কলকাতা: শিল্পীরা রাজনৈতিকমনস্ক বেশ কয়েক বছর ধরেই। কিন্তু সরাসরি রাজনীতির রং শিল্পের গায়ে লাগিয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা যেন এখনকার ট্রেন্ড। সেই কথাকে সত্যি করতেই কি আরও একবার শিল্পীদের হাত ধরে বাংলা ছবির দুনিয়ায় প্রকাশ্যে চলে এলে রাজনীতির দখলদারি? অভিযোগ, ফেসবুকে পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের (Aniket Chatterjee) করা একটি মন্তব্যে সরাসরি আঙুল তোলা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী, শাসকদল (TMC) আর দলের সাংসদ দেবের (MP Dev) দিকে। এমনকি তিনি প্রধানমন্ত্রীকেও নাকি ছাড়েননি। আরেক পরিচালক অনীক দত্তের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে প্রথমে দানা বাঁধে বিতর্ক। অনীকের সেই পোস্টকে নক্ক্যারজনক বলে প্রতিবাদ করেন অভিনেত্রী এবং সদ্য বিজেপি-তে যোগ দেওয়া কাঞ্চনা মৈত্র (Kanchana Moitra)। অভিযোগ, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পরেই আচমকা অনিকেত বলেন, 'দেবের টিকি তো বাঁধাই আছে দলের কাছে। কিন্তু আমার টিকি কারোর কাছে বাঁধা নেই'। আর এভাবেই বিতর্ককে সামনে রেখে আরও একবার অভিনয় দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল রাজনীতির (Politics) ছায়া।
দেখুন সেই পোস্ট:
গত ১ অগাস্ট পরিচালক অনীক দত্ত একটি পোস্ট করেন ফেসবুকে। সেই পোস্টে একটি মহিলার সম্বন্ধে আপত্তিজনক ছবি ও মন্তব্য ছিল। ওই পোস্টে নাকি এমনটাই দেখানো হয়েছে যে, এখনও মেয়েদের শরীরই তাদের অ্যাসেট বা সম্পত্তি। কাঞ্চনার দাবি, এই পোস্টটি দেখার পরেই একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে ওই পোস্টের বিরোধিতা করেন অভিনেত্রী। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে পোস্টটি ডিলিটও নাকি করে দেন অনীক। এরপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়ে যায় ওই পোস্ট ঘিরে বিতর্ক। একের পর এক বিরূপ মন্তব্য করতে থাকেন নেটিজেনরা। তখনই বাদানুবাদের সময় নাকি বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন অনিকেত।
দেখুন অনীক দত্তের সেই পোস্ট:
খবর, দেবের আগে নাকি কাঞ্চনার দিকে প্রথমে অভিযোগের আঙুল তোলেন অনিকেত। এবিষয়ে অভিনেত্রীর অভিযোগ, অনীক দত্তের ওই কুরুচিকর পোস্টের প্রতিবাদ জানানোর পরেই আচমকা ওই ওয়ালে অনিকেত চট্টোপাধ্যায় প্রথমে ভর্ৎসনা করেন অনীককে। একই সঙ্গে তিনি কাঞ্চনাকে বলেন, চ্যারিটি ঘরের থেকেই তো শুরু হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রধানমন্ত্রী কেন বিয়ে করেও বউয়ের দায়িত্ব কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছেন, সেই খবর বোধহয় আগে নেওয়া ভালো। সঙ্গে সঙ্গে পরিচালকের সেই কথারও প্রতিবাদ জানিয়ে কাঞ্চনা বলেন, একজন নারী হিসেবে তিনি এই প্রতিবাদ করেছেন। এখানে প্রধানমন্ত্রী বা দল আসছে কেন! তখনই উত্তরে নাকি অনিকেত বলেন, জানি কেন তাঁর কথার যোগ্য জবাব দিতে পারছেন না। কারণ, অভিনেত্রী তাঁর দলের কাছে দায়বদ্ধ।
দেখুন অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের পোস্ট:
কাঞ্চনার দাবি, প্রত্যুত্তরে তিনি পরিচালককে নাম না করেই এক প্রযোজক-অভিনেতার নাম করে বলেন, ওই নায়ককে কাটমানি-রোজভ্যালি-সারদা-নারদা কাণ্ড নিয়ে কোনও মন্তব্য বা প্রতিবাদ করতে বলা হলে তিনি করবেন কী? তিনিও নীরব-ই থাকবেন। তাহলে কি তিনিও কারোর কাছে দায়বদ্ধ? এরপরেই পরিচালক সরাসরি অভিনেতা-সাংসদ দেবের দিকে আঙুল তুলে বলেন, দেব শাসকদলের কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু তিনি কারোর কাছে দায়বদ্ধ নন। তিনি যেমন অনীক দত্তের ছবির প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তেমনি আজও তিনি খোলাখুলি কথা বললেন।
তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে ফের ভাগাভাগি হয়ে গেছে নেটিজেন পাড়া। কিছুজন যেমন কাঞ্চনা মৈত্রের হয়ে কথা বলেছেন, কেউ কেউ মুখ খুলেছেন অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের হয়েও। তবে বেশির ভাগেরই প্রশ্ন, কেউ কোনও প্রতিবাদ করলেই কেন তার গায়ে রাজনীতির রং লেগে যাচ্ছে ইদানিং? সেই দলে কেন সামিল হচ্ছেন শিল্পীরা? তাহলে কি রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে নয়, আগামী দিনে রাজনীতিকে হাতিয়ার করেই এগিয়ে যাবেন শিল্পীমহল?