ভারতের দিক থেকে কর্তারপুর করিডরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
নয়াদিল্লি: কর্তারপুর করিডর (Kartarpur corridor) নিয়ে তিনজন খালিস্তানী বিচ্ছিন্নতাবাদীর পোস্টারের ভিডিও, যেখানে লেখা “খালিস্তান ২০২০”, (Khalistan 2020) উদ্বেগ বাড়িয়েছে ভারতের। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং বলেন, কর্তারপুর করিডর চালু হওয়া নিয়ে গোপন উদ্দেশ্য রয়েছে পাকিস্তানের, এবং সেই জন্য “ভারতকে সতর্ক হতে হবে”। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাত থাকার ইঙ্গিত করে, সরকারী সূত্র জানিয়েছে, “প্রকল্পটিকে সরকার যতই এগিয়ে রাখুক, তার থেকে ক্ষমতা বড়”। ভারত দ্বৈত আচরণের সম্পর্কে সচেতন রয়েছে, তবে তীর্থযাত্রীদের কথা মনে রেখে এগিয়েছে গিয়েছে। শুক্রবার ভারতের দিক থেকে কর্তারপুর করিডরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সোমবার পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত চার মিনিটের ভিডিও ক্লিপে, দেখানো হয়েছে, শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ভিন্দ্রাওয়ালে, শাবেগ সিং এবং অমৃক সিং খালসার ছবি দেওয়া পোস্টার নিয়ে পাকিস্তানের একটি গুরুদুয়ারায় যাচ্ছেন শিখ তীর্থযাত্রীরা। ১৯৮৪-এর জুনে অমৃতসরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপারেশন ব্লুস্টারে খতম করা হয় এই তিন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে।
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, “প্রকাশ্যে তারা (পাকিস্তান)শান্তি, মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ এবং সংখ্যালঘুদের কথা বলে, তবে পাকিস্তান যা চায়, তা হল, খালিস্তান ইস্যুকে বড় করতে এবং ২০-২০ গণভোট করাতে”।
পাকিস্তানের গেমপ্ল্যান নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং
কর্তারপুর সাহিব গুরুদুয়ারায় যাওয়ার জন্য শিখ তীর্থযাত্রীদের কোনও পাসপোর্ট লাগবে না বলে ঘোষণা করেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, সেই প্রসঙ্গ তুলে সূত্র জানিয়েছে, শিখ ও হিন্দু তীর্থযাত্রীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে, যাতে তাদের খালিস্তানের উদ্দেশ্য সফল হয়।
ভারতে থাকা সূত্র জানিয়েছে, “ভাল উদ্দ্যেশে” করিডর নিয়ে উদ্যোগ নিয়েছে ভারত, পাকিস্তানের পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তা ছিল। “তবে আমরা বড় লক্ষ্যে দেখছি-যে সমস্ত তীর্থযাত্রীরা যেতে চান”
সরকারী সূ্ত্র জানিয়েছে, “সীমান্ত বরাবর গুরুদুয়ারগুলিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সক্রিয়তার খবর রয়েছে”। পাকিস্তানের সঙ্গে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তির মধ্যে একটি বিষয় রয়েছে, যে কোনও জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে, করিডর সাময়িক বন্ধ রাখা হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, “এই ধরণের জায়গা খুব ভালভাবে লক্ষ্য করা উচিত”।
বুধবার পাকিস্তানের ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে, পাকিস্তানের গেমপ্ল্যান নিয়ে সতর্ক করে দেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং।সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “প্রথমদিন থেকেই, পাকিস্তানের গোপন উদ্দেশ্য নিয়ে আমি বলে আসছি”। তাঁর কথায়, “একদিকে, তারা ভালবাসা দেখায়...আবার অন্যদিকে, তারা সমস্যা তৈরি করতে চায়। আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে”।
এর আগে অমরিন্দনর সিং সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, রাজ্যে “শিখ জঙ্গিপনা পুনরুদ্ধার” করতে কর্তারপুর করিডরকে কাজে লাগাবে ইসলামাবাদ।
গত বছর, পাকিস্তান জানায়, ভারত থেকে তীর্থযাত্রীদের জন্য কর্তারপুর গুরুদুয়ারা দরবার সাহিব খুলবে তারা। নিয়ন্ত্রণরেখায় জঙ্গিদের লঞ্জপ্যাডে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর, ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের জন্য এই তীর্থক্ষেত্রটি বন্ধ হয়ে যায়। এও সিদ্ধান্ত হয় যে, গুরুদুয়ারা দরবার সাহিব এবং পঞ্জাবের গুরুদাসপুরের ডেরা বাবা নানকের মধ্যে প্রস্তাবিত করিডর তৈরি হবে।
কর্তারপুর গুরুদুয়ারায় ১৮ বছরেরও বেশী সময় কাটিয়েছিলেন শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরুনানক দেব। গত নভেম্বরে, পঞ্জাবের গুরুদাসপুরে কর্তারপুর করিডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন উপরাষ্ট্রপতি এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু।
সূত্র জানিয়েছে, “যেতে ইচ্ছুক ৫৫০ জন তীর্থযাত্রীর নামের তালিকা আমরা পাকিস্তানকে দিয়েছি”। ওই তালিকায় রয়েছেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ পুরী, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং এর মতো ভিআইপি এবং অন্যান্য সাংসদ ও বিধায়করা।
অমরিন্দর সিং বলেন, কর্তারপুর করিডর চালু হওয়া নিয়ে হাই অ্যালার্ট জারি রয়েছে পঞ্জাবে। তিনি বলেন, “আমি মনে করি না, করিডরের মধ্যে দিয়ে কোনও ভুল কাজ করার সাহস পাবে পাকিস্তান, তবে এটা পঞ্জাবের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, যে সীমান্তের রাজ্য হিসেবে সতর্ক থাকা”।