উত্তর-পূর্ব দিল্লির মৌজপুরে পাথর ছোঁড়া এবং হিংসার ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকা, সংঘর্ষে মৃত্যু হল এক পুলিশ আধিকারিক এবং এক সাধারণ নাগরিকের। উত্তর পূর্ব দিল্লিতে সংঘর্ষে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে ২৪ ঘন্টায় দ্বিতীয়বার রণক্ষেত্রের চেহারা নিল রাজধানীর রাজপথ। নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে এবং বিপক্ষে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পাথর ছোঁড়া, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, এবং দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল, ফলে রণক্ষেত্রে পরিণত হল দিল্লির বিভিন্ন এলাকা। যার ফলে এদিন নামানো হয় আধা সামরিক বাহিনী এবং ওই সমস্ত এলাকায় বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এদিন সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের তরফে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। রবিবার বিকেলে জাফরাবাদে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে, শনিবার রাতে সেখানে জড়ো হন প্রায় শতাধিক মহিলা এবং নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।
এখানে রইল ১০'টি তথ্য:
করদমপুরিতে নিহত নাগরিকের মাথায় আঘাত করা হয়েছে বলে জানায় দিল্লি পুলিশ। চাঁদবাগে নিহত হন হেড কনস্টেবল রতন লাল, গোকুলপুরিতে এক ডেপুটি পুলিশ কমিশনার আহত হন।
দিনভর অশান্তির ভিডিও প্রকাশ্যে আসে, এদিন সন্ধ্যায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, গোকুলপুরির টায়ারের বাজারে আগুন জ্বলছে। অশান্তির আরেকটি ভিডিওতে যেটি ভজনপুরা, মৌজপুর, জাফরাবাদে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটিতে যানবাহন, দোকানপাটে আগুন জ্বলতে দেখা গিয়েছে। ভজনপুরায় একটি পেট্রোলপাম্পে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা পেট্রোল বোমা ছুঁড়লে আগুন ধরে যায়।
জাফরাবাদে লাল শার্ট পড়া এক ব্যক্তিকে নিরস্ত্র দিল্লি পুলিশ আধিকারিকের দিকে যেতে দেখা গিয়েছে, শনিবার রাতে জাফরাবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন প্রায় ১,০০০ এর বেশি মহিলা। তার হাতে বন্দুক ছিল বলে দেখা গিয়েছে। অন্য একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, কংক্রিটের ডিভাইডার ভেঙে একে অপরের দিকে ছুঁড়তে দেখা গিয়েছে। একটি ভিডিও দেখে “জয় শ্রী রাম স্লোগান” শোনা গিয়েছে।
প্রথমে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় পুলিশ। পরে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ায় আধা সামরাকি বাহিনী মোতায়েন করা হয়। খাজোরি খাসে রাপ নামানো হয়. ভজনপুরা থেকে ওই এলাকাটি ১০ কিলোমিটার দূরে। দিল্লি মেট্রোর তরফে জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবারপুর, গোকুলপুরি, জোহরি এনক্লেভ এবং শিববিহার স্টেশনে পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
১৪৪ ধারায় উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়াও দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের বাইরেও ১৪৪ ধারা মোতায়েন করা হয়, এদিন জেএনইউ এর পড়ুয়ারা “সংঘী পুলিশের, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ওপর নির্মম আচরণ এবং উত্তরপূর্ব দিল্লিতে অশান্তি”র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
দিল্লি পুলিশ আধিকারিকের মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অশান্তির ঘটনাকে “খুবই দুঃখজনক” বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। পাশাপাশি “আইনশৃঙ্খলা ফেরানো এবং শান্তি ও সম্প্রীতি ফেরানোর” জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আর্জি জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লি পুলিশ রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনেই।
দিল্লির উপরাজ্যপাল অনিল বায়জল বলেন, তিনি “আইনশৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন”। তাঁর কথায়, “পরিস্থিতির দিকে খুবই নজর রাখা হচ্ছে। আমি সবাইকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানাচ্ছি”।
এদিন সন্ধ্যে ৭.৩০টার কিছুক্ষণ আগে দিল্লি পৌঁছান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনায় তিনি ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা তুলতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে, আহমেদাবাদের সর্দার প্যাটেল স্টেডিয়ামে ভারতকে ‘সমস্ত ধর্ম হিন্দু, মুসলিম...বিভিন্ন ধর্মালম্বীর দেশ” বলে মন্তব্য করেন।
রবিবার, মৌজপুরে নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে সভা করেন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র, তারপরেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দিল্লি পুলিশকে “চূড়ান্ত সময়সীমা” দিয়েছেন তিনি।
রবিবার উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। দোকানের একটি অংশে আগুন লেগে ধরে যায়, অন্তত দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়, এবং পুলিশ আধিকারিকদের কয়েকজন আহত হন।
Post a comment