This Article is From Nov 18, 2019

“গভীর সন্দেহ দূর করতে হবে...” প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন মনমোহন সিং-এর

Manmohan Singh's Editorial: মনমোহন সিং-এর যুক্তি “ভীতির পরিবেশ, অবিশ্বাস এবং মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব” আর্থিক গতি শ্লথের অন্যতম কারণ

“গভীর সন্দেহ দূর করতে হবে...” প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন মনমোহন সিং-এর

মনমোহন সিং-এর সম্পাদকীটি সোমবার প্রকাশিত হয় (ফাইল)

নয়াদিল্লি:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) উচিত “শিল্পপতি এবং উদ্যোগপতিদের প্রতি গভীর সন্দেহ” দূর করা,  যে কারণে দেশের অর্থনৈতিক গতি শ্লথ হয়েছে এবং সামাজিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে, দ্য হিন্দু পত্রিকার সম্পাদকীয়তে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এভাবেই আক্রমণ শানালেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং (Manmohan Singh) । সোমবার ওই পত্রিকায় প্রকাশিত হয় “দ্য ফাউন্টেইন হেডঅফ ইন্ডিয়াস ইকোনমিক ম্যালাসাইজ” বা “ভারতের অর্থনৈতিক অস্থিরতার উৎস” শীর্ষকে লেখা ওই নিবন্ধে প্রাক্তন প্রধামন্ত্রী লেখেন, “গভীর অবিশ্বাসের বিষাক্ত সমন্বয়, ব্যাপক ভীতি এবং আমাদের সমাজে আশাহত হওয়ার মানসিকতা আর্থিক কার্যকারিতার কণ্ঠরোধ করছে, এবং যার কারণে আর্থিক গতিও”।

মনমোহন সিং লেখেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন করব, শিল্পপতি ও উদ্যোগপতিদের থেকে সন্দেহ দূরে রাখতে এবং আমাদের মধ্যে বিশ্বাস ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে এবং বিশ্বাসী  সমাজ তৈরি করতে হবে, যাতে আমরা স্বাভাবিক প্রফুল্লতা ফিরে পাই এবং আর্থিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারি”।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, উদ্বেগজনক হওয়ার কারণ, ১৫ বছরে সবচেয়ে কম জিডিপি, ৪৫ বছরে সবচেয়ে বেশী কর্মহীনতা, চার দশকে পারিবারিক খরচ সবচেয়ে কম হওয়া, অপরিশোধিত ঋণ, এবং ১৫ বছরে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ-এর ব্যবহার। তিনি লেখেন, “এগুলো গভীর নীচে চলে যাওয়ার প্রকাশ, যার ফলে, দেশের অর্থনীতি আজ এই জায়গায়”।

ভয়, অসহায়তা, এবং সন্দেহ শব্দগুলি ব্যবহার করে তাঁর যুক্তিজাল বিছিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।

মনমোহন সিং লেখেন, সমাজের বিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাসের কাঠামো ছিন্ন হয়েছে এবং ভেঙে পড়েছে। তাঁর কথায়, সমাজে “প্রতীয়মান ভয়ের আবহাওয়া রয়েছে”। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, এগুলির কারণ মোদি সরকারের ‘অন্যভাবে প্রমাণিত না হলে বিশ্বাসঘাতক' নীতির ফলে এই পরিস্থিতি।

তাঁর প্রস্তাব, “ভীতির বিপজ্জনক পরিস্থিতি, অবিশ্বাস এবং মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব”, আর্থিক গতি শ্লথ হওয়ার অন্যতম কারণ।

মনমোহন সিং লেখেন, “অনেক শিল্পপতিই আমায় বলেছেন, সরকারি সংস্থার হেনস্থার ভয় রয়েছে তাঁদের। নতুন ঋণ দিতে অনিচ্ছুক ব্যাঙ্কাররা। নতুন প্রকল্প আনতে ইতস্তত করছেন উদ্যোগপতিরা, ভবিষ্যতের ভয়ে তাঁরা এগুলো করছেন। প্রযুক্তির স্টার্ট-আপ, আর্থিক বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের একটি নতুন দিশা, সেটিও লাগাতার নজরদারিতে রয়েছে এবং গভীর সন্দেহের আবহাওয়ায়। সরকারের নীতি নির্ধারকরা সত্য কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন অথবা বুদ্ধিদীপ্তভাবে সৎ নীতির আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।  এগুলি গভীর ভীতি এবং অবিশ্বাস, যাঁরা আর্থিক বৃদ্ধির অংশ তাঁদের মধ্যেই রয়েছে”।  

এই স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ লেখেন, “সন্দেহ যে, প্রত্যেক শিল্পপতি, ব্যাঙ্কার, নীতি নির্ধারক, নিয়ন্ত্রক, উদ্যোগপতি এবং নাগরিক সরকারকে প্রতারণা করবে, এর ফলে আমাদের সমাজে বিশ্বাস নষ্ট হয়েছে। এটিই অর্থনৈতিক উন্নতিকে থামিয়ে দিয়েছে, ঋণ দিতে অক্ষম ব্যাঙ্কার, বিনিয়োগে অক্ষম শিল্পপতি, কাজ করতে অক্ষম নীতি নির্ধারক”।

নোটবন্দির প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লেখেন, নিজেকে কোনও ত্রাণকর্তা হিসেবে তুলে ধরেছে সরকার, “নোট বাতিল, যেটি সঠিক ভাবনাচিন্তার নয় এবং সর্বনাশা, সেরকম হঠকারী  নীতি পুলিশি ফিরিয়ে আনছে”। মনমোহন সিং লেখেন, “সবাইকে খারাপ ভাবা, এবং ‘ভাল-বনাম খারাপের সরকার' নীতি ভাল আর্থিক বৃদ্ধির উপকরণ হতে পারে না”।

চাহিদা খারাপ থাকলে এবং তারসঙ্গে ব্যাপক কর্মহীনতা থাকলে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।

চিনের আর্থিক মন্দার প্রসঙ্গ টেনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লেখেন, সেটি ভারতের রফতানির বড় সুযোগ। মনমোহন সিং লেখেন, “ভারতের উচিত, এই রফতানির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হাতির সমান ভাণ্ডার তৈরি করা, এটি হবে আত্মবিশ্বাসের পরিবেশ এবং আর্থিক গতিশীলতা ফিরিয়ে এনে, বর্তমানে ভয়ের পরিবেশ, অবিশ্বাস এবং হতাশা দূর করতে হবে”।

.