জলমগ্ন মন্দির ও হাসপাতাল আটকা পড়ে রয়েছেন, অনেকে আবার অর্ধেক ডুবে যাওয়া বাড়িতেও আটকা পড়ে আছেন মানুষ
তিরুবনন্তপুরম: ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা ও ভূমিধ্বসের কারণে কেরালায় এখনও পর্যন্ত 324 জন প্রাণ হারিয়েছেন, তিন লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণশিবিরে। রাজধানী তিরুবনন্তপুরম থেকে 120 কিলোমিটার উত্তরে চেনগান্নুর শহরের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। আশঙ্কা, সেখানে অনেকের মৃত্যু হয়েছে বন্যায়।
সৈন্য এবং নৌকা শহরে পাঠানো হয়েছে এবং রিপোর্টে বলা হয়েছে যে মৃতদেহও উদ্ধার হয়েছে, যদিও মৃতের সংখ্যা নিয়ে সরকারি তথ্য মেলেনি কোনও।
চেনগান্নুরের সাংসদ সাজি চেরিয়ান জানান, শহরের ভেতর অন্তত 50 জন মানুষ মারা গেছেন। বলতে বলতেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন, সংবাদ মাধ্যমের সামনে ভয়ে আর আতঙ্কে তিনি বারবার অনুরোধ করতে থাকেন হেলিকপ্টার পাঠিয়ে তাঁদের উদ্ধার করার জন্য।
তিনি বলেন, "পরিস্থিতি এখানে খুবই ভয়ানক! দয়া করে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বলুন কিছু হেলিকপ্টার পাঠিয়ে আমাদের সাহায্য করতে। যদি তা না হয় তবে অনেক মানুষ মারা যাবেন ... আমাদের জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে হেলিকপ্টারে করে তুলে নেওয়া। আমাদের সাহায্য করুন, একমাত্র আকাশপথে আমাদের তুলে নিয়ে গেলেই বাঁচানো সম্ভব।"
"আমরা এখানে দরিদ্র জেলেদের কাছ থেকে নৌকা ধার নিয়েছি। আমাদের কাছে যথেষ্ট নৌকাও নেই। জলের স্রোত আরও তীব্র হচ্ছে। অনেক মানুষ ইতিমধ্যেই তাদের জীবন হারিয়েছেন। এখানে আমাদের বাঁচার জন্য কোন উপায় নেই।"- তিনি বলেন। চেরিয়ান আরও জানান যে শহরে বসবাসকারী লোকজন এখনও অব্দি এক প্যাকেট খাবারও পাননি। কেরালার 14 টি জেলায় 11 টিতেই জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা।
প্রায় 33 মিলিয়ন জনসংখ্যার রাজ্য কেরালার বন্যায় আটকে পড়া মানুষের মধ্যেও দ্রুত ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া মারফত খবর পাঠাচ্ছেন যে উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে কোনওভাবেই যোগাযোগ করে উঠতে পারছেন না তাঁরা। অনেকেই জানিয়েছেন যে তারা জলমগ্ন মন্দির ও হাসপাতাল আটকা পড়ে রয়েছেন, অনেকে আবার অর্ধেক ডুবে যাওয়া বাড়িতেও আটকা পড়ে আছেন।
সেনাবাহিনী, এয়ার ফোর্স, নৌবাহিনী এবং রাজ্য দুর্যোগ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৈন্যরা নিরবিচ্ছিন্ন উদ্ধার ও ত্রাণকাজে লেগে রয়েছেন। এই শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ বন্যার মুখে পড়তে হয়েছে ‘ঈশ্বরের নিজের দেশ’ কেরলকে। 38 টি হেলিকপ্টার, 400 টি নৌকার মাধ্যমে বন্যা কবলিতদের কাছে খাবার ও পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
জলমাত্রা বিপদসীমা পার করায় কেরলায় বিভিন্ন বাঁধ এবং জলাধারের দরজাগুলি খুলে দিতে হয়েছে। তাতে বহু গ্রামই তলিয়ে গিয়েছে বিধ্বংসী জলের তলায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ কেরালায় বন্যাদূর্গত অঞ্চলের অবস্থা হেলিকপ্টার থেকে ঘুরে দেখেন। সেই সময়েই পরিস্থিতি বিচার করে 500 কোটি টাকার ত্রাণ ঘোষণা করেন প্রধানমমন্ত্রী।