বাবা আমতের জন্মদিনের স্মরণে গুগল ডুডল
নিউ দিল্লি: বিখ্যাত সমাজকর্মী এবং মানবতাবাদী মুরলিধর দেবীদাস আমতের জীবন ও ভারতের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য তাঁর অসামান্য অবদানের কথা মাথায় রেখেই বিশেষ সম্মান জানিয়েছে গুগল। বাবা আমতের উদ্দেশ্যে বিশেষ ডুডল তৈরি করেছেন তাঁরা।
আজকের ডুডল মূলত একটি স্লাইডশো যা মুরলিধর দেবীদাস আমতের (বাবা আমতে) জীবন ও কাজকেই বর্ণনা করে। বাবা আমতে মানুষের প্রয়োজনে সর্বদা পাশে থেকেছেন সকলের। বিশেষ করে কুষ্ঠ রোগীদের জন্য তাঁর কাজ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয়।
১৯১৪ সালে বাবা আমতে মহারাষ্ট্রের একটি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্বচ্ছলতার মধ্যে মানুষ হওয়া আমতে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং মাত্র ২০ বছর বয়সেই নিজের ফার্ম খোলেন। এমন আভিজাত্যে মানুষ হওয়া সত্ত্বেও, মুরলিধর দেবীদাস আমতে তাঁর শৈশব থেকেই ভারতের শ্রেণি বৈষম্যের বিষয়ে সচেতন ছিলেন। ৩০ বছর বয়সে এসে বাবা আমতে প্র্যাকটিস ছেড়ে দেন এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের উন্নয়নের স্বার্থে লড়াইয়ে নামেন।
কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত এক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার পরে বাবা আমতের জীবন চিরকালের জন্য বদলে যায়। ওই ব্যক্তির নষ্ট হয়ে যেতে থাকা শরীর দেখে তীব্র ভয় পান আমতে। এই ভয়ের মোকাবিলা করতে গিয়েই বাবা আমতে "মানসিক কুষ্ঠরোগ" চিহ্নিত করতে পারেন। এ এমন রোগ যা মানুষকে করুণা, ভালোবাসার মতো সমস্ত শুভবোধ থেকে সরিয়ে তাঁকে আস্তে আস্তে পচিয়ে ফেলে। তিনি বলতেন, “সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রোগটি অঙ্গহানির রোগ নয় আসলে। বরং দয়া ও করুণা অনুভব করতে যে শক্তি লাগে তা হারানোটাই আসল রোগ।”
কুষ্ঠ রোগীদের প্রতি সামাজিক মনোভাব বদলাতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। প্রমাণ করেন যে এই রোগটি অত্যন্ত সংক্রামক নয়। ১৯৪৯ সালে তিনি আনন্দবন প্রতিষ্ঠা করেন। আনন্দ বন অর্থাৎ "আশীর্বাদের বন"। এটি একটি স্ব-পর্যাপ্ত গ্রাম এবং কুষ্ঠ রোগীদের পুনর্বাসনের কেন্দ্র।
জাতীয় ঐক্যের দৃঢ় বিশ্বাসী, বাবা আমতে ১৯৮৫ সালে প্রথম নিট ইন্ডিয়া মার্চ শুরু করেন। ৭২ বছর বয়সে তিনি কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত হেঁটে ভ্রমণ করেন। ভারতে ঐক্য গড়ে তোলার সাধারণ উদ্দেশ্য নিয়ে ৩000 মাইলেরও বেশি দূরত্ব তিনি পদব্রজে যান। জাতীয় দ্বন্দ্বের সময় বাবা আমতের সঙ্গে ৩৫ বছরের কম বয়সী ১০০ জন পুরুষ এবং ১৬ জন নারী যোগ দেন। তিন বছর পর তিনি দ্বিতীয় মার্চের আয়োজন করেন। আসাম থেকে গুজরাট পর্যন্ত ঐক্য গঠনের স্বার্থে ১৮00 মাইল ভ্রমণ করেছিলেন আমতে।
বাবা আমতে মানবতার উদ্দেশ্যে তাঁর এই অসামান্য প্রতিদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭১ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত হন। ১৯৮৮ সালে মানবাধিকার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ পুরস্কার এবং ১৯৯৯ সালে গান্ধী শান্তি পুরস্কার জয় করেন তিনি। তাঁর উত্তরাধিকারী দুই পুত্রও বাবার এই চেতনাধারা এগিয়ে নিয়ে চলেছেন আজও।
আজ তাঁর ১০৪ তম জন্মদিনে গুগলের এই নিজস্ব শ্রদ্ধার্ঘ্য।