“তিনি নিঃসঙ্গতাকেও বাঙ্ময় করে তুলেছিলেন”, তাঁর সম্বন্ধে এই কথা বলেছিলেন ‘আ হাউজ ফর মিঃ বিশ্বাস’-এর লেখক বিদ্যাধর সুরজপ্রসাদ নইপল। নিঃসঙ্গতা এবং নৈঃশব্দ্য তাঁর গল্পের প্রতিটি অক্ষরের যেন আপৎকালীন বান্ধব।
একটি শিশুর বিকেলবেলার একলা হাসি বা পাতাঝরার মরশুমের শেষ পাতাটির নিঃশব্দে ঝরে পড়া কিংবা চারপাশের তীব্র তুষারপাতের মধ্যে বসে কোনও বৃদ্ধের কফির কাপে বিষণ্ণ চুমুক- কোনওকিছুই নজর এড়ায় না তাঁর কলমটির। সবকিছুর ওপরেই একটি প্রায়-অলৌকিক স্নেহের আঙুলই যেন নেমে আসে...তিনি রাস্কিন বন্ড। ভারতে বসে সৃষ্টি করা ইংরেজি সাহিত্যের প্রথম এবং অনিবার্য প্রবাদপুরুষ। সম্প্রতি এসেছিলেন কলকাতায়। দক্ষিণ কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা ‘রত্না সাগর’ আয়োজিত একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানটির নাম- মেমোরেবল মোমেন্টস উইদ রাস্কিন বন্ড।
প্রথম উপন্যাস লেখার পর পেরিয়ে গিয়েছে সাতষট্টি বছরের দীর্ঘ সময়। তবু, চুরাশি বছর বয়সেও কথা বলতে ভালোবাসেন তিনি। বলে যান একমনে, অনর্গল। কথা শুনতে শুনতে মনে হয়, নিজের প্রত্যেকটি স্মৃতিচারণকে অমোঘভাবে স্পর্শ করছেন তিনি। কথার মধ্যে তাঁর মার্জিত রসিকতাবোধ পাঁচতারা হোটেলের হলঘরে নামিয়ে আনল হাসির রোল। রাজ্যের 220টি স্কুল থেকে প্রায় সাড়ে চারশো প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিল এই অনুষ্ঠানটিতে। তাঁদের মধ্যে যেমন বিভিন্ন স্কুলের অধ্যক্ষ, সহ অধ্যক্ষ বা প্রধানশিক্ষক কিংবা ইংরেজির শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছিলেন, তেমনই ছিলেন অতি উৎসাহী রাস্কিন বন্ডের ভক্ত তরুণ প্রজন্ম এবং স্কুলের বাছাই করা পড়ুয়ারাও
অল্পবয়সীদের সঙ্গে কথা বলতে তিনি ভালোবাসেন। বিচ্ছিন্নতা, প্রবহমানতা, নিরপেক্ষতা ও মায়া তাঁর কথনকে দেয় বিশিষ্টতা। অথচ তাঁর নিজের কথায়, আমি একদম ভালো বলতে পারি না! যদিও, কথা শুনতে শুনতে সে সব আর মনে থাকে না। তাঁর কথাচ্ছলে বলা গল্পগুলির সামনে দাঁড়িয়ে লেখকের কথাই ভুলে যাই আমরা। মনে হয়, লেখককে পার্শ্বরেখার অনন্তে সরিয়ে দিয়ে তাঁর বলা কথাগুলিই যেন নিজেরাই হয়ে উঠতে চাইছে।
কথার হাত ধরেই কখন যে শহরে সন্ধে নেমে আসে! অনুষ্ঠানটিও তার নিজের নিয়মেই শেষ হয় এক সময়। তবু, মন ভরে না। মনে হয়, আরো হোক। এমন অমূল্য কথোপকথনের আসর এই শহরের আরও বেশি করে দরকার।