অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে (Visakhapatnam) এখন শুধুই হাহাকারের শব্দ, হাসপাতালে হাসপাতালে অসুস্থদের নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বজনের ভিড়। না, এই হাহাকার করোনা ভাইরাসের কারণে নয়, এই হাহাকার বিষাক্ত গ্যাসের (Visakhapatnam Gas Leak) জেরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষদের। বৃহস্পতিবার হঠাৎই অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের একটি কেমিক্যাল প্ল্যান্ট থেকে বিষাক্ত গ্যাস (LG Polymers gas leak) নির্গত হয়, এখনও পর্যন্ত ওই বিষাক্ত গ্যাস প্রাণ কেড়েছে এক শিশু সহ কমপক্ষে ৯ জনের। হাসপাতালে হাসপাতালে বাড়ছে গ্যাসের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষজনের ভিড়। যাঁরাই ওই বিষাক্ত গ্যাস শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে নিয়েছেন তাঁদের প্রবল শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। সঙ্গে চোখে তীব্র জ্বালা, গা-হাত-পা অসম্ভব চুলকোচ্ছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা অসুস্থদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আয়ত্তে আসছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্থাটি (LG Polymers India)।
কেমিক্যাল প্ল্যান্ট থেকে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়ে মৃত কমপক্ষে ৮ জন, অসুস্থ বহু
১৯৬১ সালে হিন্দুস্তান পলিমার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটিকে ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি কেম অধিগ্রহণ করে। তারপরেই এই সংস্থাটির নতুন নাম হয় এলজি পলিমারস ইন্ডিয়া। এই প্লান্টটি মূলত পলিসট্রিন তৈরি করে, যা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্লাস্টিকের খেলনা এবং অন্যান্য প্লাস্টিকের জিনিস তৈরি করা হয়।
"প্রত্যেকের সুরক্ষার জন্যে প্রার্থনা করছি": গ্যাস লিকের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর টুইট
বিশাখাপত্তনমের ওই প্ল্যান্টের মালিক এলজি চেম বলেন, “গ্যাস লিকের ফলে যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারা বিষাক্ত গ্যাসের কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তাঁদের জন্যে দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে"। আমরা কীভাবে ওই গ্যাস লিক হল এবং এর জেরে কতজনের মৃত্যু হয়েছে বা কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছি।"
"লকডাউন হওয়ার কারণে সেখানে একসঙ্গে প্রচুর গ্যাস মজুত ছিল। এর থেকেই একটি রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং ট্যাঙ্কগুলির মধ্যে প্রচণ্ড উত্তাপ সৃষ্টি হয়। মনে করা হচ্ছে সেই কারণেই গ্যাস লিক হয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়", বিশাখাপত্তনামের সহকারী পুলিশ কমিশনার স্বরূপ রানি জানান একথা।
১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে ভোপালের একটি প্ল্যান্ট থেকে এভাবেই বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই ঘটনায় আশেপাশের অঞ্চলের প্রায় ৩,৫০০ লোক মারা গিয়েছিল এবং পরবর্তী কয়েক বছরেও আরও বহু মানুষ মারা যান। সেখানকার মানুষজন এখনও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ভোগ করে চলেছেন।
সরকারী পরিসংখ্যান বলছে যে ইউনিয়ন কার্বাইড প্লান্টের কাছাকাছি বাস করা কমপক্ষে এক লক্ষ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগেছেন।
আর যাঁরা বেঁচে যান তাঁরাও শ্বাসকষ্ট এবং কিডনির সমস্যা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, মানসিক অসুস্থতা এবং ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।