৫০-এরও বেশী ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সরানো হয়েছে ৪০০ মানুষকে
কলকাতা: জলের নীচ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেলের একাংশ. তবে সেই মেট্রোর কাজ করতে গিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাকে একবারেই অপ্রত্যাশিত বিপর্যয় বলে মন্তব্য করেছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। মেট্রোর রেলের মোট পথের ৫২ মিটার থাকবে গঙ্গার নীচ দিয়ে, তবে সেখানকার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে বৌবাজার এলাকায় চলছে খননকাজ। আর তাতেই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এলাকায়। সেখানকার জলস্তর এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ফলে বহু বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ফলে এলাকার প্রায় ৫২টি পরিবারের প্রায় ৪০০ মানুষ ঘরছাড়া।
মেট্রো কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী
বৌবাজারের দুর্গাপিটুরি লেনে বাড়ি এমনই এক ঘরছাড়া পরিবারের অনিন্দিতা দে-র। শনিবার পর্যন্ত নিজের বিয়ের পরিকল্পনায় মন দিয়েছিলেন তিনি। তবে রবিবার সবকিছু ফেলে রেখে ঘরছাড়া হতে হয় অনিন্দিতা দে ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে তৈরি করা হয়েছে পুলিশ কন্ট্রোলরূম। সেখানেই কাঁদতে কাঁদতে অনিন্দিতা দে বলেন, “আমার বিয়ে ১ ডিসেম্বর। আমি সেটা নিয়ে ভাবছি না। আমি আমার বাড়ি এবং জিনিসপত্র নিয়ে ভাবছি। এমনকী, অফিসে যাওয়ার মতোই আমার কোনও পোশাক নেই”।
ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গের কাজের প্রভাব, বৌবাজারে ভেঙে পড়ল বাড়ির একাংশ
ক্ষতিগস্ত এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে দুর্গা পিটুরি এবং শাক্রাপাড়া লেন-এলাকাগুলি ঘিরে ফেলা হয়েছে. পুরো বাড়িই ভেঙে পড়েছে ছাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে গর্ত এবং সিমেন্টের জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়েছে। ঘরছাড়া মানুষদের স্থানীয় একটি হোটেলে রাখা হয়েছে, এবং তাঁদের খরচ জোগাচ্ছে কলকাতা মেট্রো, পরিস্থিতি যা তৈরি হয়েছে, তাতে প্রকল্পটি আটকে যাওযার মতোই, এই পরিস্থিতিতে সারা দুনিয়া থেকে নিয়ে আসা হয়েছে মাটি ও সুড়ঙ্গের বিশেষজ্ঞদের।
কলকাতা হাইকোর্ট থেকে ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত সুড়ঙ্গ খননের কাজ বন্ধ রয়েছে।
রবিবার এলাকা পরিদর্শন করে মর্মাহত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিস্থিতির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মানস সরকার।
সোমবার রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন মানস সরকার। তিনি বলেন, “এটা একটা বিপর্যয়। আমাদের এটা আশা করিনি।এটা অপ্রত্যাশিত। এমনটা আর ভারতের কোথাও হবে না এবং এটা বিশ্বের একমাত্র নজির। আমি দুঃখিত। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি”।
যদিও বিস্তারিতভাবে কিছু বলেননি তিনি, তবে তিনি জানান, প্রকল্পটি অন্তত এখবছর বেশী লাগবে এবং খরচও বাড়বে, যা বিবেচনা করতে হবে।
ভারতে প্রথম জলের তলায় মেট্রো চলাচল! শুরু হবে শীঘ্রই, জানালেন রেলমন্ত্রী, দেখুন ভিডিও
কলকাতা হাইকোর্ট থেকে ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত সুড়ঙ্গ খননের কাজ বন্ধ রয়েছে।
দুর্গা পিটুরি লেনের বাসিন্দা ছিলেন বছর চল্লিশের অভিষেকের পরিবারের সদস্যরা। তিনি বলেন, “আমরা কী বলতে পারি, এটা অপ্রত্যাশিত। আমরা ১০ মিনিটে রাস্তায় নামলাম, একটা ফ্ল্যাট থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে রাস্তায় নেমে এলাম”।
তাঁর স্ত্রী মনীশা বলেন, “রবিবার হঠাৎ তাঁদের যেতে বলা হয়। আমরা কিছুই আনতে পারিনি—কোনও ওষুধ, প্রেসস্ক্রিপশন বা আধারকার্ড কিছু আনতে পারিনি। আমাদের পরিস্থির উন্নতি করার চেষ্টা করছি”।
যে সমস্ত পরিবারকে পুলিশ সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন এই দম্পতিও। প্রত্যেক জনকে ১০ মিনিট করে সময় দেওয়া হয়, ধংস্তুপ থেকে মূ্ল্যবান জিনিস এবং নথি খুঁজে বের করার জন্য।
২০৩৫ সালে কলকাতার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পরিষেবা ব্যবহার করবেন দৈনিক ১০ লক্ষ মানুষ
স্থানীয় বাসিন্দা সৌরভ দত্ত বলেন, “আমি ভূমিকম্প হচ্ছে। ১৩ নম্বর বাড়িটা ভেঙে পড়তে শুরু করে। একটার পর একটা পিলার ভেঙে পড়তে থাকে এবং বাড়িটা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। সেটা ছিল শনিবার। আরও কতজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে”।
১৬.৬ কিলোমিটার এই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো হাওড়া থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত চলবে।তারমধ্যে ১০.৮ কিলোমিটার পথ হবে মাটির নীচে, এবং ৫২০ মিটার হবে জলের নীচে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাটি রয়েছে এসপ্লানেড থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ২.৪৫ কিলোমিটার। সুড়ঙ্গ খোঁড়ার মেশিন টি ছিল শিয়ালহদ থেকে ৬০০ মিটার দূরে, সেখানেই ক্ষতি হয়েছে।
ANI এর তথ্য সংযোজিত হয়েছে