Jyotiraditya Scindia: মোদি-অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাতের পরেই কংগ্রেস ছাড়ার ঘোষণা করে ওই দুঁদে রাজনীতিক
হাইলাইটস
- মধ্যপ্রদেশ থেকে নিজের দলীয় বিধায়কদের অন্য জায়গায় নিয়ে গেল বিজেপি
- কংগ্রেসও চাইছে বিধায়কদের আগলে রাখতে, তাই রাজস্থানে নিয়ে রাখল তাঁদের
- সূত্রের খবর, বুধবারই বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া
ভোপাল:
২১ জন বিধায়ক সহ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার কংগ্রেস ত্যাগে সঙ্কটের মুখে মধ্যপ্রদেশের কমল নাথ সরকার। একটি সূত্র NDTV-কে জানিয়েছে যে বুধবারই বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন ওই দুঁদে রাজনীতিক (Jyotiraditya Scindia)। সম্ভবত তাঁকে বিজেপির টিকিটে রাজ্যসভা মনোনীত প্রার্থী করা হবে। এমনকী একথাও শোনা যাচ্ছে যে, মোদি মন্ত্রিসভাতেও স্থান পেতে পারেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। এমনিতেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্যে প্রয়োজনীয় বিধায়ক সংখ্যা থেকে মাত্র ৪ জন বিধায়ক বেশি নিয়ে মধ্যপ্রদেশে সরকার গড়েছিল কংগ্রেস। এবার জ্যোতিরাদিত্য অনুগামী বিধায়কদের ইস্তফা গৃহীত হলে সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতাও হারাবে তাঁরা, ফলে পড়ে যাবে কমল নাথ সরকার (Madhya Pradesh Government Crisis)। এই সময় তাই বিধায়ক সংখ্যা একটা বড় ফ্যাক্টর দুই দলের কাছেই। সেই জন্যেই (Madhya Pradesh Crisis) বিজেপি এবং কংগ্রেস দলীয় বিধায়কদের আগলে রাখার জন্যে ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রদেশের বাইরে নিয়ে গেছে বলে খবর। জানা গেছে, বিজেপি তাঁদের বিধায়কদের গুরগাঁওয়ের একটি পাঁচতারা রিসর্টে এনে রেখেছে, অন্যদিকে কংগ্রেস তাঁদের বিধায়কদের নিয়ে যাচ্ছে রাজস্থানের জয়পুরে।
এই বিষয়ে ১০টি তথ্য দেখে নিন:
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসার অল্প সময়ের মধ্যেই দলের ২১ জন বিধায়ক মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপালের উদ্দেশে তাঁদের পদত্যাগের চিঠি পাঠিয়ে দেন। এর আগে একটি সূত্র জানিয়েছিল যে ২৫ জন বিধায়ক নাকি পদত্যাগ করতে প্রস্তুত। এই ইস্তফাগুলি যদি গৃহীত হয় তবে ১৫ মাসের পুরনো কমল নাথ সরকার সংখ্যালঘু হয়ে যাবে।
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ যদিও বলেছেন যে তিনি নিশ্চিত যে তাঁর সরকার টিকে থাকবে এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ করবে। মঙ্গলবার গভীর রাতে তিনি বলেন, "উদ্বেগের কিছু নেই। আমরা আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করবই।"
এর আগে সোমবার, কংগ্রেসের ১৭ জন বিধায়ককে একটি চার্টার্ড বিমানে করে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময় কর্নাটক কংগ্রেসের অন্যতম নেতা ডি কে শিবকুমার দাবি করেন যে তিনি বিদ্রোহী বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাঁরা আবার দলে ফিরে আসতে চান। শিবকুমার NDTV-কে বলেন, "বেশিদিন লাগবে না ... খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা কংগ্রেস দলে ফিরে আসতে পারেন।"
এদিকে দলের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণেই বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, এই বিষয়টি মানতে নারাজ পোড় খাওয়া কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং। তিনি বুধবার সকালে এই বিষয়টি নিয়েই একটি টুইট করেন। তাতে তিনি লেখেন, "তাঁকে অবহেলা করার কোনও প্রশ্নই নেই। দয়া করে এই বিষয়টি নিয়ে গোয়ালিয়র চম্বলের কোনও কংগ্রেস সাংসদ বা নেতার কাছে জিজ্ঞাসা করুন, উত্তর পেয়ে যাবেন। গত ১৬ মাসে তাঁর সম্মতি ছাড়া ওই অঞ্চলে একটা কোনও কাজ হয়েছে এটা কেউ বলতে পারবে না। এই ধরণের অভিযোগ তাই অত্যন্ত দুঃখের। তবে উনি মোদি-শাহের অধীনে ভাল থাকুন, আমি তাঁকে এই শুভেচ্ছা জানাচ্ছি"।
একসময় গান্ধি পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ওই নেতা, মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় কংগ্রেসের অপ্রত্যাশিত জয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হতে পারেননি, কারণ তাঁর পক্ষে এবিষয়ে মাত্র ২৩ জন কংগ্রেস বিধায়ক সমর্থন দেন। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী হন কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা কমল নাথ। সেই সময় থেকেই বিক্ষুব্ধতার জন্ম হয়েছিল সিন্ধিয়ার ঘনিষ্ঠ মহলে। গত বছরের অগাস্টে যখন জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা রদ করে ওই রাজ্যের বিশেষ মর্যাদার সমাপ্তি ঘটায় কেন্দ্র এবং রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে তখন মোদি সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, যা কংগ্রেস শিবিরকে হতবাক করে দিয়েছিল।
মঙ্গলবার, হোলির দিন সকালে নাটকীয় ভাবে অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তারপরেই, তিনি কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধির উদ্দেশে নিজের পদত্যাগের একটি চিঠি টুইট করে "নতুন শুরুর" কথা বলেন এবং বলেন: "বরাবরই আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল আমার রাজ্য ও দেশের জনগণের সেবা করা, কিন্তু আমি মনে করছি এই দলের মধ্যে থেকে সেই কাজ আর আমি করতে পারছি না"।
এর কয়েক মিনিট পরেই কংগ্রেস "দলবিরোধী কাজ"-এর অভিযোগে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করার ঘোষণা করেন। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সমর্থকরা বলছেন যে গান্ধি পরিবার তাঁর সঙ্গে এনিয়ে কথা বলার বা বোঝানোর কোনও চেষ্টাই করেননি।
এই ঘটনার পর কংগ্রেস নেতা তথা রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলেন যে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া "জনগণ এবং আদর্শগত বিশ্বাস"-এর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তিনি আসলে "স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা"-র কারণেই কংগ্রেস ছেড়েছেন, এই অভিযোগও করেন গেহলট। তবে দলের অনেকেই ইঙ্গিত দেন যে জ্যোতিরাদিত্যের এই প্রস্থান কংগ্রেস নেতৃত্বে একটি বিশাল সংকট এনে দেবে এবং আরও বেশি করে সঠিক দিকনির্দেশের অভাব দেখা যাবে দলে।
২০০১ সালে প্রয়াত হল একসময়ের ডাকসাইটে কংগ্রেস নেতা এবং জ্যোতিরাদিত্যের বাবা মাধবরাও সিন্ধিয়া। জ্যোতিরাদিত্যের ঠাকুমা বিজয়রাজ সিন্ধিয়াও বিজেপিতে ছিলেন এবং তাঁর পিসি বসুন্ধরা রাজে এবং যশোধার রাজেও বিজেপিতেই রয়েছেন। বিজেপি বিধায়ক যশোধরা রাজে জ্যোতিরাদিত্যের বিজেপিতে আসার এই পদক্ষেপ আসেল "ঘর ওয়াপসি (স্বদেশে প্রত্যাবর্তন)"।
গত সপ্তাহেও দিল্লির কাছাকাছি একটি রিসর্টে আটকে রেখে ১০ জন কংগ্রেস বিধায়ককে টাকার বিনিময়ে নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করেছিল বিজেপি, এমন অভিযোগ ওঠে। কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং বিজেপির বিরুদ্ধে কমল নাথ সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্যে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনেন। তিনি অভিযোগ করেন, কংগ্রেস বিধায়কদের বিজেপির পক্ষে সমর্থন দেওয়ার জন্যে মাথা পিছু ৩৫ কোটি টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়েছিল। পাশাপাশি তিনি বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকেও মিথ্যাবাদী বলে দোষারোপ করেন। এর জবাবে শিবরাজ সিং চৌহান কংগ্রেসের "দ্বিমুখী নীতির" সমালোচনা করে বলেন: "সিন্ধিয়া কংগ্রেসে থাকাকালীন কিছু কংগ্রেস নেতার কাছে তিনি মহারাজা ছিলেন, এখন তিনি কি তাঁদের কাছে মাফিয়া হয়ে গেছেন?" তিনি মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথের একটি মন্তব্যকে তুলে ধরে ওই কথা বলেন, যেখানে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন যে, কিছু "মাফিয়া" তাঁর সরকারের স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টা করছে।
Post a comment