মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আমরা রাজ্যে এনআরসি ও ক্যা রাজ্যে চালু করতে দেব না।’’
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন (Citizenship Act) এবং এনআরসির প্রতিবাদে রেড রোড থেকে শুরু হয়েছে তৃণমূলের মহামিছিল। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে শেষ হবে এই মিছিল। গত বুধবার রাজ্যসভায় পাস হয়ে গিয়েছে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল। তারপর থেকেই রাজ্যজুড়ে এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে শুরু হয় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ। বহু জায়গায় রাস্তা অবরোধ করার পাশাপাশি স্টেশনে ও ট্রেনে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে সোমবার মহামিছিলের ডাক দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আমরা রাজ্যে এনআরসি ও সিএএ রাজ্যে চালু করতে দেব না।'' এদিনের মিছিলে যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার দলীয় কর্মী।
সোমবার বাবাসাহেব আম্বেদকরের মূর্তিতে মালা পরিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর তিনি জানান, ‘‘আমরা সবাই নাগরিক। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য আমাদের আদর্শ। আমরা কাউকে বাংলা ছাড়তে দেব না। আমরা এনআরসি ও সিএএ-কে বাংলায় ঢুকতে দেব না। আমাদের শান্তি বজায় রাখতে হবে।''
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাজ্যে শুরু হওয়া হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে জানিয়েছেন, ‘‘রাস্তা ও রেল অবরোধ করবেন না। সাধারণ মানুষের হেনস্তা মেনে নেওয়া হবে না। যারা এটা করছে ও হাতে আইন হাতে তুলে নিচ্ছে তাদের ছাড়া হবে না। যারা বাসে আগুন লাগাচ্ছে, ট্রেনে আগুন লাগাচ্ছে ও জনতার সম্পত্তি নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।''
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী টুইট করে সোমবারের ‘‘মহামিছিলের'' কথা ঘোষণা করার পরই রাজ্যপাল টুইট করে জানিয়ে দেন তিনি ‘‘অত্যন্ত বিরক্ত'' এই ‘‘অসাংবিধানিক'' কাজে। তিনি টুইট করে জানান, ‘‘আমি অত্যন্ত বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীদের ক্যা-র বিরুদ্ধে মিছিল করার সিদ্ধান্তে। এটা অসাংবিধানিক। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে এই অসাংবিধানিক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলছি এই সঙ্কট মুহূর্তে এবং এই মারাত্মক পরিস্থিতিকে শুধরানোর জন্য বলছি।''
এর আগে মুখ্যমন্ত্রী জনগণের উদ্দেশে আর্জি জানান ‘‘অসাংবিধানিক'' নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলের বিরুদ্ধে মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য। তিনি টুইট করে জানান, ‘‘এক মহামিছিল আজ কলকাতায় হতে চলেছে অসাংবিধানিক ক্যাব এবং এনআরসির বিরুদ্ধে। বাবাসাহেব আম্বেদকরের মূর্তির কাছে রেড রোডে এই মিছিল শুরু হবে বেলা একটায়। শেষ হবে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি গিয়ে। আসুন, আমরা সবাই, সমাজের সব স্তর থেকে যোগ দিন শান্তিপূর্ণ ভাবে আইন মেনে জনগণের এই আন্দোলনে।''
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে রাজ্যে শুরু হওয়া হিংসাত্মক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বহু জায়গার ইন্টারনেট বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়েছে। মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর ও হাওড়া জেলা ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত ও বসিরহাট মহকুমা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর ও ক্যানিং মহকুমাতেও বন্ধ ইন্টারনেট।
নতুন নাগরিকত্ব আইনে ২০১৫ সালের আগে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আগত অমুসলিম নাগরিকদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।