This Article is From Oct 24, 2019

একা নন, দেবী কালীকা চার বোনকে নিয়ে পূজিতা হন কোথায়?

বাংলার বুকে এই মায়ের রূপ এবং পূজারও ব্যতিক্রম আছে। শোনা যায়, বর্ধমানের মেমারির আমাদপুরের দেবী তাঁর চার বোনকে নিয়ে অধিষ্ঠান করেন।

Advertisement
অফবিট Reported by , Written by

বর্ধমানের আমাদপুরের বড়মা (সৌজন্যে ফেসবুক)

কলকাতা:

কখনও তিনি সোনার বরণ দেবী দুর্গা। কখনও তিনিই ঘোর কৃষ্ণবর্ণ দেবী কালীকা। রক্তবীজ অসুর নিধনে তিনিই ছিন্নমস্তা। মা দুর্গা বাঙালির কাছে কন্যাসম। চারদিনের জন্য সিংহবাহিনী মর্ত্যে আসেন সপরিবারে। দেবী কালীকা (Kali Puja 2019) ভয়াল, ভয়ঙ্কর। স্নিগ্ধ নন, অতি উগ্র। যদিও দেবীর এই রূপ শক্তিদায়িনী। তাই তাঁর আরাধ্য ভক্তরা শাক্ত হিসেবে পরিচিত। দেবীর বাহন শৃগাল। বাস শ্মশানে-মশানে। কিন্তু বাংলার বুকে এই মায়ের রূপ এবং পূজারও ব্যতিক্রম আছে। শোনা যায়, বর্ধমানের (Burdwan) মেমারির আমাদপুরের (Amadpur Village) দেবী তাঁর চার বোনকে (Four Types Of Goddess Kali) নিয়ে অধিষ্ঠান করেন। এই গ্রামে একসঙ্গে চার বোন পূজিতা।



এই চারজন গ্রামবাসীদের কাছে বড়মা, মেজমা, সেজমা, ছোটমা। বর্ধমানের মেমারির আমাদপুরে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই নামে দেবীর পুজো হয়ে আসছে। এই চার বোন ছাড়াও গোটা গ্রামে রয়েছে কমবেশি ২০০টি কালী মূর্তি। ‘সিদ্ধেশ্বরী', ‘বুড়িমা', ‘ডাকাত কালী', ‘ক্ষ্যাপা মা', ‘আনন্দময়ী মা' ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন রূপে তিনি পূজিত। তাই এই গ্রামের আরেক নাম কালী গ্রাম।

রীতি মেনে নিজের বাড়িতে কালীপুজো করলেন মুখ্যমন্ত্রী

শুধু কালী নয়, এখানে ভৈরবের পুজোও হয়। যদিও পুজোপাঠের কবে, কীভাবে শুরু, তার সঠিক ইতিহাস কেউ জানেন না। তবে লোকমুখে শোনা যায়, এই গ্রামে দুর্গা নন, দেবী কালীকাই আসল আরাধ্যা।

বর্ধমানের আমাদপুর এক প্রাচীন জনপথ। কথিত আছে, আগে এখান দিয়েই বয়ে যেত বেহুলা নদী। এখন যদিও তা মজে গিয়ে খালের আকার নিয়েছে। এক সময়ে বাণিজ্য তরী নাকি যাতায়াত করত এখান দিয়ে। সেই সময়ে দস্যুদের কবলে পড়ে বণিকরা সর্বস্ব খোয়াতেন। তখন আমাদপুরে বেহুলা নদীর ধারে ছিল মহাশ্মশান। সেখানে এক সাধু থাকতেন। সেই সাধু শ্মশানে কালীসাধনা করতেন। বণিকরা দস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে এই শ্মশানে কালী মায়ের পুজো দিতেন। শোনা যায়, এরপর থেকেই তাঁরা দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে শুরু করেন। তখন থেকেই এই দেবীর প্রতি বিশ্বাস জন্মায়। মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পরে দিকে দিকে। শুরু হয় বেহুলা নদীর তীরে নানা রূপে কালীর আরাধনা।



গ্রামে ঢুকলে প্রথমেই প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার বড় মা-এর দর্শন পাওয়া যাবে। আরও কিছুটা এগোলেই রয়েছেন প্রায় ১৭ ফুট উচ্চতার মেজ মা। তার আশপাশে রয়েছে সেজ মা ও ছোট মা-এর মন্দির।

Advertisement

সাত দশক ধরে মানবতার আন্তরিক বার্তাটি দিয়ে আসছে বড়িশা শান্তি সংঘের পুজো

পুজোর সময় বড় মা ও মেজো মাকে কয়েকশো ভরিরও বেশি সোনা ও রূপোর গয়না দিয়ে সাজানো হয়। তাই এই দুই পুজোকে ঘিরে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এই দুই পুজোয় ভিড় বেড়ে যাওয়ায় হিমসিম খেতে হয় উদ্যোক্তাদের। এক সময় বড় মা-র মন্দির এলাকায় শব দাহ করা হত। শ্মশানও ছিল। কোনও একজন তান্ত্রিক এই নদী দিয়েই শ্মশানে এসে মায়ের পুজোর প্রতিষ্ঠা করেন। তাই বড় মা শ্মশান কালী হিসেবেই পূজিতা। মায়ের পুজোয় তাই কারণসুধা লাগে। আগে মাটির ঘরে হ্যাজাক জ্বেলে মায়ের পুজো হত। মেজো মায়ের পুজোও হয় তান্ত্রিক মতে। বড় মা ও মেজো মা দুই বোন। এই দুই পুজোকে ঘিরে গ্রামবাসীদের বিশ্বাসের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষের ঢল নামে। দুই বোনকেই ১০০ ভরিরও বেশি সোনা দিয়ে সাজানো হয়। তাই গ্রামজুড়ে থাকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

  .  

পুজোর শেষে প্রতিমাকে কাঁধে তুলে মশাল জ্বেলে রাত জেগে বিসর্জন দেওয়া হয়।

Advertisement
Advertisement