প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পরেই, কংগ্রেস ছাড়েন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া
নয়াদিল্লি:
কংগ্রেসের সঙ্গে ১৮ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে অবশেষে বিজেপিতে যোগ দিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া (Jyotiraditya Scindia) । দীর্ঘদিন কংগ্রেসে ছিলেন তাঁর বাবাও। ১৫ মাস আগে মধ্যপ্রদেশে (Madhyapradesh) ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস, তারমধ্যেই ২১ জন বিধায়ক নিয়ে তাঁর দলত্যাগ কংগ্রেসকে বিপদে ফেলে দিল। দুপুর ১২.৩০টা নাগাদ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল জ্যোতিরাদিত্যের, তবে সূত্রের খবর, “রাহু কাল” এড়াতে তা পিছিয়ে দুপুর ২টো করা হয়। তাঁকে রাজ্যসভায় প্রার্থী করা হতে পারে, এবং খুব শীঘ্রই তা জানাতে পারে বিজেপি, পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও সামিল করা হতে পারে তাঁকে। মঙ্গলবার, দেশজুড়ে হোলির দিনেই, অমিত শাহের বাড়িতে যান জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সেখানেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাড়িতে যান তাঁরা। বৈঠকের কিছুক্ষণ পরেই, সানিয়া গান্ধিকে লেখা চিঠি ট্যুইট করেন তিনি, যেখানে “নতুন শুরু”র কথা জানান মধ্যপ্রদেশের এই তরুণ নেতা। আলিঙ্গন করে তাঁকে বিজেপির সদর দফতরে স্বাগত জানান, গত বছর বিজেডি ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া জয় পাণ্ডা।
গলায় গেরুয়া উত্তরীয় পড়ে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেন, “কংগ্রেস যা হতে চায়, তাতে আর বেশিদিন নেই, তারা অপলাপ করেই অস্বিত্ত্ব বজায় রেখেছে কংগ্রেস”। “দলে আমায় স্বাগত জানানোয়” প্রধানমন্ত্রী মোদি ও অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
দুপুর ১২.৩০টা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বিজেপিতে যোগ দেবেন বলে মনে করা হয়েছিল, তবে সূত্রের খবর, “রাহু কাল” এড়াতে তা পিছিয়ে ২টা করা হয়। খুব শীঘ্রই তাঁর নাম রাজ্যসভার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে পারে পারে বিজেপি, এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সামিল করা হতে পারে।
মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় কংগ্রেসের রয়েছে ১২০ জন বিধায়ক, ২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতায় প্রয়োজন ১১৬টি আসন। ২১ জন বিধায়কের ইস্তফাপত্র গৃহীত হলে, সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়াবে ১০৪। বিজেপির রয়েছে ১০৭টি আসন, ফলে তারা অনায়সেই সরকার গড়ার দাবি জানাতে পারবে।
বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের আগে, নিজেদের শক্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে নিজেদের দলের বিধায়কদের মধ্যপ্রদেশের বাইরে নিয়ে গিয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেস দুই দল। গুরগাঁও এ আইটিসি গ্র্যান্ড ভারত পাঁচতারা হোটেলে তাদের বিধায়কদের রেখেছে বিজেপি, কংগ্রেস তাদের বিধায়কদের রাজস্থানে নিয়ে গিয়েছে রেখেছে, সেরাজ্যেও ক্ষমতায় রয়েছে তারা।
৯৪জন বিধায়ককে জয়পুরে নিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। দলের দাবি, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ঘনিষ্ঠ ১৯জন বিধায়ক এখনও বেঙ্গালুরুতেই রয়েছেন, তাঁরা বিজেপিতে যোগ দেবেন না। গতকাল রাতে মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ বলেন, “কোনও চিন্তার বিষয় নেই। আমরা আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করব”।
এদিন সকালে এক বিদ্রোহী বলেন, “আমরা মহারাজের জন্য এসেছি...বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য নয়”। কর্নাটকের কংগ্রেসের ক্রাইসিসি ম্যানেজার ডিকে শিবকুমার, NDTV কে মঙ্গলবার জানান, বিদ্রোহী বিধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তিনি, এবং তাঁদের অনেকেই ফিরবেন। তিনি বলেন, “কর্নাটকে ১৯ জন বিধায়ক ‘পুলিশ হেফাজতে' রয়েছেন”।
দিল্লি হিংসা নিয়ে কয়েদিন আগেই বিজেপিকে তোপ দেগেছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, তাঁর এই সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের কাছে বড় ধাক্কা, দলে নেতৃত্বশূন্যতা থেকে শুরু করে নিজের পদ নিয়ে বহুদিন ধরেই অসন্তুষ্ট ছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে, তারা মধ্যপ্রদেশ জয়লাভ করে। হঠাৎ করেই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ঘনিষ্ঠ ১৭ জন বিধায়ক বেঙ্গালুরুতে উড়ে যান সোমবার।
বেশ কয়েকমাস ধরেই কংগ্রেসে কিছুটা একপেশে ছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তাঁর সমর্থকরা জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনও চেষ্টা করেনি গান্ধি পরিবার।
গান্ধি পরিবার ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানান, ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড় থেকে ছিটকে যান তিনি, নির্বাচনে জয়ে তাঁর ভূমিকা থাকলেও, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে মুখ্যমন্ত্রী পদে সমর্থন করেন ২৩ জন বিধায়ক। অগস্টে, ৩৭০ ধারা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানান তিনি।
মঙ্গলবারই ছিল জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বাবা মাধবরাও সিন্ধিয়ার জম্ম বার্ষিকি, ২০০১ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। বিজেপির প্রতিষ্ঠতা সদস্য ছিলেন তাঁর ঠাকুমা বিজযরাজে সিন্ধিয়া, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার পিসি বসুন্ধরা রাজে এবং যশোদারা রাজেও বিজেপিতে রয়েছেন। যশোধারা রাজে বিজেপি বিধায়ক, ভাইপোর বিজেপিতে যোগদানকে “ঘরে ফেরা” বলে মন্তব্য করেছেন।
Post a comment