মালদহ: মালদহতে মূল লড়াইটা ত্রিমুখী। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের শেষতর যে দুর্গগুলি রয়েছে তার মধ্যে অতি উল্লেখযোগ্য একটি। মালদহতে কংগ্রেস হারে না, এমন একটি কথা সেই গণি খান চৌধুরীর আমল থেকেই প্রাচীন অরণ্য প্রবাদের মতো করে প্রচলিত। মালদহ উত্তর এবং মালদহ দক্ষিণ এই দুই লোকসভা কেন্দ্রেই সংখ্যালঘু ভোটারেরই আধিক্য। এক দশক বা দুই দশক নয়, টানা ৪ দশক ধরে যাঁরা রয়ে গিয়েছেন কংগ্রেসের সঙ্গে। এবার কি এই ছবিটা বদলাবে? গুঞ্জন ও জল্পনা চলছে সর্বত্র। আর এই প্রবল ফিসফাসের ফলেই এই ফাঁকা জায়গা কোথাও গিয়ে তৈরি হয়েছে, যা দখল করার জন্য মুখিয়ে রয়েছে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস।
এবারে মালদহ উত্তর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী ইশা খান চৌধুরী এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মৌসম নূর- যিনি কংগ্রেসেরই সাংসদ ছিলেন, কয়েকমাস হল তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন- ইশা খান চৌধুরী হলেন গণি খান চৌধুরীর ভাইপো এবং মৌসম নূর হলেন গণি খান চোধুরীর ভাগ্নি। অর্থাৎ, লড়াইটা সরাসরি পরিবারের মধ্যেই। সেই পরিবার, যা মালদহের রাজনীতিতে আধিপত্য কায়েম করে রেখেছে যুগের পর যুগ ধরে। মালদহ উত্তরে বিজেপির প্রার্থী প্রাক্তন সিপিএম নেতা খগেন মূর্মু।
ভোট হল বালুরঘাটে, এই কেন্দ্রের সম্বন্ধে জেনে নিন বিস্তারিত তথ্য
অন্যদিকে, মালদহ দক্ষিণে কংগ্রেস প্রার্থী ইশা খান চৌধুরীর বাবা এবং গণি খান চৌধুরীর ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু)। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন। এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হলেন শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী।
গত নির্বাচনে জেতেন কংগ্রেসের আবু হাসেম খান চৌধুরি। তিনি জয়ী হয়েছিলেন ৩ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি ভোটে। বিজেপি প্রার্থী ছিলেন, দ্বিতীয় স্থানে এবং তৃতীয় স্থানে ছিল সিপিএম। ২০০৯ সালে এই লোকসভা এলাকায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়। তার আগে ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এখানে জিতেছিল কংগ্রেসের। ১৯৭৭ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে সিপিএম জেতে। সেবারই প্রথম জিতেছল বামেরা। পরের বার ১৯৮০ সালে কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তন হয়। এর পরে আসন বিভাজনের পর ২০০৪ সালে আবার জিতে রাজনৈতিক কতৃত্ব গড়ে তোলে কংগ্রেস। পরের বছর উপনির্বাচনেও এখানে কংগ্রেসের জয় হয়।
কবে প্রথম ভোট হয়েছিল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে?
কিন্তু কী হবে এবারে মালদহ'তে? কী মনে করছেন ওই জেলার সাধারণ মানুষ? প্রশ্নটা করা গেল ২২ বছর বয়সী ভাস্কর ঘোষকে। নতুন প্রজন্মের এই তরুণের একটি কম্পিউটার সারাইয়ের দোকান আছে কালিয়াচকে। তিনি বললেন, “একটা কথা বলুন তো আর কতদিন আমরা এই মানুষগুলোকে ভোট দেব, যাঁরা নিজের মৃত দাদা, মামা'র নামটাকে সামনে রেখে ভোট চায়? ডালুবাবু (মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ) তো এখানে আসেন কেবল ভোটের সময়। তারপর আমাদের ভুলেই যান। আর, এলেও নিজের প্রয়াত দাদার কথা বলে গিয়ে তাঁর নাম করে ভোটটা চান। তাঁরা অতীতে আমাদের জন্য কী করেছে, তা আর শুনতে চাই না। এখন তাঁরা আমাদের জন্য কী কী করতে পারে, জানতে চাই সেটাই”।
তাঁর কথারই প্রতিধ্বনী শোনা গেল ২৯ বছর বয়সী রঞ্জন হালদারের মুখে। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। বললেন, “ডালুবাবুকে কোনও হিন্দু এবারে ভোট দেবে না। যদিও, আমরা এখানে সংখ্যালঘু। তাই, তাঁর জেতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না”।
সত্যিই কী সেই সম্ভাবনা, তা জানার জন্য মালদহবাসীদের অপেক্ষা ২৩ মে পর্যন্ত।
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদনা করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে।)