অমিল অ্যাম্বুলেন্স। মরণাপন্ন রোগীকে স্কুটারে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে গিয়ে প্রাণ হারালেন একই শহরের দুই প্রবীণ! আত্মীয়দের মরদেহ চাপিয়ে দু'চাকার গাড়িতে মধ্যপ্রদেশের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরেছেন পরিবার। দু'টি ক্ষেত্রেই COVID-19 আক্রান্ত সন্দেহ করায় হাসপাতালের তরফে অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ। প্রথম ঘটনা ইন্দোরের বাদওয়ালি চৌকির বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী পান্ডু চন্দনের। শহরের করোনাভাইরাস সংক্রামিত অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম এই এলাকাটি। শ্বাস নিতে অসুবিধে হওয়ায় সোমবার হাসপাতালে যান পান্ডু। তার ভাইয়ের কথায়, সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা কেবল কিছু ওষুধ লিখে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
পরের দিন, পান্ডুর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তার পরিবার একটি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য হাসপাতালে ফোন করলে হাসপাতাল তা পাঠাতে অস্বীকার করে বলে অভিযোগ। কোনও উপায় না রেখে পরিবারের সদস্যরা তাকে দ্রুত একটি স্কুটারে করে রাজ্য পরিচালিত মহারাহা যশবন্তরাও (এমওয়াই) হাসপাতালের বহির্বিভাগে (ওপিডি) নিয়ে যান।
দুর্ভাগ্যক্রমে হাসপাতালে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। যদিও, পরিবারের অভিযোগ খণ্ডন করেছেন ইন্দোরের চিফ মেডিকেল অফিসার ডাঃ প্রবীণ জাদিয়া। জাদিয়া বলেন, “লোকটি সোমবার হাসপাতালে আসে, সেদিন বাড়িও ফিরে যায়। মঙ্গলবার তাকে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে তাকে এমওয়াই হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে আসার আগেই তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।”
এমওয়াই হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট পিএস ঠাকুর এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান যে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের ওই পরিবারের সদস্যদের কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করতে বলা হয়।
Coronavirus: মধ্য প্রদেশের খান্দোয়া জেলার খড়কপুরাকেও সংক্রামিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে খান্দোয়া জেলার খড়কপুরা এলাকায়। সূত্রের খবর, বছর ৬৫-র শেখ হামিদও অ্যাম্বুলেন্স পাননি। রক্তে শর্করার সমস্যা এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগা হামিদকে অবশেষে তাকে স্কুটারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তবে পৌঁছনোর আগে স্কুটারেই তিনি মারা যান।
খড়কপুরা এলাকায় এখন ১৪ টি COVID-19-এর ঘটনা রয়েছে এবং একে সংক্রামিত এলাকা হিসাবেই ঘোষণা করা হয়েছে।
ইন্দোরের ঘটনাটি রাজনৈতিক মহলেও ঝড় তুলেছে। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ যাদব মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে “আপনার স্বপ্নের শহর – ইন্দোর”-এর স্বাস্থ্য সঙ্কটে আরও মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অরুণ যাদব টুইট করেন, “শিবরাজ সিংজি, আপনি নিজের ইচ্ছামতো প্রশংসা করতে পারেন। তবে আপনার স্বপ্নের শহর ইন্দোরের এই ভিডিওটি দেখুন- এই রোগী তিনটি হাসপাতালে দৌড়েছে, তাও অ্যাম্বুলেন্স পায়নি এবং পেয়েছে কেবল ‘মৃত্যু'! তার মরদেহ স্কুটিতে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়!” রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র রজনীশ অগরওয়াল পালটা আক্রমণে বলেন, “তথ্য না জেনেই বন্দুক নিয়ে নেমে পড়া কংগ্রেসের অভ্যাস। যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। সরকার এই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।”
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ রাজ্যগুলির মধ্যেই রয়েছে মধ্যপ্রদেশ, যেখানে ৫৩ জন মারা গিয়েছেন এবং প্রায় ৯০০ জন COVID-19 আক্রান্ত। যেখানে এই ঘটনাটি ঘটেছিল, সেই ইন্দোরেই গত ২৪ ঘণ্টায় ২০০ টিরও বেশি আক্রান্তের ঘটনা সামনে এসেছে, যা সারা রাজ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ।
ভারতজুড়ে COVID-19 আক্রান্তের সংখ্যা ১১,০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং ৩৭৭ জন মারা গিয়েছেন এই ভাইরাসের কবলে পড়ে। বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১৯.৮ লক্ষ এবং মৃত ১.২৬ লক্ষ।
World
India
State & District Details
State | Cases | Active | Recovered | Deaths |
---|