মীরাটে সাম্প্রদায়িক প্ররোচনামূলক মন্তব্য করতে শোনা যায় পুলিশ অফিসার অখিলেশ নারায়ণ সিংকে
লখনউ: নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় অন্যতম সংবেদনশীল শহরের তালিকায় রয়েছে পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মীরাট (Meerut, Uttar Pradesh)। সেই মীরাটেই গত শুক্রবার একটি মুসলিম প্রধান এলাকায় গিয়ে অত্যন্ত সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করতে শোনা গেল এক উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে! নাগরিকত্ব আইনের বিষয়ে শুক্রবারের নামাজের পরে নতুন করে শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই বিক্ষোভকে সামাল দিতে গিয়েই সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেন ওই পুলিশকর্মী, যা ধরা পড়েছে ভিডিওতে! NDTV-র হাতে আসা একটি মোবাইল ফোনের ভিডিওতে, মীরাটের পুলিশ সুপার (Superintendent of Police) অখিলেশ নারায়ণ সিং (Akhilesh Narayan Singh), অর্থাৎ জেলা পুলিশের দ্বিতীয় কমান্ডকে রায়ট গিয়ার পরে সরু গলিতে হাঁটতে দেখা যায়। রায়ট গিয়ার পরা আরও কয়েকজন পুলিশকেও তাঁর সঙ্গে হাঁটতে দেখা যায়।
অখিলেশ নারায়ণ সিং এমন জায়গায় থামেন যেখানে ফেজ টুপি পরা কয়েকজন মুসলিম পুরুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন। ২ মিনিটেরও কম ওই ভিডিওতে অখিলেশকে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা দু'জনের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, “কাঁহা যাওগে? ইস গলি কো ম্যায় ঠিক করুঙ্গা।” “আমরা কেবল আমাদের নামাজ পড়ছিলাম,” তাদের মধ্যে থেকেই একজন জবাব দেয়। “সে ঠিক আছে। নাহলে আপনাদের যারা যে কালো আর নীল ব্যাজ পরে আছেন, তাদের পাকিস্তানে চলে যেতে বলুন,” বলেন ওই পুলিশ কর্তা।
এখানেই শেষ না, সাম্প্রদায়িক মন্তব্য অব্যাহত রাখেন এই পুলিশ কর্তা, তিনি আরও বলেন, “দেশ মে আগর নহিঁ রেহনে কা মন হ্যায় তো চলে যাও ভাইয়া। আওগে ইয়াঁহা অউর হোগে কহিঁন অউর কা!” পুলিশকর্তার চারপাশে থাকা তিনজন মুসলিম পুরুষ কেবল বিড়বিড় করেন: “আপনি ঠিক বলেছেন”।
ভিডিওতে দেখা যায় অখিলেশ সিং এবং অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা তারপর এগিয়ে যেতে শুরু করেন তবে বেশ ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতেই অফিসার কমপক্ষে তিনবার ওই মুসলিমদের কাছে ফিরে এসে বলেন, “এক এক ঘরকে এক এক আদমি কো জেল মে ভর দুঙ্গা ম্যায়।” একেবারে শেষে তাকে বলতে শোনা যায়, “আমি সবাইকে শেষ করে দেব।"
কোন পরিস্থিতিতে এই কর্মকর্তার এমন সাম্প্রদায়িক প্ররোচনা দিয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে অখিলেশ বলেছেন, “প্রসঙ্গটি হ'ল অসামাজিক কিছু মানুষ পাকিস্তানপন্থী বক্তব্য দিচ্ছিলেন। আমরা সবাই ওখানে দেখতে এসেছিলাম কারা কারা পাকিস্তানপন্থী বক্তব্য রাখছে।”
মীরাট পুলিশ আরও জানিয়েছে যে গত শুক্রবার বিক্ষোভকারীদের পাথর ছোঁড়া আর হিংসার মুখোমুখি হয়েছিল পুলিশ। ছয়জনের মৃত্যু ঘটেছে এই এলাকায়। নাগরিকত্ব আইনের বিক্ষোভ চলাকালীন হিংসায় মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা রাজ্য জুড়ে যে কোনও স্থানের চেয়ে সবচেয়ে বেশি পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের এই শহরে। নিহতদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। যদিও মীরাট পুলিশ অবশ্য গুলি চালানোর কথা অস্বীকারই করেছে।