ঠেলা গাড়িতে চাপিয়েই অসুস্থ সুব্রামণিকে নিয়ে দূরের হাসপাতালের দিকে রওনা দেয় তাঁর পরিবার
পুদুচেরি: নেই অ্যাম্বুলেন্স, নেই কোনও বাইক বা চার চাকাও! মুমূর্ষু রোগীকে ঠেলা গাড়ি করে দূরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হলেন রোগীর আত্মীয়রা, রাস্তাতেই প্রাণও হারাতে হল বছর ৬৫-র আদিবাসী বৃদ্ধকে। বুধবার শ্যালকের বাড়িতে গিয়েছিলেন অসুস্থ সুব্রামণি (Subramani), সেখানেই শরীর আরও খারাপ হয়ে যায় তার। কোনও যানবাহনের ব্যবস্থা করার ক্ষমতা বা সুযোগও না থাকায় অগত্যা ঠেলা গাড়িতে চাপিয়েই অসুস্থ সুব্রামণিকে নিয়ে দূরের হাসপাতালের দিকে রওনা দেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করা বা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা তো দূরস্থান, উলটে এই ‘আজব' দৃশ্য দেখে ভিড় জমা হয়ে যায়, দর্শকরা ছবি তুলতে থাকেন ভিডিও করতে থাকেন। তামিলনাড়ুর বিলুপুরম জেলার (Tamil Nadu's Villupuram district) বাসিন্দা সুব্রামণি পুদুচেরির (Puducherry) সুথুকেনিতে তার শ্যালকের সঙ্গে দেখা করতেই এসেছিলেন। তিনি অনেকদিন থেকেই যক্ষ্মায় ভুগছিলেন এবং বুধবার তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তার স্ত্রী।
আরও পড়ুনঃ বিজেপির মতো মিসড কল দিয়ে নয়, সদস্য বাড়াতে নতুন অ্যাপ আনছে কংগ্রেস
তিনি অচেতন হয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার স্ত্রী, তার বোন এবং ভগ্নিপতি সুব্রামণিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও ব্যবস্থাই করে উঠতে পারেননি। একটা ছোট ঠেলাগাড়ি জোগাড় করে তাতেই সুব্রামণিকে চাপিয়ে হাসপাতালমুখী হন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের সদস্যদের কারও কাছেই মোবাইল ফোন নেই, ফলত অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করার বিষয়টিও তাঁদের জানা ছিল না।
পরিবারটি প্রায় চার কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে পৌঁছালে হাসপাতালের চিকিৎসকরা সুব্রামণিকে “মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে” বলেই ঘোষণা করে। হাসপাতালের কর্মীরা পরিবারকে জানায়, এই সুব্রামণির মরদেহ প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের তামিলনাড়ুতে তার বাড়িতে স্থানান্তরিত করতে পারবেন না তাঁরা, কারণ হাসপাতালের যানবাহনের পুদুচেরি সীমান্ত অতিক্রম করার অনুমতি নেই। কোনও উপায় না দেখে পরিবারটি ওই ঠেলা গাড়িতে চাপিয়েই লাশটি তাদের গ্রামের দিকে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হয়।
আরও পড়ুনঃ দাম বাড়ল রান্নার গ্যাসের; জেনে নিন, নতুন দামে কত টাকা গুনতে হবে আপনাকে?
এরপরেই জে মুরুগানন্দন নামে একজন পুলিশ অফিসার তাদের দেখেন এবং একটি এনজিও পরিচালিত অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেন। এনডিটিভির সঙ্গে কথা বলার সময়, জে মুরুগানন্দন বলেন, “ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন যে ওই ব্যক্তি হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন। তার স্ত্রী বলেন যে সুব্রামণি টিবি রোগী ছিলেন। তারা ইরুলা আদিবাসী (Irula Tribe) গোষ্ঠীর দিন মজুর। তাদের কাছে মোবাইল ফোনও নেই।"
তিনি আরও বলেন, “যারা ঠেলাগাড়ি করে মানুষ নিয়ে যাওয়ার ভিডিও করছিলেন, তাঁরা যদি মন দিয়ে ভিডিও না করে কেউ একটা হাসপাতালে অ্যামুলেন্সের জন্য ফোন করতেন লোকটিকে সম্ভবত বাঁচানো যেত। তাদের কোনও সাহায্যই করা হয়নি।"