কাশতে কাশতে তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে প্রায় ছয় ইঞ্চি মাপের একটি রক্তশিরা আকারের সার্কিট
সানফ্রান্সিসকো ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের কাছে হৃদরোগের সমস্যা নিয়েই হাজির হয়েছিলেন এই রোগী। তাঁকে সুস্থ করে তোলার সব রকমের ব্যবস্থাই নিয়েছিলেন চিকিৎসকেরাও। কিন্তু এমন অবাক করা জিনিসের মুখোমুখি হতে হবে এ তাঁরা স্বপ্নেও ভাবেননি।
শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলিতে রক্ত সঞ্চালনের জন্য ডাক্তাররা রোগীর পায়ের ধমনীর মাধ্যমে একটি হৃদপাম্প প্রবেশ করান। কিন্তু এই কৌশলটির একটি নেতিবাচক দিক রয়েছে। এই পদ্ধতিতে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। তাই ডাক্তাররা রক্ত পাতলা করার জন্য অ্যান্টিক্লোগুট্যান্ট দেন এই রোগীকে। কিন্তু শরীরে বায়ুচলাচল কমে যেতে থাকে।
"বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক সার্জারির সহকর্মী গ্যাভিট উডার্ড ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, "ওষুধ চলা সত্ত্বেও ধীরে ধীরে ভেতরে রক্তপাত হছিল।" আসলে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। রোগী মাঝে মাঝেই কেশে সেই জমাট বাঁধা রক্ত বের করে ফেলতেন। প্রথমে ছোট পোকার মতো আকারে বেরিয়ে আসত কয়েক সেন্টিমিটারের নলাকার ওই জমাট বাঁধা রক্তপিণ্ডগুলি। তারপর রোগীর বেশ জোরে কাশি শুরু হয়। কাশতে কাশতে তাঁর মুখ দিয়ে যা বেরিয়ে আসে তা হল প্রায় ছয় ইঞ্চি মাপের একটি রক্তশিরা আকারের সার্কিট। সহকর্মী চিকিত্সক জর্জ উইসেলথালার একটি সার্জিক্যাল তোয়ালেতে এই জমাট রক্তটি সাবধানে রেখে দেন।
কাশতে গিয়ে যা বেরিয়ে এল রোগীর ভেতর থেকে তা দেখে রীতিমতো হতভম্ভ হয়ে যান চিকিৎসকেরা। রোগীর ডান ব্রোঙ্কিয়াল শিরার মধ্যে রক্ত জমে ছিল। এই শিরাগুলির মধ্য দিয়েই ফুসফুসের মধ্যে হাওয়া প্রবেশ করে। রক্ত সেই শিরা উপশিরাতে জমাট বেঁধে গাছে ডালের মতো আঁকার নেয়, থকথকে জেলির মতো বেরিয়ে আসে সেটই। উডার্ড বলেন, "আমাদের দলের কেউই এর আগে এমন কিছু কখনও দেখেননি।"
ঘটনার দুই দিন পর ৩৬ বছর বয়সী রোগীকে ইনকিউবেটেড করা হয়। যদিও উডার্ড রোগীর পরিচয়ের গোপনীয়তার কারণেই বিশেষ তথ্য জানাতে অস্বীকার করেন।
উডার্ড জানান, এক সপ্তাহ পরই রোগী মারা যান। কিন্তু তাঁর মৃত্যু এই ঘটনার সাথে সম্পর্কিত নয়। তিনি গুরুতর অবস্থার এসেছিলেন। কেশে কেশে যে রক্ত তিনি বের করেছেন তা ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছিল।
তিনি আরও বলেন, "কোষটি গবেষকদের চিকিৎসা জ্ঞানের অগ্রগতিতে সহায়তা করবে না ঠিকই, কিন্তু এটা অসম্ভব সুন্দর একটি অ্যানাটমি, ঘটনা টা দুঃখজনক ঠিকই। কিন্তু এই ছবিটা সত্যিই অসাধারণ!”
২৯ শে নভেম্বর নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে এই ছবিটি চিকিৎসা সংক্রান্ত জার্নালগুলি বিষয়ে মানুষের আগ্রহও বাড়িয়ে তুলেছে।
মানব দেহ যে কী ভীষণ জটিল তা বোঝার জন্য এই চাপবদ্ধ রক্তপিণ্ডটাই যথেষ্ট। মাইক্রোস্কোপের নিচে রাখতেই এর প্রতিটা বিভাগ, গঠন আর গ্রথন স্পষ্ট হয়ে উঠছিল, জানান উডার্ড।
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদিত করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে.)