২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় নির্ভয়াকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত চার অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করা হবে
নয়াদিল্লি: নির্ভয়া (Nirbhaya Case) গণধর্ষণকাণ্ডে (2012 gang-rape and murder) সাজাপ্রাপ্ত চার অপরাধীর ফাঁসির সাজা কার্যকর করা হবে ২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায়, মঙ্গলবার জানিয়ে দিল আদালত, দেশজুড়ে প্রতিবাদ আছড়ে পড়া এই মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করল আদালত (Delhi Court)। নির্ভয়াকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত মুকেশ সিং, পবন গুপ্তা, বিনয় শর্মা এবং অক্ষয় কুমার সিং-কে তিহার জেলে (Tihar jail) একসঙ্গে ফাঁসি দেওয়া হবে, একমাস আগে থেকেই তারজন্য প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন জেলের আধিকারিকরা। মৃত্যু পরোয়ানা জারি হওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে সাজা প্রাপ্ত চার অপরাধী।
নির্ভয়ার মা বলেন, “এই সিদ্ধান্ত বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাস বাড়াবে। আমাদের জন্য ২২ জানুয়ারি একটি বড় দিন। আমার পেয়ে ন্যায়বিচার পেল”।
নির্ভয়ায় সাজাপ্রাপ্তদের ফাঁসিতে মেরঠের ফাঁসুড়ে, বিহারের দড়ি
২০১২ এর ১৬ ডিসেম্বর, বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন প্যারামেডিক্যালের ২৩ বছরের তরুণী, বাড়ি ফেরার সময় যখন তাঁরা গাড়ি খুঁজছিলেন, সেই সময় দক্ষিণ দিল্লিতে একটি বাসে ওঠেন তাঁরা, সেখানে চালক এবং খালাসি সহ মোট ৬ জন ছিল, বাকি বাসটি ফাঁকা ছিল।
প্রায় কয়েকঘন্টা ধরে ওই মহিলাকে গণধর্ষণ ও অত্যাচার করা হয় এবং পরে তাঁকে বাস থেকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলা হয়। ২৯ ডিসেম্বরে ওই নির্যাতিতা তরুণীর মৃত্যু হলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ আছড়ে পড়ে।
নির্ভয়াকাণ্ডের পরেই, এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে পথে নামে দেশবাসী...অন্যান্য দেশেও এই কাণ্ডের পর মহিলাদে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জোরদার হয়।
এদিন আদালতকক্ষে ভিড় করেছিল অসংখ্য মানুষ, সঙ্গে ছিল আবেগ। কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্ভয়া ও সাজাপ্রাপ্তদের পরিবারের লোকেরা।
আদালতে নির্ভয়ার মায়ের কাছে ক্ষমার আর্জি সাজাপ্রাপ্তের মায়ের
আদালতের এই ঘোষণার আগে নির্ভয়ার মায়ের কাছে গিয়ে ছেলের প্রাণভিক্ষার আর্জি জানান সাজাপ্রাপ্ত মুকেশ সিং-এর মা, ভিক্ষার ভঙ্গিতে তাঁর আঁচল ধরেন এবং আবেদন করেন, “আমার ছেলেকে ক্ষমা করে দিন। আমি ওর জীবন ভিক্ষা চাইছি”। তিনি কাঁদতে শুরু করেন, নির্ভয়ার মা বলেন, “আমারও একটা মেয়ে ছিল। তার সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা আমি কী করে ভুলব? বিচারের জন্য আমি সাত বছর অপেক্ষা করেছি”।
নির্ভয়ার মা বলেন, “আমার মেয়ে বিচার পেল”
মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করেছে আদালত, ফলে ১৪ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। তারমধ্যেই তাদের সমস্ত আইনি বিকল্পের সাহায্য নিতে হবে।
সূত্রের খবর, যাতে চারজনকে একসঙ্গে ফাঁসি দেওয়া যায়, তারজন্য ফাঁসিরমঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে।
গতমাসে সুপ্রিম কোর্ট অক্ষয় কুমার সিং-এর, শেষবার রায় খতিয়ে দেখার আর্জি খারিজ করে দেওয়ার পরেই, নিম্ন আদালতে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করার আবেদন জানিয়েছিলেন নির্ভয়ার পরিবারের লোকেরা, তবে সেদিন আদালত ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত রায়স্থগিত করে দেয়। বিচারকের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে নির্ভয়ার মা বলেন, “একবছর ধরে আমি দোরে দোরে ঘুরে বেরিয়েছি”, বিচারক তাঁকে সান্তনা দিয়ে বলেন, তিনি আইনের প্রতি দায়বদ্ধ।
নির্ভয়া মামলায় দোষী অক্ষয় সিংয়ের মৃত্যুদণ্ডাদেশই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট
এই চারজন ছাড়া, এই গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে রয়েছে পঞ্চম অপরাধী রাম সিং, বন্দি থাকাকালীন আত্মহত্যা করে সে, ষষ্ঠ অপরাধী, অপরাধ করার সময় ১৮ বছরের কম বয়সী ছিল, তাকে সংশোধনাগারে রাখার তিন বছর পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
পর্যালোচনার বিরুদ্ধে যুক্তি জাল বিছিয়ে, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, “এমন কিছু অপরাধ রয়েছে যেখানে ‘মানবতা বিপন্ন', এবং এই অপরাধটি সেরকম। সেদিনই, দুই কারণে, ঈশ্বর সেদিন তাঁর সামনে লজ্জায় মাথা নথ করেছিলেন, দুটি কারণে। প্রথম, অসহায় মেয়েটি রক্ষা করতে না পারা, এবং দ্বিতীয়, এই পাঁচজনকে সৃষ্টি করার জন্য”।
আজকের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি দেখতে ক্লিক করুন:
সাজাপ্রাপ্তদের আলাদা সেলে রাখা হয়েছে এবং সিসিটিভির মাধ্যমে তাদের ওপর নজরদারি চলছে। ৩ নম্বর সেলে ফাঁসির প্রস্তুতি করা হয়েছে, সেখানেই তাদের ফাঁসি দেওয়া হবে। বিহারে বক্সার থেকে ফাঁসির দড়ি আনা হয়েছে, ২০১৩ তে সংসদ হামলার অপরাধী আফজল গুরুর ফাঁসির দড়ি এসেছিল সেখান থেকেই।