শপথ গ্রহণের সময় নুসরতের সিঁথিতে সিঁদুর, হাতে চুড়া
হাইলাইটস
- সংসদে শাঁখা, সিঁদুর পরে দেখা গেছে নুসরত জাহানকে
- ১৯ জুন তিনি বিয়ে করেছেন ব্যবয়াসী নিখিল জৈনকে
- কিছু মুসলিম ধর্মগুরু সাজ-পোশাক নিয়ে ফতোয়া জারি করেছেন নুসরতের বিরুদ্ধে
নিউ দিল্লি: দু-হাতের পাতায় মেহেন্দির সূক্ষ্ম কাজ। গলায় মঙ্গলসূত্র। হাত ভর্তি চুড়া। সিঁথি জুড়ে সিঁদুরের লালিমা। পরনে শাড়ি। আঁচল টেনে জড়ানো বুকেপিঠে। ১৯ জুন বিয়ের পর সনাতনী হিন্দু বিবাহিত মেয়ের সাজেই ২৫ জুন লোকসভায় সাংসদের শপথবাক্য পাঠ করেন নুসরত জাহান (Nusrat Jahan)। তাই নিয়েই অসন্তোষ, ক্ষোভ মুসলিম কট্টরন্থীদের মধ্যে। একজন মুসলিম কেন হিন্দুু সাজে সাজবেন? এই সাজ যে ধর্মবিরোধী! বিষয়টি নিয়ে নায়িকা-সাংসদের বিরুদ্ধে মুসলিম ধর্মগুরুরা (Muslim clerics) ফতোয়া জারি করতেই এবার পাশে দাঁড়ালেন আরেক বঙ্গ সাংসদ এবং নুসরতের সতীর্থ মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty)। তিনি টুইটে নুসরতকে সমর্থন করে বলেন, আমরা সবার আগে ভারতীয়। তারপর আমাদের ধর্ম, বিশ্বাস।
আমার পোশাক নিয়ে মন্তব্যের অধিকার কারও নেই: নুসরত
শনিবার রাতে বিষয়টি নিয়ে যদিও মুখ খোলেন তারকা-সাংসদ। তাঁর কথায়, ধর্ম, বিশ্বাসের উর্ধ্বে রাজনীতি। আমার সাজ-পোশাক নিয়ে কারোর কোনও কথা বলার অধিকার নেই। আমাদের দেশ সর্বধর্মসমন্বয়ের দেশ। এখানে সবার নিজের মত, বিশ্বাস নিয়ে চলার স্বাধীনতা আছে।
জাতি-ধর্ম তুলে দেশের রাজনীতিকে আর কলঙ্কিত না করাই মঙ্গল। এমন কড়া ভাষাতেই তাঁর সাজ-পোশাক নিয়ে করা মন্তব্যের সমালোচনা করেন তিনি। তাঁর আর্জি, "এভাবে দেশের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করবেন না।"
প্রসঙ্গত, ১৯ জুন তুরস্কে ব্যবসায়ী নিখিল জৈনকে বিয়ে করেন নুসরত। স্বাভাবিক ভাবেই বিয়ের পর তিনি হিন্দু হয়েছেন। সেই হিসেবে তাঁর এই সাজ পরিবর্তন। কিন্তু পুরো বিষয়টিকে একেবারেই ভালো চোখে দেখেননি উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দের একদল মুসলিম ধর্মগুরু। নুসরতকে এই ধরণের বিধর্মী সাজপোশাকের জন্য কড়া ভাষায় নিন্দা করে বলেন, ইসলাম ধর্ম এবং কোরাণের নিয়ম বহির্ভূত কাজ করেছেন নুসরত। কোরাণের কোথাও বলা নেই একজন মুসলিম হিন্দুকে বিয়ে করতে পারবেন। বিয়ের পর হিন্দু নারীর মতোই সাজগোজ করতে পারবেন।
এরপরেই শনিবার রাতে টুইট করেন মিমি। তাঁর দাবি, ভারতে বসবাসকারী সমস্ত নাগরিক আগে ভারতীয়। তারপর তাঁদের জাতি-ধর্ম। দেখুন সেই পোস্ট।
বন্ধুর সমর্থনে মিমির আরও বক্তব্য, "আমি সবসময় নুসরতের পাশে আছি। ও বিয়ের পর সিঁদুর, চুড়া পরবে কিনা সেটা ওর ব্যাপার। এই নিয়ে কারোর, কোনও মন্তব্যই করা উচিত নয়। প্রত্যেকের ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। নুসরতেরও আছে। এর আগে আমরা জিনস পরে ট্রোলড হয়েছি। এভাবে মেয়েদের অসম্মান করছেন কেন? আমরা তো দেশ এবং দেশবাসীর প্রতিনিধি হয়েই সংসদ ভবনে পা রেখেছি!" প্রসঙ্গত, দুই সাংসদই এর আগে ক্যআজুয়াল পোশাক পরে সাংসদ ভবন চত্বরে ছবি তোলায় ট্রোলড হয়েছিলেন।
সেই সময়েও মিমি সমালোচকদের মুখে ঝামা ঘষে জানতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর যদি ক্যাজুয়াল পোশাকে সংসদে যেতে পারেন তাহলে আমরা পারব না কেন? উনি পুরুষ বলে সাত খুন মাপ। আমরা মেয়ে বলেই এত সমালোচনা!
মিমি মুখ খোলার পরেই নুসরতকে সমর্থন জানিয়ে ফতোয়ার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর যুক্তি, "কেউ এভাবে ব্যক্তি স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারেন না। আমি সংসদে নুসরতকে দেখেছি, চুড়া, সিঁদুর, শাড়ি পরে এসেছিলেন তিনি। এটা সম্পূর্ণ ওঁর রুচি। এই নিয়ে মুখ খোলা মানে নিজের দেশকেই যেন ছোট করা। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেকেরব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে।''