কৃষ্ণনগর: লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় পর্ব শেষ। সোমবার চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ হবে রাজ্যের ৮ আসনে। তারমধ্যেই রয়েছে নদিয়ার কৃষ্ণনগর আসনটি। ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গে নদিয়া জেলাটির সম্পর্ক ওতঃপ্রোতভাবে জড়িত। এই কৃষ্ণনগরেই জন্মেছিলেন কালীসাধক এবং কালীমূর্তি তৈরি করে পুজোর প্রচলন করা মাতৃসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। এই নদিয়া জেলাটিতে শাক্ত ও বৈষ্ণব, দুটি ধারা প্রবাহিত হয়েছে একসঙ্গে। হরিনাম সংকীর্তনের মধ্য দিয়ে যেমন সারা বিশ্বের কাছে নদিয়া জেলাটি একটি পবিত্র এবং সুপরিচিত তীর্থক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, তেমনই এই জেলাতে রয়েছে ইসকন, যারা বিশ্বের কাছে হরিনাম সংকীর্তন প্রচলনের কারণে যে প্রতিষ্ঠানটির নাম ঘোরাফেরা করে।
কংগ্রেস বা তৃণমূল নয় বামেদের থেকে এই লোকসভা কেন্দ্র ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি
দেশের বিভিন্ন রাজ্যের পর এবার এ রাজ্যে পদ্ম ফোটানোর লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনকে সেমিফাইনাল ধরে নিয়ে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করতে দিতে চায় অশোকা রোড। তারমধ্যেই অন্যতম নদিয়া জেলা, এই জেলাটিকেই পাখির চোখ করেছে গেরুয়া শিবির। ১৯৯৯ সালে নদিয়ার কৃষ্ণনগর আসনে বাম প্রার্থী কে হারিয়ে জয় ছিনিয়েছিলেন বিজেপি-তৃণমূলের জোটপ্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জুলুবাবু। সেবার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী মন্ত্রিসভাতেও জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির সভাপতিও ছিলেন সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়।
এখন গড় কিন্তু কবে প্রথম বহরমপুরে জেতে কংগ্রেস?
এবার ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন খেলাোয়াড় কল্যাণ চৌবেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। ঘাসফুলের থেকে আসনটি ছিনিয়ে আবারও পদ্মফুল ফোটাতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। এই কেন্দ্রে লড়াই হচ্ছে চারমুখী।
রাস্তার ধারে চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বললেন, “বিজেপি প্রার্থী একজন বহিরাগত। জুলুবাবুকে প্রার্থী করলে তাদের পক্ষে জয় পাওয়া অনেক সহজ হত”। কথাগুলো শুনতে পেলেন অপর এক ব্যক্তি। তিনি আবার বলে উঠলেন, “প্রজ্ঞা ঠাকুরের মতো মানুষদের টিকিট দিয়েছে বিজেপি। মানুষ সবকিছু বুঝতে পারছে, এবং দেখতে পাচ্ছে। মানুষকে বোকা বানানো যাবে না ”।
বাঁকুড়ার মতো আসানসোলেও মিরাকেল করতে পারবেন মুনমুন?
কৃষ্ণনগর শহর এবং তার পাশ্ববর্তী এলাকায় খ্রিশ্চান জনসংখ্যা ভালোসংখ্যক রয়েছে। তবে এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত এবং মুসলিম সম্প্রদায়েরও বাস রয়েছে। ধুবুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের এক দোকানদারের কথায়, “হিন্দু এবং মুসলমানের ব্যাপার নয়, আমরা যে সন্ত্রাসের সাক্ষী থেকেছি সেটাই মূল ব্যাপার। আমরা আগে সিপিএমকে ভোট দিয়েছি, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, তৃণমূলকে রুখতে পারবে একমাত্র বিজেপি”।
তবে এসব কথায় আমল দিতে নারাজ সিপিএম। বরং তৃণমূলের একমাত্র প্রতিপক্ষ যে বিজেপি, এই বিষয়টিকেই আমল দিতে নারাজ তারা। বরং এটি মিডিয়ার তৈরি করা বলে মন্তব্য সিপিএমের।
রানাঘাটে হ্যাট্রিক করতে পারবে তৃণমূল?
এই কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয়বার ভোটযুদ্ধে নেমেছেন সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝা। তাঁর কথায়, “লড়াইটা যে কেবল তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে, এটা একটা কথামাত্র। এই দুইদলের ছায়াযুদ্ধ ধরে ফেলেছে মানুষ। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, মুকুল রায়ের ভূমিকা, আগে তিনি তৃণমূলের দু নম্বর জায়গায় ছিলেন, এখন বিজেপির শীর্ষ পদে, এটা কখনও হয়”। কৃষিঋণ মুকুব থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান, শিল্পে বিনিয়োগের মত ইস্যুগুলি নিয়ে তাঁর দল প্রতিটি ভোটারের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝা।
মুনমুনকে তৃণমূলের হয়ে ভোট চাইতে দেখলে সুচিত্রা সেন লজ্জা পেতেন: বাবুল
তবে নিজের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী, বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে, এবং একমাত্র তাঁর দলই তৃণমূলকে রুখতে পারবে বলে ধারণা প্রাক্তন খেলোয়াড়ের। হুডখোলা গাড়িতে প্রচারে বেরিয়ে জয় শ্রীরাম ধ্বনিতে ভেসে গেলেন প্রাক্তন খেলোয়াড়। রাজনীতির ময়দানে প্রতিপক্ষের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “শাসকদলের সন্ত্রাসে ইতি চায় সাধারণ মানুষ, এবং একমাত্র বিজেপিই এটা করতে পারে। এটা শুধুমাত্র দুই দলের লড়াই নয়, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াই”।
মুসলিম এলাকায় কল্যাণ চৌবের গাড়ি ঢুকতেই তাঁকে দেখতে বেরিয়ে এলেন সাধারণ মানুষ। প্রচুর মানুষকে দেখা গেল, ছবি তুলতে। তারই মাঝে বিজেপি প্রার্থী বললেন, “আমাদের দলের প্রতি উৎসাহ দেখতে পাবেন”।
চেনা মাঠে অচেনা প্রতিপক্ষর মুখোমুখি বাবুল
কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী ইন্তাজ আলি শাহ। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হলে তাঁর জয় হবে বলে আশাবাদী, ইন্তাজ আলি শাহ। কংগ্রেস প্রার্থীর কথায়, “মানুষের রায় মাথা পেতে নেব। কিন্তু আমি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট চাই। চোপড়ার স্পর্শকাতর বুথগুলি নিয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি মনে করি, তারা বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করবে”।
বিজেপি দেশের পক্ষে বিপজ্জনক, ৪৪০ ভোল্ট, পাণ্ডুয়ায় তোপ মমতার
জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র বলেন, “নিজেরা কখনই এই আসনে জিততে পারে নি বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে একবার এই আসনে জিতেছিল তারা। এমনকী তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় একবার তাপস পাল, একবার জ্যোতির্ময়ী সিকদারের কাছে হেরেছেন। ২০১৪ এ মোদী ঝড়েও তারা তৃতীয় স্থানে ছিল”।
গতবার ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এই আসনে দ্বিতীয়বার জিতেছিলেন তাপস পাল। বিজেপি পেয়েছিল ২৬ শতাংশ ভোট। ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস।
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদনা করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে।)