This Article is From Sep 27, 2019

Mahalaya 2019: মহালয়ার ভোর হয়েছিল কায়েতের ছেলের চণ্ডীপাঠে?

‘কায়েতের ছেলে হয়ে চণ্ডীপাঠ করবে! এ কেমন কথা?’, মহালয়ার ভোরে আকাশবাণী থেকে সরাসরি চণ্ডীপাঠ করবেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র, এমনটা ঠিক হতেই নাকি গুঞ্জন তুলেছিল এই ধরনের মন্তব্য।

Mahalaya 2019: মহালয়ার ভোর হয়েছিল কায়েতের ছেলের চণ্ডীপাঠে?

৮৭ বছর ধরে মহালয়া ভোর হয় বীরেন্দ্র কৃষ্ণের স্তোস্ত্রপাঠে

কলকাতা:

‘কায়েতের ছেলে হয়ে চণ্ডীপাঠ করবে! এ কেমন কথা? এতো কানে শোনাও পাপ। সমাজ কী বলবে? লোকে ছিঃ ছিঃ করবে যে', মহালয়ার (Mahalaya) ভোরে আকাশবাণী থেকে সরাসরি চণ্ডীপাঠ করবেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র (Birendra Krishna Bhadra), এমনটা ঠিক হতেই নাকি রেডিও অফিসের আনাচেকানাচে গুঞ্জন তুলেছিল এই ধরনের মন্তব্য। যাঁর কাঁধে এই দায়িত্ব তিনি পর্যন্ত এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী। মুখ কাঁচুমাচু করে, হাত কচলে তিনি আবেদন নিবেদন জানিয়েছিলেন পঙ্কজ কুমার মল্লিকের কাছে। কিন্তু পঙ্কজবাবু নাছোড়। তাঁর একটিই কথা, মহালয়ার সূর্য উঠবে বীরেন্দ্র কৃষ্ণের স্ত্রোত্রপাঠ শুনতে শুনতে। সম্প্রচারিত হবে 'মহিষাসুরমর্দিনী'। বাণী কুমারের গ্রন্থণায়। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, উৎপলা সেন, ইলা বসু, পঙ্কজ মল্লিক, সুপ্রীতি ঘোষের গানে।

ta1sc77g

সাল ১৯৩১। পঙ্কজ মল্লিকের জোরের কাছে হার মেনে মহালয়ার আগের রাতে সমস্ত শিল্পী আকাশবাণীতে। ব্রহ্ম মুহূর্তে মা দুর্গাকে স্মরণ করে স্ত্রোত্র পাঠ শুরু করলেন বীরেন্দ্রবাবু। পাঠ করতে করতে তিনি আস্তে আস্তে ডুবে যেতে লাগলেন মন্ত্রের মধ্যে। তাঁর পাঠের সঙ্গে চলছে সমস্ত শিল্পীদের কালজয়ী গান--- 'তব অচিন্ত্য রূপ জড়িত মহিমা', 'জাগো তুমি জাগো', 'বিমানে বিমানে'...। পাঠ যত এগোচ্ছে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ যেন বাহ্যজ্ঞান রহিত। একেবারে শেষ পর্বে এসে মাকে ডাকতে ডাকতে তিনি আত্মভোলা। চোখ দিয়ে, গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে শরতের শিশিরের মতো পবিত্র অশ্রুকণা। বাকিরা বাকহারা হয়ে শুনছেন সেই পাঠ। সেই সম্প্রচারণ শুনে সেযুগে গায়ে কাঁটা দিয়েছিল সমস্ত শ্রোতার। দিকচক্রবালরেখায় ভেরের সূর্য লাল আবির ছড়াতে গিয়ে থমকে গিয়েছিল উদাত্ত মা ডাক শুনে। ওমন আত্মা নিংড়ানো আকুতিতে সময়ও স্তব্ধ! আকাশে-বাতাসে তখন গমগম করছে একটাই ডাক 'আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে মঙ্গল শঙ্খ'।

4q4p4nbg

পরের দিন সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, অমন হৃদয় নিংড়ানো চণ্ডীপাঠ করলেন কে? কেউ ভুলেও জানতে চাননি, যিনি পাঠ করলেন তিনি ব্রাহ্মণ সন্তান না কায়েতের ছেলে! ৮৭ বছর আগে জিতে গিয়েছিল পঙ্কজ মল্লিকের জেদ। ভাগ্যিস! বিধাতা পুরুষ সবার অলক্ষ্যে সেদিন নিজের হাতে লিখেছিলেন এক নয়া ইতিহাস। তাঁর আশীর্বাদে কালজয়ী হয়েছিল বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র-বাণী কুমার-পঙ্কজ মল্লিকের 'মহিষাসুরমর্দিনী'। মহালয়ার ভোর হয়েছিল কায়েতের ছেলের চণ্ডীপাঠে।

o80as79o

সেই শুরু। তারপর ৮৭ বছর ধরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। বদলেছে বাঙালির জীবন। পছন্দ, ভালোলাগা মন্দলাগা। কিন্তু আজও এই একটি বিষয়ে বাঙালি ভীষণ প্রাচীনপন্থী। মহালয়ায় বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের ছাড় নেই। এব্যাপারে শহর এতটাই স্পর্শকাতর যে মহানায়ক উত্তমকুমারকেও পর্যন্ত রেয়াত করেনি। ইন্দিরা গান্ধির জরুরি অবস্থার সময় মহানায়ক এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ওপর দায়িত্ব বর্তেছিল এই অনুষ্ঠানের। বাঙালি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সেদিন। মহানায়কের বাড়িতে নাকি ঢিল ছোঁড়া হয়েছিল। অভিমানে-অপমানে আকাশবাণী ছেড়ে দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ। সুপারফ্লপ সেই সম্প্রচারণ শুনে বোধদয় হয়েছিল বেতার জগতের কর্মকর্তাদের। সসম্মানে ফের ফিরিয়ে আনা হয়েছিল বীরেন্দ্র কৃষ্ণকে। মহানায়ক নিজে বীরেনবাবুর বাড়ি গিয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন তাঁর কাছে। ১৯০৫ সালে আহিরিটোলায় কালীকৃষ্ণ ভদ্র-সরলাবালা দেবীর কোলে জন্মেছিলেন যে বীরেন, কে জানত একসময় তিনিই হয়ে উঠবেন মহালয়ার বঙ্গ জীবনের অঙ্গ!

.