বুধবার রাজ্যসভায় পাস হয়ে গিয়েছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল।
নয়াদিল্লি: নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলের (Citizenship Bill) প্রতিবাদে উত্তাল উত্তর-পূর্বাঞ্চল (north-East)। প্রতিবাদের কেন্দ্রস্থল গুয়াহাটি (Guwahati)। সেখানে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কার্ফু জারি করা হয়েছে। বুধবার রাজ্যসভায় পাস হয়ে গিয়েছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল। বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ১২৫টি। বিপক্ষে পড়ে ৯৯টি ভোট। দু'দিন আগে লোকসভাতেও পাস হয় এই বিলটি। ৩৩৪ জন সাংসদ ওই বিলটির সপক্ষে রায় দেন। এই বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ অসমে। হাজার হাজার প্রতিবাদকারীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সেখানে। এর আগে আটের দশকের গোড়ায় অসম উত্তাল হয়েছিল ছাত্র আন্দোলনে।
১৯৮৫ সালে অসম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তারপর থেকে অসমে এই ধরনের বিক্ষোভ আর দেখা যায়নি।
একই ভাবে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে ত্রিপুরা ও আগরতলায়। বহু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পঠনপাঠন বন্ধ ছিল, কেননা পড়ুয়ারা অধিকাংশই প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিয়েছিল। আগামী ১৪ ডিসেম্বর গুয়াহাটি ও ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরীক্ষা হওয়ার কথা তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাতিল হয়েছে অন্তত ৩১টি ট্রেন।
নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা করেছে মানবাধিকার সংগঠন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তাদের দাবি, এতে সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারাকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে এবং এটি মুসলিম শরণার্থীদের জন্য বৈষম্যমূলক। মনে করা হচ্ছে বিরোধী নেতারা এই বিলের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন।
রইল নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল নিয়ে আপডেট:
অসমের বিধায়কের বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিল বিক্ষোভকারীরা
অসমের ছাবুয়ায় বিধায়ক বিনোদ হাজারিকার বাসভবনে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতায় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। গাড়ি, সার্কেল অফিসও আগুনে পুড়ে গিয়েছে বলেই সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে ত্রিপুরা মোটের উপর স্বাভাবিক
বিগত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ত্রিপুরার আটটি জেলার মধ্যে তিনটিতে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলের বিরুদ্ধে সোমবার থেকে চলা আন্দোলনের পরিস্থিতি বেশ স্বাভাবিক ছিল বলেই দাবি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের।
আগরতলায় এক উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে ধলাই জেলায় কিছু জিনিসপত্র একটি গাড়ি ও কয়েকটি দোকান পুড়িয়েছে বিক্ষোভকারীরা। বিলের বিরোধিতায় বিক্ষোভকারী কিছু গোষ্ঠী গোমতী জেলার (দক্ষিণ ত্রিপুরার) তাইদুতে কয়েকটি দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে।
ধলাই এবং উত্তর ত্রিপুরা এই দুই অস্থির এবং মিশ্র জনসংখ্যার জেলার ম্যাজিস্ট্রেট এবং কালেক্টররা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক ছিল।
কংগ্রেসের ডাকা ত্রিপুরা বনধে আংশিক সাড়া
বুধবার নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত কর্মীদের উপর পুলিশি লাঠিচার্জের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য যুব কংগ্রেসের ডাকা ২৪ ঘণ্টার হরতালে বৃহস্পতিবার আংশিক সাড়া মিলেছে।
পুলিশ পশ্চিম ত্রিপুরা এবং সিপাহিজালা জেলায় কয়েকশ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিচালক রাজীব সিংয়ের মতে, বৃহস্পতিবার ত্রিপুরার কোথাও কোনও ঘটনা ঘটেনি। সংবাদ সংস্থা আইএনএসকে রাজীব সিং বলেন, "পরিস্থিতি একেবারে শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক।"
সরকারী দফতরে উপস্থিতি, ব্যাংক পরিষেবা স্বাভাবিক থাকলেও কোথাও কোথাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দোকান, বাজার এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আংশিকভাবে খোলা রয়েছে। বেশিরভাগ বেসরকারি যানবাহন রাস্তায় দেখা যায়নি।
টিভি চ্যানেলগুলিকে হিংসার উদ্রেক বা প্ররোচনা দিতে পারে এমন খবর সম্প্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে
কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলিকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে যাতে হিংসার উস্কানিমূলক, 'দেশবিরোধী মনোভাব' প্রচার না করা হয় এবং দেশের অখণ্ডতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন কোনও বিষয়ও যাতে সম্প্রচার না করা হয়।
বুধবার সংসদে পাস হওয়া নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলের বিরুদ্ধে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি টিভি চ্যানেলগুলি হিংসাত্মক বিক্ষোভের ফুটেজ প্রকাশিত হওয়ার পরেই এই উপদেষ্টা জারি করা হয়।
অতীতেও বিভিন্ন সময়ে, কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৯৫ অনুসারে কর্মসূচি এবং বিজ্ঞাপনের নীতিগুলি যথাযথভাবে অনুসরণ করে খবর সম্প্রচারের জন্য বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলির ক্ষেত্রে পরামর্শ জারি করেছে মন্ত্রক।
বাংলাদেশি হিন্দু অভিবাসীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যই নাগরিকত্ব বিল: সিপিএম
সিপিআই (এম) বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, অসমে বসবাসরত বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে এবং সেই দেশ থেকে আসা মুসলিম অভিবাসীদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা এটি। এটি বিজেপির 'সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা'।
আংশিক ট্রেন বাতিল
১৫৯৫৯ কামরূপ এক্সপ্রেস ১০.১২.২০১৯ তারিখে হাওড়া থেকে ছেড়ে আংশিক দুরত্ব অতিক্রম করে ডিব্রুগড়ের পরিবর্তে গুয়াহাটি অব্দি যাবে
১৫৯৬০ কামরূপ এক্সপ্রেস ১২.১২.২০১৯ ও ১৩.১২.২০১৯ তারিখের কামরূপ এক্সপ্রেস ডিব্রুগড়ের পরিবর্তে গুয়াহাটি থেকে ছেড়ে হাওড়া অব্দি আসবে।
১৫৯৫৬ ব্রহ্মপুত্র মেল ১২.১২.২০১৯ তারিখে ডিব্রুগড় অব্দি যাবে না। হাওড়া থেকে ছেড়ে গুয়াহাটি অব্দি যাবে। ফিরতি ১৫৯৫৫ ট্রেনও ছাড়বে গুয়াহাটি থেকে।
অসমের বিক্ষোভে প্রভাবিত ট্রেনগুলির তালিকা
১২৫২৫ কলকাতা - ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস ১১.১২.২০১৯ এ কলকাতা থেকে ছাড়ার কথা ছিল।
১৫৯৫৯ কামরূপ এক্সপ্রেস ১২.১২.২০১৯ এ হাওড়া থেকে ছাড়ার কথা ছিল।
১৫৯৪২ ডিব্রুগড় - ঝাঝা এক্সপ্রেসটি ১২.১২.২০১৯ এ ডিব্রুগড় থেকে ছাড়ার কথা।
১৫৯৪১ ঝাঝা - ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস ১৩.১২.২০১৯ তারিখে ঝাঝা থেকে ছাড়ার কথা রয়েছে।
বুধবার গুয়াহাটির রাজপথে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী সামিল হন নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদ করতে।
বর্ষীয়ান আইনজীবী কপিল সিবাল ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ বা আইইউএমএল-এর হয়ে লড়বেন সুপ্রিম কোর্টে। আইইউএমএল সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দায়ের করেছে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলকে বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করার জন্য।
''আপনাদের অধিকার কেউ কেড়ে নেবে না'': প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে জানিয়েছেন, সরকার অসমের নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় দায়বদ্ধ। তিনি জানান, ''আমি তাঁদের নিশ্চিত করতে চাই, কেউ আপনাদের অধিকার, পরিচয় ও সুন্দর সংস্কৃতিকে কেড়ে নেবে না। এটা আরও সমৃদ্ধশালী হবে ও বাড়বে।''
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে সেনাবাহিলীর তরফে জানানো হয়েছে গুয়াহাটিতে দুই কলাম সেনা পাঠানো হয়েছে। সেনা মোতায়েন করা হয়েছে তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড় ও জোড়হাট জেলাতেও।
এই বিল বৈষম্যমূলক, সাম্যের অধিকারকে লঙ্ঘন করছে, অভিযোগ বিরোধী নেতাদের
সংসদের উভয় কক্ষে নাগরিকত্ব বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিলের বিরোধিতা করেছে মানবাধিকার সংগঠন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তাদের দাবি, এতে সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারাকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে এবং এটি মুসলিম শরণার্থীদের জন্য বৈষম্যমূলক। মনে করা হচ্ছে বিরোধী নেতারা এই বিলের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন।
বুধবার রাজ্যসভায় পাস হয়ে গিয়েছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল। বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ১২৫টি। বিপক্ষে পড়ে ৯৯টি ভোট। দু'দিন আগে লোকসভাতেও পাস হয় এই বিলটি। ৩৩৪ জন সাংসদ ওই বিলটির সপক্ষে রায় দেন।