Maharashtra: বিজেপির সরকার গঠনের বিরোধিতা করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট
নয়া দিল্লি: রাজ্যপালের পদক্ষেপগুলি সুপ্রিম কোর্টের পরিধির মধ্যে নয়, শীর্ষ আদালতে এমনটাই জানাল কেন্দ্রীয় সরকার। মহারাষ্ট্রে যেভাবে বিজেপিকে সরকার গঠনের জন্যে (Maharashtra Government Formation) আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যপাল এবং যেভাবে শনিবার সকালেই আচমকা মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, সেই গোটা বিষয়টি নিয়েই রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে শীর্ষ আদালতের (Supreme Court) দ্বারস্থ হয় শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট। সেই মামলারই শুনানিতে ওই যুক্তি দেয় কেন্দ্র। শনিবার মহারাষ্ট্রে এক আশ্চর্য পালাবদলের সাক্ষী থাকে গোটা দেশ। শুক্রবার রাত পর্যন্তও যেখানে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট সরকার গঠনের ব্যাপারে তৎপর হচ্ছিল, সেখানে রাত পেরিয়ে দিন হওয়ার পর সকলে দেখলো ভোরবেলায় সে রাজ্য থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করা হয়েছে, এবং সকাল ৮ টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিচ্ছেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। পাশাপাশি উপ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার।
এই ঘটনায় মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট এবং তাঁরা বলে যে "রাজ্যপাল তাঁর উচ্চপদকে উপহাস করেছেন"।
এদিকে বিজেপি হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করা অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহাতগি দাবি করেন যে রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত কখনোই বিচারিবিভাগীয় পর্যালোচনার বিষয় হতে পারে না। "রাজ্যপাল নিজের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে পারেন না। ৩৬১ নম্বর অনুচ্ছেদে রাজ্যপাল এ ব্যাপারে দায়মুক্ত। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।"
সোমবারের মধ্যেই কেন্দ্রকে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের চিঠি আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট
জোটের আবেদনের প্রতি ইঙ্গিত করে রোহাতগি বলেন, "আবেদনে প্রার্থনা করা হয়েছে 'রাজ্যপালকে সরকার গঠনের জন্যে আমন্ত্রণ জানাতে নির্দেশ দিন ...' এটি কীভাবে প্রার্থনা হতে পারে?"
এই সওয়ালে বিচারপতি এনভি রমনা মজা করে জবাব দেন, "রোহাতগি, এই আদালতে প্রার্থনা করার জন্যে স্কাই ইজ দ্য লিমিট... "।
"প্রত্যেকেই জানেন যে সুপ্রিম কোর্ট কোনও রাজ্যপালকে তাদের আমন্ত্রণ জানাতে নির্দেশ দিতে পারে না ...কেননা আইনসভা আদালতকে সম্মান করে এবং আদালত আইনসভাকে সম্মান করে", বলেন রোহাতগি । "ধরুন, আইসভা যদি আদেশ দেয় যে সুপ্রিম কোর্টকে অবশ্যই আগামী দুই বছরের মধ্যে সমস্ত মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে?", যুক্তি দেন তিনি। অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহাতগির এই যুক্তিতে থমথমে আবহাওয়ার মধ্যেও আদালত কক্ষে হাসির পরিবেশ তৈরি হয়।
রবিবার প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নির্দেশের পরে রবিবার এই আবেদনের শুনানিতে রাজি হওয়া তিন বিচারপতির বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি রমনা জবাবে বলেন, "আমরা আইনসভাকে সম্মান করি।"
"রাজ্যপাল কী চেয়েছিলেন তা আমরা জানি না", বলেন বিচারপতি অশোক ভূষণ । দেবেন্দ্র ফড়নবিশের সমর্থন পত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে বিচারপতি ভূষণের প্রশ্নের জবাবে জোটের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী কপিল সিব্বল জানান যে এটি "রেকর্ডে নেই"।
বিজেপি থেকে বাঁচাতে মুম্বইয়ের হোটেলবন্দি কংগ্রেস-এনসিপি-সেনার বিধায়করা!
এরপরেই উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সলিসিটার জেনারেলকে সোমবার সকালের মধ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার এবং দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়ে দেওয়া চিঠিটি আদালতের কাছে পেশ করার নির্দেশ দেয় । এই বেঞ্চ ফড়নবিশ, তাঁর উপ মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার, মহারাষ্ট্র সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারকেও নোটিস ধরায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ ছাড়পত্র নিয়ে শনিবার সকাল ৬ টার আগেই রাষ্ট্রপতি শাসন বাতিল হওয়ার পরে, রাজ্যপাল দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানান। সকাল ৭.৫০ মিনিটে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এবং উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন শরদ পাওয়ার ভাইপো অজিত পাওয়ার।
তাদের আবেদনে তিন পক্ষই দাবি করেছে যে রাজ্যপাল দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর আগে তাঁর দাবি করা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পরীক্ষা করে দেখার জন্য "দায়বদ্ধ"। শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেস দাবি করেছে যে তাঁদের সঙ্গে ১৫৪ জন বিধায়ক রয়েছেন, এবং তাঁরা সরকার গঠন করার জন্যে অন্যতম প্রধান দাবিদার।