সোমবার রাতে কলকাতার মডেল-অভিনেত্রী ঊষশী সেনগুপ্ত, (Ushoshi Sengupta) তাঁর বন্ধু ও এক উবের (Uber) চালককে তাড়া করা ও হেনস্তা করার অভিযোগে সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১০ সালে মিস ইন্ডিয়া (Miss India) উষশী ঘটনার বিবরণ লিখে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর মোবাইল ফোনে তোলা একটি ভিডিও-ও শেয়ার করেছেন তিনি। ৩০ বছরের ঊষশী জানিয়েছেন, একটি পাঁচতারা হোটেল থেকে এক বন্ধুর সঙ্গে ফেরার পথে তিনি উবেরে উঠেছিলেন। এরপরই ওই ক্যাবের সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়া কয়েকজন যুবকের গণ্ডগোল শুরু হয় মধ্য কলকাতায় এলগিনের কাছে। তিনি জানিয়েছেন, ওই দলটি তাঁদের উবের ক্যাবটিকে দাঁড় করিয়ে চালককে টেনে বের করে নিগ্রহ করতে থাকে। তখন রাত ১১.৪০ বাজে।
কলকাতায় উবের চালককে পেটানোর ভিডিও করতেই দুষ্কৃতীদের হাতে নিগৃহীত মিস ইন্ডিয়া ঊষসী
তাঁর পোস্টে ঊষশী জানান, তিনি এরপর চিৎকার করে ওঠেন ও পুলিশে ফোন করেন। সেই সঙ্গে পুরো ঘটনাটির ভিডিও করতে থাকেন তিনি। কিন্তু তাঁর অভিযোগ পুলিশ কর্মী তাঁকে অন্য থানায় যেতে বলেন। তাঁর দাবি ছিল এটা তাঁর এলাকার মধ্যে পড়ে না।
NDTV-কে ঊষশী জানিয়েছেন, ‘‘আমার উবের চালককে মারা হচ্ছিল, আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম ওঁর জন্য। আমি ভিডিও করতে শুরু করি ও ওই যুবকদের থেকে জানতে চাই ওরা কেন হেলমেট পরেনি বা দু'তিনজন মিলে বাইকে উঠেছে, একজন এসে আমাকে ভিডিও করা থেকে আটকাতে চাইছিল।''
ঊষশীর রেকর্ড করা ১৭ সেকেন্ডের ক্লিপে দেখা যাচ্চে তিন যুবককে হেলমেট কোথায় জানতে চাওয়ায় তারা এসে গাড়িতে ধাক্কা দিচ্ছে।
ঊষশী তাঁর পোস্টে দাবি করেন, ময়দান এলাকার পুলিশ স্টেশনের আধিকারিকরা সাহায্যের জন্য আসতে চাননি, বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও। ময়দান থানা ঘটনাস্থল থেকে ৫০ মিটারের মধ্যে। তিনি বলেন, তাঁকে বলা হয় তিনি যেখানে রয়েছেন সেটা অন্য থানা এলাকার মধ্যে পড়ে। ফেসবুকে ঊষশী লেখেন, ‘‘আমি ভেঙে পড়ে মিনতি করতে থাকি আমার সঙ্গে আসতে। না হলে ওই ছেলেগুলো চালককে মেরেই ফেলবে।''
শেষ পর্যন্ত পুলিশ কর্মী ওখানে পৌঁছলে ছেলেগুলি আধিকারিককে ধাক্কা মেরে ওখান থেকে পালিয়ে যায় বলে ঊষশীর পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে।
কিন্তু ঘটনার সেখানেই শেষ নয়। ছ'জন এরপরেও ঊষশী ও তাঁর বন্ধুর পিছু নেয় ও গাড়িতে পাথর ছুড়তে থাকে। এবং তাঁকে গাড়ি থেকে টেনে বের করতে চায়। ঊষশীর দাবি, তাঁর ফোনও ভেঙে ফেলতে চায় তারা। মুছে দিতে চায় ভিডিওটি। স্থানীয় জনতা ছুটে এলে তবে তারা ওখান থেকে পালিয়ে যায়।
‘‘যেখানে ঘটনাটা ঘটেছে সেখান দিয়ে আমার বাবা, বোন ও বন্ধুরা যাতায়াত করে। এটা যে কারও সঙ্গে হতে পারে। যখন আমার চালককে মারা হচ্ছিল, আমাকে ওর পাশে দাঁড়াতেই হত।'' NDTV-কে বলেন ঊষশী।
উষশী বলেন, দ্বিতীয় বারের টানা হ্যাঁচড়ার ঘটনা যেখানে ঘটে, তার কাছেই চারু মার্কেট থানা। কিন্তু থানা কোনও অভিযোগ নিতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত ভবানীপুর থানা অভিযোগ জমা নেয়। ঊষশী ফেসবুকে লেখেন, ‘‘অনেক প্রশ্ন করার পরে ওই আধিকারিক আমার অভিযোগ জমা নিলেন বটে। কিন্তু উবের চালকের অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেন। তাঁর বক্তব্য, একই ঘটনায় দু'টো অভিযোগ নেওয়া যায় না।''
পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতার পুলিশ প্রধানের নির্দেশে তারা চালকের অভিযোগ না নেওয়ার ব্যাপারে খোঁজখবর করছে।
এক সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘‘যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা স্থানীয়। অনেক বারই তারা ট্র্যাফিক আইন ভেঙেছে। আমরা আশাবাদী সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ওই এলাকা থেকে বাকিদেরও আটক করতে পারব।''