শ্রীনগরে একটি দোকানে বিয়ের পোশাক দেখাচ্ছেন এক বিক্রেতা (এএফপি ফাইল)
শ্রীনগর: বিয়ের মরশুম শুরু হতে চলেছে ভূস্বর্গে। কিন্তু এক বছর ধরে পরিকল্পনা করেও শেষমেশ বিয়েতে জাঁকজমক করতে গিয়ে আটকাচ্ছেন কাশ্মীরি কনেরা। বিয়েতে (Kashmiri Wedding) অতিথি অভ্যাগতদের সুরক্ষার জন্য আশঙ্কা করছেন সকলেই কারণ জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) বেশ কিছু জায়গায় এখনও সুরক্ষা ও যোগাযোগের নিষেধাজ্ঞাগুলি জারি রয়েছে। কাশ্মীরি কন্যা আরশি নিশার তাঁর বিয়েতে মূলত তিন দিনের পরিকল্পনা করেছিলেন, যার মধ্যে ছিল একটি বিশেষ মেকআপ সেশন, সঙ্গীত এবং বিশাল খাওয়া দাওয়া। এই বিয়েতে ওয়াজওয়ান (wazwan) নামে পরিচিত কাশ্মীরি ঐতিহ্যবাহী খানাপিনায় ৭০০ জনেরও বেশি অতিথি আমন্ত্রিত ছিল। তবে রাজ্যের হাজার হাজার পরিবারের মতোই, নিশার ৪০ জন অতিথি নিয়ে কোনও রকমে বিয়ে সারছেন তাঁর। ২৯ বছর বয়সী আরশি এএফপিকে বলেন, “আমি ধুমধাম করে বড় বিয়ের স্বপ্ন দেখেই বড় হয়েছি কিন্তু এই পরিস্থিতিতে উদযাপন করার মতো খুব বেশি কিছু নেই। এখন আমরা খুব সাধারণ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি তবে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি এবং আমার পরিবার কীভাবে এখানে আসবে বা ঘুরে বেড়াবে তা নিয়ে আমি এখনও উদ্বিগ্ন।"
"শুধুমাত্র জঙ্গিদের জন্যে তো আর নেট বন্ধ করা যায় না": সাফাই এস জয়শঙ্করের
জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) বিশেষ মর্যাদাকে বাতিল করা এবং ফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগের উপর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের কয়েক লক্ষ মানুষ বহির্বিশ্ব থেকে আংশিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। কর্তৃপক্ষ কাশ্মীর উপত্যকার কিছু অংশে সুরক্ষা নিষেধাজ্ঞাগুলি শিথিল করেছে। তবু বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় রাস্তায় ইস্পাত ব্যারিকেড এবং কাঁটাতারের জাল মানুষকে বাড়িতেই থাকতে বাধ্য করছে এখনও। এই চাপের মধ্যে পড়ে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে সংবাদপত্র এবং টেলিভিশনে শত শত নোটিশ প্রকাশিত হয়েছে, যাতে কন্যা বা পাত্রপক্ষ তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান (Kashmiri Wedding) স্থগিত বা বাতিল করে দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বিলাল বলেন, “পরিবারগুলি বিয়ের উৎসবের জন্য বছরের পর বছর ধরে টাকা জমায়।” তাই যখন এই মাসেই আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে কেবল ১৫ শতাংশ তাঁর ভাইয়ের বিয়েতে এসে উপস্থিত হন, “আমাদের পরিবারের জন্য এটা খুবই মনখারাপের বিষয় ছিল,” জানান তিনি। বিবাহের প্রস্তুতির জন্য জিনিসপত্র সরবরাহকারী এবং ইভেন্ট ম্যানেজারদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল অনেকের কাছে।
"রাস্তায় লাশ পড়ে নেই মানেই সব ঠিক আছে তা নয়!": কাশ্মীরের শান্তি বিষয়ে শ্রীনগরের মেয়র
বোন তেহমিনার বিয়ের আগে মুনতাজির বিয়ের বিছানা থেকে গহনা এবং পোশাক পর্যন্ত সমস্ত কিছুই ঠিকঠাক জোগাড়ের জন্য লড়ে যাচ্ছেন। ৪১ বছর বয়সী মুনতাজির এএফপিকে বলেন, “আমি একটি বিছানার অর্ডার দিয়েছিলাম এবং দর্জিদের সেলাইয়ের জন্য কাপড় দিয়েছিলাম। দু'টি দোকানই বন্ধ রয়েছে এবং তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনও উপায় নেই।” এমনকি রাঁধুনি এবং মাংস বিক্রেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন বন্ধ। বাড়ির সঙ্গে বহু লড়াই করেই তারপর পাঁচ বছরের প্রেমিকের সঙ্গে এই সেপ্টেম্বরে বিয়ে করার কথা ছিল আরশির। “আমাদের সম্পর্ক নিয়ে আমাদের পরিবারকে বোঝাতে বেশ সমস্যা হয়েছিল এবং অবশেষে খুশির দিন এসেওছিল, তবে কাশ্মীরে আপনার কোনও স্বপ্নের জায়গা নেই।”