প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করেন Xi Jinping
মামল্লাপুরম:
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শি জিনপিং (Xi Jinping) আজ (শনিবার) দ্বিতীয় দফায় তাঁদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক (Informal Summit) সারলেন। এর আগে গতকাল (শুক্রবার) এ দেশে এসে প্রধানমন্ত্রী মোদির (PM Narendra Modi) সঙ্গে মহাবলীপুরম মন্দির ঘুরে দেখেন জিনপিং, যা বর্তমানে মামাল্লাপুরম নামে পরিচিত, তারপরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। অনুষ্ঠান শেষে নির্ধারিত নৈশভোজও সারেন তাঁরা। শুক্রবার গভীর রাতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, ভারত ও চিন "কট্টরপন্থা ও সন্ত্রাসবাদকে সাধারণ চ্যালেঞ্জ হিসাবে বিবেচনা করে এর বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করার বিষয়ে একমত হয়েছে।" চিনের সরকারি সংবাদসংস্থা সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, শি জিনপিং দুই দেশের জনগণের মধ্যে বৃহত্তর ও গভীর সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বিনিময়ের সুযোগ হিসাবে আগামী বছর চিন-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০ তম বার্ষিকী পালনের জন্য উভয় দেশকেই আহ্বান জানিয়েছে।
Here are top 10 updates on the PM Modi-Xi Jinping meet:
"দু'দেশের মধ্যে প্রতিনিধিদলের পর্যায়ের আলোচনায় হয়েছে। এর আগে উহান সম্মেলন আমাদের বন্ধনকে নতুন গতি ও বিশ্বাস দিয়ে ছিল। এবার 'চেন্নাই কানেক্ট'র মাধ্যমে সেই সহযোগিতার এক নতুন যুগের সূচনা হল", চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি । শনিবার প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং শি জিনপিং তাজ ফিশারম্যানের কোভ রিসর্ট এবং স্পা-তে "মাচান" এ মুখোমুখি বৈঠক করেন। প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনার আগে এই দুই নেতা সমুদ্র সৈকতে একসঙ্গে ঘুরে বেড়ালেন এবং একটি ফলপ্রসূ আলোচনাও করলেন।প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং শি গল্ফ কার্টে একসঙ্গে ঘুরে বেড়ালেন।
এর আগে শুক্রবার সন্ধেবেলায় দুই রাষ্ট্রনেতাই দোভাষীর সাহায্যে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি সহ স্থানীয় বিভিন্ন তামিল খাবারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিদেশসচিব বিজয় গোখলে এক বিবৃতিতে বলেন, "এই আলোচনা প্রায় দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলেছে এবং বৈঠকের জন্য পরিকল্পিত সময়ের থেকে বেশি সময় ধরে এটি চলেছে।আলোচনাটি খুব উন্মুক্ত ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল যখন দুই নেতাই একে অপরের সঙ্গে ভাল সময় কাটিয়েছেন" ।
"আপনার আতিথেয়তায় আমরা সত্যিই অভিভূত হয়েছি। আমি এবং আমার সহকর্মীরা খুব নিবিড় বন্ধন অনুভব করছি এই দেশের সঙ্গে। এই সফর আমার এবং আমাদের জন্য একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হবে," আজ (শনিবার) বলেন শি জিনপিং ।
শুক্রবার সন্ধেবেলায়, প্রধানমন্ত্রী ভেস্তির তামিল পোশাকে, সাদা শার্ট এবং একটি 'অঙ্গবস্ত্র' পরে, শি'কে সঙ্গে নিয়ে অর্জুনের তপস্যা, কৃষ্ণের বাটারবল, পঞ্চ রথ এবং মন্দিরের সমস্ত ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলি ঘুরে দেখান। প্রাচীন মন্দির শহর থেকেই, দুই নেতার মধ্যে দ্বিতীয় অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলনের সূচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদির উহান সফরকালে শি জিনপিং তাঁকে হুবেই প্রাদেশিক যাদুঘরের ব্যক্তিগত সফর করান।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রভীশ কুমার অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রী মোদি ও শি জিনপিং একসঙ্গে যথেষ্ট ভাল সময় কাটিয়েছেন বলে বর্ণনা করেন।
শি জিনপিং বলেছেন, প্রাচীন কাল থেকেই তামিলনাড়ুর সঙ্গে চিনের পারস্পরিক মত বিনিময় এবং সমুদ্র বাণিজ্য নিয়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে । চিনের প্রেসিডেন্ট দু'দেশকে যৌথভাবে বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে সংলাপ ও মতবিনিময়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান, যাতে "দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিকাশ আরও দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং এশীয় সভ্যতার জন্য নতুন গৌরব অর্জন করা যায়" ।
শি জিনপিং শুক্রবার বিকেলে এয়ার চায়না বোয়িং ৭৪৭ বিমানে চড়ে ভারতে আসেন। তাঁকে চেন্নাইয়ে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ই কে পলানিস্বামী, রাজ্যপাল বানওয়ারিলাল পুরোহিত, তামিলনাড়ু বিধানসভার অধ্যক্ষ পি ধনপাল এবং চিনে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিস্রি। চিনের প্রেসিডেন্টকে সম্মান জানাতে একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং শি জিনপিংয়ের মধ্যে প্রথম অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলন গত বছর ডোকলামে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ৭৩ দিনের চাপানউতোরের কয়েক মাস পরে, চিনের হ্রদ শহর উহানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তিনদিন আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পর এই সফর আসেন চিনের প্রেসিডেন্ট। তার আগে প্রেসিডেন্ট শি ও ইমরান খানের বৈঠকের শেষে একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যার সমাধান "রাষ্ট্রসংঘের সনদ, রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রাসঙ্গিক প্রস্তাব এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে" যথাযথ ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা উচিত।
এই বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় ভারত জানায়, "চিন ভারতের অবস্থান সম্পর্কে ভালভাবেই জানে এবং "অন্য কোনও দেশের ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়"। সরকার নিজের অবস্থানে অনড় যে জম্মু ও কাশ্মীর পদক্ষেপ এবং লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে পরিণত করার বিষয়টি একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়।
Post a comment