পুরুলিয়া: লালমাটির জেলা পুরুলিয়া, লাল কাঁকড়, মোরাম মাটির রাস্তার দুদিকে ফুটে রয়েছে শিমূল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া ফুল। গরম পড়তেই প্রকৃতির আপন নিয়মে এই ফুলগুলো এই জেলার শোভাবর্ধনের কাজ শুরু করে দেয়, এবারেও তার অন্যথা হয় নি। তবে এবার সেই ফুলগুলোর সঙ্গেই মিশে গেছে আরও দুই ফুল, পদ্ম আর ঘাসফুল। শিমূল, পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়েছে গেছে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদলের দুই প্রতীক ফুল। তারমধ্যে দেওয়ালে দেওয়ালে লাল পতাকার মধ্যে থেকে গর্জন করছে ফরওয়ার্ড ব্লকের বাঘ। সব মিলিয়ে পুরুলিয়া পুরুলিয়ায় একদিকে যেমন শেষ বৈশাখের তীব্র দাবদাহ, তারসঙ্গেই তাল মিলিয়ে চড়েছে ভোটের উত্তেজনার পারদও।
উত্তরপ্রদেশে আসন কমবে বিজেপির, ৭ রাজ্যে শূন্য হবে: মমতা
রবিবার পুরুলিয়ায় ভোটগ্রহণ। এই আসন থেকে গতবার জিতে সংসদে গিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতো, তাঁর ওপর এবারেওও ভরসা রেখেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উন্নয়নের রথে সওয়ার হয়ে পুরুলিয়ায় রুক্ষ মাটিতে এবারেও ঘাসফুল ফোটাতে চান “ডাক্তারবাবু” মগৃাঙ্ক মাহাতো।
২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনেই পুরুলিয়ায় ভালো সফল হয়েছিল বিজেপি। তারপর থেকেই লোকসভা নির্বাচনে এখানে পদ্ম ফোটাতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। ১৯৭৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত এই পুরুলিয়া ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলে। জয়ের ব্যাপার আত্মবিশ্বাসী মৃগাঙ্গ মাহাতো, দ্বিতীয়বার এই আসনে ফের জিতবেন বলে একশও শতাংশ নিশ্চিত তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী জ্যোর্তিময় মাহাতো এবং ফরওয়ার্ডব্লকের বীর সিং মাহাতো, রয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোও।
রবিবার জঙ্গলমহল সহ রাজ্যের ৮ আসনে ভোটগ্রহণ
সংবাদসংস্থা পিটিআইকে তৃণমূল প্রার্থী মৃগাঙ্গ মাহাতো বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রচুর উন্নয়নের কাজ হয়েছে, রাস্তা, বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প চালু করা হয়েছে সবাই দেখতে পাচ্ছে”।
বাম আমলে পুরুলিয়ার একটা অংশ ছিল মাওবাদীদের শক্তঘাঁটি।বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের মতো জঙ্গলমহলের এলাকাগুলি ছিল মাও দাপটে তটস্থ। যৌথ বাহিনীর অভিযান এবং বিভিন্ন প্রকল্প ও প্রতিযোগীতার মাধ্যমে তাদের মূল স্র্বোতে ফিরিয়ে আনার পর্ব শুরু হয় রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে।
“রাজনীতিবিদ হিসেবে নয় আমার স্টারডমের জন্যই মানুষ আমার জনসভায় আসেন”; দেব
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ১০ বছর আগের থেকে ঝড়খণ্ড সীমান্তে পশ্চিমের এই জেলার অনেকটাই উন্নয়ন হয়েছে। তবে পরিবর্তন ও উন্নয়ন বেয়েই ধরেছে দুর্নীতির ঘুনপোকা। গত কয়েকবছরে তৃণমূল নেতাদের অনেকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ফুলেফেঁপে উঠেছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের একাংশের। পুরুলিয়া শহরের বাইরে চায়ের দোকানের মালিক অমল মাহাতো জানিয়েছেন, তৃণমূল নেতাদের একাংশের অংহকার মানুষকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূলনেতাদের একাংশের মধ্যে তৈরি হয়েছে, লোভ, তবে এলাকার মানুষের কাছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আহ্বান জানিয়েছেন, "রাগ করে দূরে সরে যাবেন না, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে"।
ক্ষমতায় আসতে আমাদের ব্যবহার করেছে তৃণমূল, বলছে নন্দীগ্রাম
২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের প্রবল প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে আসে বিজেপি।তারপর থেকেই চিত্র বদলায়।গত পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসে ১২ জনের মৃত্যু হয়।
পুরুলিয়ায় পঞ্চায়েত সমিতির ভোটে ২৩৪টি আসনে জয়লাভ করে জোড়াফুল শিবির, ১৪২ আসনে ফোটে পদ্মফুল। কংগ্রেস ৩৩ এবং বামেরা ২৫টি আসনে জয়ী হয়।
গ্রামপঞ্চায়েতে ৮৩৮ আসনে জোড়াফুল ফোটে, ৬৪৪ আসনে পাপড়ি মেলে পদ্ম, বামেরা ১৭৮ এবং ১৫০ আসন পায় কংগ্রেস।
পুরুলিয়ায় নিজেদের ভিত শক্ত করতে ময়দানে নেমেছে বিজেপি, আরএসএস বজরং দল।দলের এক নেতার কথায়, মাহাতো সম্প্রদায়ের একাংশ বিজেপির দিকে ঝোঁকায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে জোড়াফুল শিবিরের নেতাদের কপালে। ২০১৪ সালে চতুর্থস্থানে থাকা বিজেপি এবার লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে।
কিশোরীর শ্লীলতাহানি! পকসো আইনে মামলা ডায়মন্ড হারবারের বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে
1977 থেকে 2014 পর্যন্ত পুরুলিয়া আসনটি ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলে। গত লোকসভা নির্বাচনে এই আসনে বাঘের গর্জন থামে। রুক্ষ মাটি ফুঁড়ে পাপড়ি মেলে ঘাসফুল।
পুরুলিয়ার প্রার্থী তথা বর্ষীয়ান নেতা নেপাল মাহাতোর সমর্থনে প্রচারসভা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তাতে দলের নেতাকর্মীরা উৎসাহিত হলেও, জয়ের তেমন চান্স নেই বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও গ্রামবাসীরা।
বিজেপি প্রার্থী জ্যোর্তিময় মাহাতো বলেন, “মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে নেই। তাদের হাতে রয়েছে শুধু গুণ্ডা। ভোট লুঠ করতে গেলে বাধা দেবেন সাধারণ মানুষ”। বামেরা পুরুলিয়া থেকে মুছে গেছে এবং তাদের বেশীরভাগ সমর্থকই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি বিজেপি প্রার্থীর।
ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী বীরসিং মাহাতোর দাবি, তথাকথিত বিজেপি ঝড় কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, “কেন্দ্রে তাদের কোনও ভাল নেতা নেই এবং সমর্থকরা বামপন্থী, তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল করেছিল তারা”।
তৃণমূল প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতোর দাবি, এই আসনে ভাল জায়গায় থাকবে বামেরা, যেহেতু এলাকায় তাদের ভাল প্রভাব রয়েছে।বিজেপি ও কংগ্রেসের কিছু এলাকায় মাত্র ভোট রয়েছে বলে দাবি তৃণমূল প্রার্থীর।তিনি বলেন, “মানুষের নূন্যতম প্রয়োজনীয় চাকরি, খাদ্য উন্নয়নের মতো বিষয়গুলি নিয়ে পাঁচ বছরে বিজেপি কিছু না করে এখন নজর ঘোরাতে ধর্মকে ব্যবহার করছে”।