১৪ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি। তবে ভারতের কোনও কোনও জায়গায় ১৫ তারিখ সংক্রান্তি পালিত হবে। জ্যোতির্বিদ্যা অনুযায়ী দশম ঘর অর্থাৎ মকরের ঘরে সূর্যের প্রবেশকে বলে মকর সংক্রান্তি। মহাকাশে এই পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীতে বড় ও উষ্ণ দিনের সূচনা হয়। সূর্যের বেশিক্ষণ অবস্থান ফসল পাকার জন্য জরুরি। এ সময় দেশ জুড়ে কৃষি উৎসব নবান্ন পালিত হয়। দেশের অন্যতম বড় উৎসব মকর সংক্রান্তি। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তা বিভিন্ন ভাবে পালিত হয়।
দেখুন কোন রাজ্য কেমন ভাবে এই উৎসব পালন করে:
রাজস্থান
রাজস্থানে একে সংক্রাট বলা হয়। খাবারের মধ্যে তিলপাতি, গজক, ক্ষীর, ঘেওয়ার, তিলের লাড্ডু আর তার পাশাপাশি ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব তলে রাজস্থান জুড়ে। রাজস্থানী মহিলারা এ সময়ে ১৩ জন মহিলাকে নানা সধবার সাজের উপকরণ উপহার হিসাবে দেন।
হরিয়ানা ও দিল্লি
আকাশ জুড়ে এ সময়ে ঘুড়ির মেলা বসে যায়। আর মুখে চালান হয় গুড় দিয়ে তৈরি তিলের লাড্ডু, রেওয়ারি, রজক, বাদাম। সকালে স্নানের পরে নতুন পোশাক পরে আগে সূর্যপ্রণাম করা হয়। তারপরে দিনভর চলে ঘুড়ির লড়াই। হরিয়ানাতে ঘিয়ের চূর্মা, আটা ও বাদাম দিয়ে বিশেষ মুখরোচক খাবার বানানো হয়। সংক্রান্তি ভোজেরও আয়োজন করেন অনেকে। আর শেষ পাতে থাকে ক্ষীর।
এই উৎসবের অন্যতম অঙ্গ ঘুড়ি ওড়ানো
উত্তর প্রদেশ
এখানে সবথেকে বড় আকর্ষণ প্রয়াগ ও ত্রিবেণী সঙ্গমের মাঘ মেলা। অনেকে গঙ্গায় অবগাহন করেন পূণ্যার্জনের আশায়। কেউ কেউ উপস্থিত হন শুধু মেলা উপভোগ করতে। চিক্কি, চূড়া, তিলের লাড্ডু, গুড়ের লাড্ডু, ক্ষীর, খিচুড়ি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
বাংলা
বাংলায় একে পৌষ মাসের শেষ দিন বা পৌষ সংক্রান্তি বলা হয়। খেজুর গুড় দিয়ে ঘরে ঘরে দুধ পুলি, পিঠে পুলি, গোকুল পিঠে, পাটিসাপ্টা, পায়েস-সহ আরও অসংখ্য খাবার তৈরি করা হয়। খেজুর গুড় মূলত শীতের এই সময়টুকুতেই পাওয়া যায়। সাধারণত তিন দিন ধরে এই উৎসব চলে। সংক্রান্তি আগের দিন শুরু হয়ে পরের দিন তা শেষ হয়।
মহারাষ্ট্র
তিল ও গুড় দিয়ে তৈরি পুরাণপুলি মহারাষ্ট্রের বিখ্যাত খাবার। আর থাকে তিল-গুড়ের লাড্ডু। মহারাষ্ট্রে একটা কথা খুব প্রচলিত, ‘মিষ্টি তিলের লাড্ডু খাও আর মিঠে কথা বলো।'
মহারাষ্ট্রেও এই উৎসব পালিত হয
হিমাচল প্রদেশ
এখানে মকর সংক্রান্তি মঘা সাজি নামে পরিচিত। মানুষজন সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে প্রতিবেশীর বাড়িতে যান। সেখানে একসাথে বলে খিচুড়ি, দুধ, ঘি খাওয়া তলে। আর থাকে লোকসঙ্গীত। অনেকে মন্দিরে পুজো দিতেও যান।
কর্নাটক
এখানে মকর সংক্রান্তি সুগ্গি নামে পরিচিত। বাড়ির মেয়েরা এ দিন নতুন পোশাক পরে পরিবারের মঙ্গল কামনায় মন্দিরে পুজো দিতে যান। এই রীতিকে বলে ‘এল্লু বিরোধু'। পুজোর থালায় থাকে সাদা তিল, বাদামভাজা, শুকনো নারকেল, গুড়। এ ছাড়াও আখ এবং আখের রসে তৈরি একপ্রকার বিশেষ মিষ্টিও থাকে।
গুজরাত
এখানে এই পার্বণ উত্তরায়ণ নামে পরিচিত। সূর্যের এই চলন সংস্কৃতে উত্তরায়ণ নামেই পরিচিত। ১৪ জানুয়ারি তারা উত্তরায়ণ এবং ১৫ তারিখ বাসি উত্তরায়ন পালন করবেন। গুজরাতিরা বিভিন্ন সব্জি ভাপিয়ে উন্ঢিয়ো নামে একটি পদ বানান এ সময়ে। এ ছাড়াও চিক্কি, তিলের লাড্ডুও থাকে। এ দিন মা ও বাবা মেয়েদের হাতে মিষ্টির থালা তুলে দেন।