একটি ভয়াবহ ও রোমখাড়া করে দেওয়ার মতো ঘটনার সমস্ত উপাদানই মজিত ছিল। কিন্তু, শেষপর্যন্ত দেখা গেল, তা আদতে একটি প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়।
রবিবার হরিদেবপুরের একটি ফাঁকা জমিতে চোদ্দটি ফাঁপা প্লাস্টিকের ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। প্রথমে ভাবা হয়েছিল ওই প্যাকেটগুলির ভিতরে সদ্যজাতের দেহ রয়েছে। তা জানাজানি হতেই ঘটনাস্থলে দৌড়ে যান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সহ কলকাতার পুলিশ কমিশনার ও গোয়েন্দাপ্রধান।
এর আগেই তিলোত্তমা সাক্ষী থেকেছিল এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের। হাওড়া থেকে উদ্ধার করা হয় এক ব্যাঙ্ক কর্মচারীর মুণ্ডহীন, হাত-পা কাটা বস্তাবন্দি দেহ। তাঁর হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
হরিদেবপুরের ঘটনায় শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দৌড়ে গিয়েছিলেন রাজীব কুমার এবং দক্ষিণ পশ্চিম ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার নীলাঞ্জন বিশ্বাস। তাঁদের সঙ্গে ছিল অজস্র পুলিশকর্মীও।
তারপরই আয়োজিত হয় একটি সাংবাদিক সম্মেলন। জানানো হয়, ভ্রূণগুলি (সদ্যজাতের দেহ ততক্ষণে ভ্রূণ হয়ে গিয়েছে)-কে রাজ্যের একটি প্রধান সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হবে ময়নাতদন্তের জন্য। এবং, এই ঘটনার তদন্ত শুরু করা হবে। পুলিশ কর্তা বলেন, ময়নাতদন্ত থেকেই ভ্রূণের বয়স এবং সে জন্মের আগেই মারা গিয়েছে না পরে, খতিয়ে দেখা হবে তাও।
সিবিআইকে খবর দেওয়া হোক! কয়েকজন স্থানীয় মানুষ বলল। অন্যদিকের কয়েকজন বলল, না। সিবিআইয়ের থেকেও ভালো হবে এনআইএ’কে খবর দেওয়া হলে। ফিসফাস ও কানাঘুষোর মধ্যে যে ভাবনাটি সবথেকে বেশি প্রাধান্য পেল, তা হল এই যে- কোনও অবিবাহিত মহিলা কোনও বেআইনি ক্লিনিকে গিয়ে গর্ভপাত করিয়েছেন। যার ফল এই প্যাকেটবন্দি অবস্থায় ছড়িয়ে রয়েছে খোলা জমিতে। সমাজটা উচ্ছন্নে গিয়েছে, বলল কেউ কেউ। তুলোধনা করা হল চিকিৎসকদেরও। এমনকি, রাজ্যের একটি রাজনৈতিক দল তাদের কর্মীদের ওই অঞ্চলে পাঠিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে, এই মর্মে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিল।
আর ঠিক সেইসময়ই হল ‘উলটপূরাণ’।
জানা গেল, ওই প্যাকেটে কোনও সদ্যজাতের দেহ নেই। নেই কোনও ভ্রূণও। এমনকি, মানবদেহের কোনও অংশই নেই তাতে। আছে কেবল শুকনো বরফে গুছিয়ে রাখা ব্যান্ডেজ, গজ-কাপড় সহ চিকিৎসার বিভিন্ন বর্জ্য। জানাল এক সাংবাদিক।
পুলিশ যদিও আমতা আমতা করে অস্বীকার করল এই দাবি। নীলাঞ্জন বিশ্বাস বললেন, “হয়তো চিকিৎসার বর্জ্যই রয়েছে, তবু আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি”।
বাংলায় ঘটনায় কোনও কমতি নেই। সবসময়ই কিছু না কিছু ঘটছেই।
বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে ছাত্রদের বিক্ষোভ। আন্দোলন।
প্রতিদিন স্থানীয় খবরের চ্যানেলগুলিতে অদ্ভুত সব খবরের ছড়াছড়ি। স্বামী মেরে ফেলছে স্ত্রী’কে। স্ত্রী আর তার প্রেমিক মিলে মেরে ফেলছে স্বামীকে। কলকাতার ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে নাবালিকার দেহ। স্মার্টফোন কিনে দিতে অস্বীকার করায় আত্মহত্যা করছে কিশোর। তারপর রয়েছে মোমো চ্যালেঞ্জ!
আর, রাজনৈতিক হিংসা তো রয়েছেই।
এর মধ্যেই প্লাস্টিকের প্যাকেটে প্রথমে পাওয়া গেল সদ্যজাতের দেহ। তারপর জানা গেল, ওগুলি সবই ছিল ভ্রূণ। এখন জানা যাচ্ছে, ওসব কিছুই নয়, আসলে তা ছিল চিকিৎসার বর্জ্য মাত্র!
উপভোগ্যই বটে!