। অভিযোগ ওঠে, ওই হামলার সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও হামলাকারীদের কাউকেই থামানো বা গ্রেফতার করা হয়নি।
এদিকে ওই ঘটনায় শুক্রবার ৯ জন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করে কয়েকজনের ছবি প্রকাশ করে দিল্লি পুলিশ। জানা গেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে বেশিরভাগই হলেন বাম ছাত্রনেতা। গত রবিবার সন্ধ্যায় ওই ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা এর নিন্দায় সরব হন। ওইদিনই জেএনইউয়ের হস্টেল বা ছাত্রাবাসের ফি বাড়ানোর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আন্দোলন চলছিল। সেই আন্দোলনকে ঘিরে রবিবার সেখানে একটি সংঘর্ষও বাঁধে। ওই ঘটনাকে ইঙ্গিত করেই দিল্লি পুলিশের আধিকারিকরা ছাত্রনেতা চুনচুন কুমার, পঙ্কজ মিশ্র, ঐশী ঘোষ, ওয়াসকার বিজয়, সুচেতা তালুকদার, প্রিয়া রঞ্জন, দোলন সাওয়ান্ত, যোগেন্দ্র ভরদ্বাজ এবং বিকাশ প্যাটেলের নাম অভিযুক্ত হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
"আমি ঐদিন কোনও মুখোশ পরে ছিলাম না": দিল্লি পুলিশের পাল্টা দাবি ঐশী ঘোষের
ঐশী ঘোষ বাম-নিয়ন্ত্রিত জেএনইউ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এবং যোগেন্দ্র ভরদ্বাজ এবং বিকাশ প্যাটেল বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় ছাত্র পরিষদ বা এবিভিপি-র সদস্য বলে জানা গেছে।
ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পর দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল বা ছাত্রাবাসের বর্ধিত ফি সহ অন্যান্য ব্যয়বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন একদল ছাত্র। সেই সময়েই অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করতে এবং তাঁদের বিক্ষোভ তথা ধর্মঘটকে কার্যকর করতে জেএনইউয়ের সার্ভার রুমে ঢুকে হামলা চালান ঐশী ঘোষ এবং অন্য বাম ছাত্রনেতারা।
এদিকে দিল্লি পুলিশের তোলা অভিযোগে তীব্র আপত্তি জানান ঐশী ঘোষ। "আমি ওই দিন কোনও মুখোশ পরা অবস্থায় ছিলাম না ... বরং আমিও হামলায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। আমার রক্তে ভিজে যাওয়া কাপড় এখনও রয়েছে",সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হয়ে জোর গলায় বলেন তিনি।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার ঐশী ঘোষ বলেন, "আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলার উপর আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে ... আমরা কোনও অন্যায় করিনি। দিল্লি পুলিশ আমাদের ফুটেজ প্রকাশ করুক ... আমরা এভাবে কিছুতেই সন্দেহভাজন তালিকায় থাকতে পারি না। আমাদের সংগঠনের কোনও সদস্যই কোনও অন্যায় করেনি"।