বড় টায়ার নিয়ে অনুশীলনের মাঝেই স্বপ্ন বোনে আলি ও লাভলি।
কলকাতা: সোশ্যাল মিডিয়ার (Social Media) দৌলতে কে যে কখন কেমন করে ‘ভাইরাল' (Viral) হয়ে যায় তা বোঝা দুষ্কর। যেমন ১১ বছরের লাভলি ও ১২ বছরের আলি। কলকাতার বন্দর এলাকার বাসিন্দা এই দু'জন একটি ভিডিওর সুবাদে এখন রীতিমতো বিখ্যাত। তাদের ভিডিও পছন্দ হয়েছে নেটিজেনদের। সেই ভিডিওয় তাদের (Kolkata Gymnasts) জিমন্যাস্টিক দেখে তাক লেগে যায়। সমারসল্ট, কার্টহুইল ও সাইড ফ্লিপ দেখে সত্যিই অবাক লাগে। দু'জনেই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বাসিন্দা। প্রাতঃরাশ কী দিয়ে করো? এই প্রশ্নের উত্তরে আলি জানিয়ে দেয় চা-বিস্কুট। লাভলির মা আবার জানাচ্ছেন, এক সপ্তাহে দু'বার হাফ লিটার দুধের বন্দোবস্ত করতে পারেন তিন মেয়ের জন্য। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কী করে ওকে সাহায্য করব ওর স্বপ্নপূরণে?''
Viral Video: একটা স্কুলের মেয়ে এমন কাজ করতে পারে! নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না
এই স্বপ্নের শুরু চার বছর আগে। এক স্থানীয় তরুণী তাঁর নাচের স্কুলের জন্য নতুন প্রতিভা খুঁজছেন। ২৬ বছরের শিখা রাও একজন নর্তকি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি মন দেন শিশুদের নাচ ও জিমন্যাস্টিক শেখানোয়। তাও বিনামূল্যে।
পা ভেঙেছে ১১ মাসের একরত্তির, ডাক্তার প্লাস্টার করলেন পুতুলের পায়ে!
তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘বাচ্চাদের মধ্যে অনেক প্রতিভা থাকে। আমি সেই প্রতিভাকে পরিস্ফূট করতে সাহায্য করি যতটা আমি জানি তার সাহায্যে। লাভলি ও আলি দু'জনেই দারুণ প্রতিভাবান। আমি ওদের বেশি কিছু করতে পারিনি। আশা করব এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে কেউ নিশ্চয়ই এগিয়ে আসবে ওদের সাহায্যার্থে। সরকার কিংবা নাদিয়া কোমেনেচি।''
এই নাচের ক্লাস একটি ক্লাবের একমাত্র ঘরে হয়। মেঝে শক্ত সিমেন্টের। কোনও স্যান্ড বক্স বা ম্যাট্রেস নেই। কেবল মাত্র টায়ার রয়েছে একাধিক। তাই দিয়েই অনুশীলন। বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার আগে ওই টায়ারে চড়ে খেলা করে।
দু'জনেরই বাস দরিদ্র পরিবারে। লাভলির মা রেশমি একটি দরজির দোকান চালান। তার বাবা তাজ খান ড্রাইভার। রোজগার ১৪,০০০ টাকা। তাই দিয়েই ৫ জনের পরিবারের দিন গুজরান।
আলির বাবা-মা চা পাতার গুদামে দৈনিক মজুরির হিসেবে কাজ করেন। রোজগার সব মিলিয়ে লাভলির বাবা-মা'র মতোই। তাঁদের পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৬।
দুই পরিবারই বাস করে বস্তির টিনের ঘরে। রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার কেনার ক্ষমতাও তাদের নেই। আলির মা জানাচ্ছেন, ‘‘একেবারে দিন আনি দিন খাই পরিস্থিতি। হরলিক্স, দুধ বা কোনও স্বাস্থ্যকর খাবার আলিকে দিতে পারি না। কেবল ভাত, ডাল আর সবজি। কখনও সখনও ডিম।''
আলি জিমন্যাস্টিককে যেমন ভালবাসে তেমনই ভালবাসে তার শিক্ষককে। সে জানাচ্ছে, ‘‘আমি স্যারের মতো জিমন্যাস্টিক করতে চাই। দেশের জন্য সোনার পদক পেতে ও অন্য বাচ্চাদের শেখাতে চাই।''
লাভলির স্বপ্নও বিরাট। ‘‘আমিও দেশের জন্য পদক আনতে চাই। আমার বাবা-মা আমাকে সব সময় সাহায্য করে। আমার বাবা বলেন, তুমি কেবল আমার মেয়ে নয়, ছেলেও। নিজের স্বপ্নকে নিয়ে বাঁচো।''য
আলি ও লাভলি জানাচ্ছে নাদিয়া কোমেনচির মতো কিংবদন্তি তাঁদের নিয়ে টুইট করার আগে থেকেই তারা তাঁকে চিনত। এখন যেমন তারা চেনে মন্ত্রী কিরেন রিজিজুকে।