‘বৈধ’ নাগরিক মধুবালাকে বছরের পর বছর ‘বিদেশি’ সন্দেহে আটক করে রেখেছিল অসম পুলিশ।
হাইলাইটস
- আটক ৫৯ বছরের মধুবালা মণ্ডলকে বৃহস্পতিবার মুক্তি দেওয়া হল।
- মধুবালা দাসের জায়গায় তাঁকে গ্রেফতার করেছিল অসম পুলিশ।
- কয়েকজন সমাজসেবীর সৌজন্যে বিষয়টি আদালতের নজরে আসে।
গুয়াহাটি (অসম): অসমের (Assam) নাগরিক পঞ্জির (NRC) খসড়া তালিকায় আরও ১.০২ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বুধবার প্রকাশ পেয়েছে নতুন খসড়া। এই পরিস্থিতিতে সামনে এল এক ‘বৈধ' নাগরিককে বছরের পর বছর ‘বিদেশি' সন্দেহে আটক করে রাখার ঘটনা। অসম কর্তৃপক্ষ তাঁদের ভুল মেনে নিয়েছেন। তিন বছর কোকড়াঝাড় বন্দিশালায় আটক ৫৯ বছরের মধুবালা মণ্ডলকে বৃহস্পতিবার মুক্তি দেওয়া হল। অসম পুলিশের সীমান্ত শাখা, যারা বিদেশি চিহ্নিতকরণ করার কাজটি করে, তারা মেনে নিয়েছে বৃদ্ধাকে ভুল সন্দেহে আটক করে রাখা হয়েছিল। সূত্রানুসারে জানা যাচ্ছে, ভ্রান্তির আসল কারণ নাম। মধুবালা দাস নামে চিরাং জেলার ১ নম্বর বিষ্ণুপুর গ্রামে ২০১৬ সাল থেকে বসবাসকারী এক মহিলা ছিলেন চিহ্নিত বিদেশি। কিন্তু তিনি মারা যান। এরপরই পুলিশ তাঁকে ধরতে গিয়ে আটক করে মধুবালা মণ্ডলকে।
বিজেপিকে রুখতে একসঙ্গে লড়তে হবে তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিআইএমকে: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
তারপর থেকে গত তিন বছর ধরে বন্দিশালায় বন্দি হয়ে দিন কাটিয়েছেন মধুবালা। গ্রেফতার হওয়ার আগেও জীবনটা খুব সহজ ছিল না তাঁর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মধুবালা বিধবা। মূক ও বধির মেয়ে বিবাহ-পরিত্যক্তা।
আরও ১ লক্ষ জনের নাম বাদ অসমের নাগরিক তালিকার খসড়া থেকে, জুলাইয়ে চূড়ান্ত তালিকা
এই পরিস্থিতিতে পুলিশ আটক করে তাঁকে। হতদরিদ্র মধুবালা পড়াশোনাও শেখার সুযোগ পাননি। ফলে তাঁর পক্ষে পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করা ছিল অসম্ভব। অসহায় মধুবালা তাই বন্দিশালাতেই হয়তো জীবনটা কাটিয়ে দিতেন। কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয়, চিরাং জেলার কয়েকজন সমাজসেবী বিষয়টি জানতে পেরে অসম সরকারের নজরে আনেন।
রাতারাতি ব্যাপারটা প্রমাণ করা যায়নি। কিন্তু অবশেষে সত্য স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকার অসম পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে এই কেসে যে ভুল হয়েছে সেটা মেনে নিতে এবং মধুবালাকে মুক্তি দিতে।
মধুবালার মতো আরও একটি ঘটনা আমিলা শাহর। শোনিতপুরের ধোলাইবিলের বাসিন্দা ৪০ বছরের আমিলাকে গ্রেফতার করে বন্দিশালায় পাঠানো হয়। অভিযোগ, তিনি ‘বিদেশি'। কিন্তু তাঁর পরিবারের সদস্যদের, এমনকী তাঁর ভাইবোনদের নাম উঠেছে নাগরিক তালিকার খসড়ায়।
আমিলা ও তাঁর পরিবারের সংযোগ রয়েছে বিহারের সঙ্গে। অসমে তাঁরা থাকছেল ব্রিটিশ আমল থেকে। আমিলার ভাই রমেশ গুপ্ত গুয়াহাটি হাইকোর্টে জানিয়েছেন, ‘‘আমরা গরিব ও অশিক্ষিত। কিন্তু তার অর্থ এই নয় আমরা ভারতীয় নই।'' রমেশ জানিয়েছেন, তাঁর পরিবার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মামলা লড়বেন।
গত মাসে অবসরপ্রাপ্ত আর্মি মহম্মদ সানাউল্লাহকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় বিচারে। তিন দশক ধরে আর্মিতে কর্মরত ৫৩ বছরের সানাউল্লাহকে ‘বিদেশি' হিসেবে চিহ্নিত করে বন্দি করা হয়। তাঁকে অসমের বন্দিশালায় পাঠানো হয়। পরে তাঁকে জামিন দেয় গুয়াহাটি হাইকোর্ট। বিষয়টি নজরে আনা হয় নির্বাচন কমিশন, অসম সীমান্ত পুলিশ ও নাগরিক তালিকা কর্তৃপক্ষের।