জেএনইউতে মুখোশ পরে হামলা: প্রায় ৪০ পড়ুয়া ও শিক্ষক আহত

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ৫০ জন অপরিচিত দুষ্কৃতী ৬.৩০ নাগাদ ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। ছাত্র ইউনিয়ন টুইটে দাবি করেদুষ্কৃতীরা ‘‘অপরিচিত এবিভিপি দুষ্কৃতী'' এবং তারা কেবল পড়ুয়াদের নয়, পড়ুয়াদের বাঁচাতে আসা অধ্যাপকদেরও মারধর করতে থাকে। ক্যাম্পাসে হানা দেওয়া বহিরাগতদের সঙ্গে কাজ করার অভিযোগ তুলে ছাত্র সংসদে সহসভাপতি সাকেট মুন দাবি করেন, দুষ্কৃতীরা পড়ুয়াদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছিল। তিনি বলেন, পুলিশ বিকেল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে থাকলেও তারা কিছুই করেনি। অনেকে আবার দেরিতে পুলিশকে ডাকা এবং পুলিশের কাউকেই গ্রেফতার না করার দিকে আঙুল তুলেছেন।

অধ্যাপক অতুল সুদ NDTV-কে বলেন, “ভিড় থেকে পাথর ছোঁড়া হচ্ছিল, এবং তারা হস্টেলে ঢুকে পড়ে, সম্পত্তি ভাঙচুর করে...সেগুলি ছোট পাথর ছিল না, ছিল বড় পাথর। যেগুলিতে আমাদের হাড় ভাঙতে পারে। আমি পড়ে যাই এবং যখন বেরিয়ে আসি দেখতে পাই সমস্ত গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। যার মধ্যে আমার গাড়িও রয়েছে।”

রবিবারের হিংসার নিন্দা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, রবিবারের ঘটনার সঙ্গে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদের যোগ রয়েছে। যারা ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ করছিল, তাদের লক্ষ্য ছিল ভর্তি প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করা। শুক্রবার ও শনিবারও ভাঙচুর চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দাবি, যে পড়ুয়ারা ফি বৃদ্ধির সমর্থন করেছিল তাদের মারধর করে পুলিশ আসার আগেই চম্পট দেয় ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা। 

পরে সন্ধের দিকে বর্ষীয়ান পুলিশ আধিকারিক দেবেন্দ্র আর্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি এও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের লিখিত আবেদনের পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকেছিলেন। 

কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধি এইমসে ভর্তি হওয়া আহত পড়ুয়াদের দেখতে যান। রক্তাক্ত অবস্থায় ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশি ঘোষকে এইমস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মাস্ক পরা গুন্ডারা আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। আমার শরীর দিয়ে রক্ত ঝরেছে। আমায় নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে।”

এবিভিপি দাবি জানিয়েছে, তাদের পড়ুয়াদের বাম সংগঠনের পড়ুয়ারা মারধর করেছে। প্রায় ২৫ জন পড়ুয়া গুরুতর জখম হয়েছে।

বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর, যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র। তিনি টুইট করে জানিয়েছেন, ‘‘জেএনইউ-তে যা হয়েছে তার ছবি দেখলান। ঘটিত হিংসার তীব্র নিন্দা করি। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।''

NDTV-কে সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদব বলেন, “দিল্লি পুলিশের নাকের ডগায় এই হামলা হয়েছে... এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর হামলা”।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি এই হাম‌লার তীব্র নিন্দা করে জানান, ‘‘ফ্যাসিস্টরা আমাদের দেশকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা সাহসী পড়ুয়াদের কণ্ঠস্বরকে ভয় পাচ্ছে। আজ জেএনইউতে হওয়া হিংসা সেই ভয়েরই প্রতিফলন।''

গত ৭০ দিন ধরে হস্টেলের ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে পড়ুয়াদের সংঘাত হয়েছে।