দেশের মধ্যে এই প্রথমবার, নদীর নীচ দিয়ে সূড়ঙ্গ খোঁড়া হচ্ছে
কলকাতা: বৌবাজার এলাকায় মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ চলার ফলে এলাকায় বেশ কিছু বাড়ি ভেঙে পড়েছে, এবং কিছু বাড়িতে চওড়া ফাটল ধরেছে, এলাকা থেকে দ্রুত সরিয়ে ফেলা হয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের, জায়গাটিকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর হঠাৎ নেমে আসা বিপর্যয়ের ফলে, বাড়ির সমস্ত জরুরি সামগ্রি ফেলেই বসতবাড়ি ছাড়তে হয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের। আধারকার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবই এর মত প্রয়োজনীয় নথিও যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বেলজিয়ামের কাঁচ থেকে শুরু করে মেহগনি কাঠের আসবাবপত্রও। সুড়ঙ্গ খোঁড়ার ফলে দুর্গা পিটুরি লেন এবং স্যাকড়াপাড়া লেনের অনেক বাড়িই ভেঙে পড়েছে বা ফাটল চওড়া হয়েছে। বৌবাজার এলাকাটি মধ্য কলকাতার অন্যতম ব্যস্ততম জায়গা, শহরের গয়না প্রস্তুতকারক দোকানগুলি রয়েছে এখানে।
মেট্রো কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী
এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে, এলাকার বেশ কিছু বাড়ির কোনও ক্ষতি না এখনও পর্যন্ত না হলেও, সেগুলিকে বিপজ্জ্নক ঘোষণা করা হয়েছে। এলাকার বাসিন্দা মালা দত্ত বলেন, “আমি গতবছর আমার স্বামীকে হারিয়েছি, যখন আমি পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠছি, সেই সময় এই বিপদ হল। আমাদের বাড়ির ক্ষতি হয়নি, তবে মেট্রো কর্তৃপক্ষ বাড়িটিকে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করেছে এবং আমাদের বাড়ি খালি করতে বলা হয়েছে”। ঘরছাড়াদের জন্য কলেজে তৈরি করা আশ্রয়স্থলে মাথা গোঁজা মালা দত্ত সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বলেন, “আগামী বছরে দুই মেয়ের মধ্যে একজন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। ফলে আপনি আমার অবস্থা বুঝতে পারছেন”।
২০২২-এর মধ্যে সব মেট্রো রেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হবেই: রাজ্য সরকারকে আশ্বাস মেট্রো কর্তৃপক্ষের
ঘরছাড়াদের মধ্যে বেশীরভাগ জনকেই একটি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেছে মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড। অনেকে আত্মীয়বাড়িতে রয়েছেন। প্রায় ৫০টি বাড়ির লোকজনদের বাড়ি খালি করে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের ভাগ্যবান কয়েকজন মাত্র পুলিশ সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে বাঙা বাড়ির ধংস্তুপে চাপা পড়া নথি বা মূল্যবান সামগ্রি খোঁজার সুযোগ পেয়েছেন। কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার একে নন্দী বলেন, “পরিস্থিতির ওপর বিচার করে, আরও ১০টি বাড়ি খালি করতে হবে”।
ভূমির দৃঢ়তার শংসাপত্র না পাওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ভাঙা যাবে না, জানালেন মেয়র
দুর্গা পিটুরি লেনের বাসিন্দা অরূপ বড়াল জনান, ১ সেপ্টেম্বর, একপ্রকার জোর করেই পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ তাঁকে বাড়ি খালি করতে বলা হয়। তিনি বলেন, “মেহগনি কাঠের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে, বেলজিয়াম কাঁচের ড্রেসিং টেবিলের মতো মূল্যবান সরঞ্জাম আমাদের ফেলে আসতে হয়েছে, ১৫ মিনিটের মধ্যে আমাদের বাড়ি খালি করতে বলা হয়েছিল”।
বড়াল পরিবারের তিনতলা বাড়ি হেলে রয়েছে, যে কোনো মানুষের সেখানে ঢোকা কার্যত
অসম্ভব। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাস করতেন, গয়নার কারিগরদের অনেকেই, তাঁদের অনকেই জানিয়েছেন, গয়না তৈরির জন্য গ্রাহকদের দেওয়া সোনা, ফেলে রেখেই বাড়ি খালি করত হয়েছে তাঁদের।
মেট্রোর সুড়ঙ্গের কাজের জন্য ঘরছাড়া শতাধিক মানুষ
এলাকার একটি হোটেলে এখন রয়েছেন পূর্ণিমা বড়াল, স্বামী এবং তাঁর সন্তান। তিনি বলেন, “হোটেলে আমি বেশীদিন থাকতে চাই না। আমার পছন্দমতো আমি বাড়িতে থাকতে চাই”। কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশনের তরফে জানানো হয়েছে, হোটেলে যদি বেশীদিন থাকার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে আবাসিকদের ভাড়ার ফ্ল্যাট দেওয়া হবে।
দুর্গাপিটুরী লেনের বাসিন্দা সুদীপ্ত শীলের অবশ্য, থাকার বন্দোবস্ত নিয়ে কোনও আপত্তি নেই, তবে তিনি “সমস্যার দ্রুত সমাধান” চান।
সেদিনে ঘটনার পর, হাওড়া-সল্টলেক সেক্টর ফাইভের মধ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো লাইনের সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। দেশের মধ্যে এই প্রথমবার, নদীর নীচ দিয়ে সূড়ঙ্গ খোঁড়া হচ্ছে।
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদনা করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে।)