চিনা বিদেশ মন্ত্রীর ওয়েং ই'র সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন অজিত দোভাল। (ফাইল ছবি)
নয়াদিল্লি: কূটনৈতিক স্নায়ুর যুদ্ধে জিতল ভারত। দীর্ঘ আলোচনার পর সোমবার এলএসি বরাবর দু'কিমি দূর করেছে চিন সেনা । সামরিক ভাষায় এই ঘটনাকে ডিসএনগেজমেন্ট বলছে। জানা গিয়েছে, একাধিকস্তরে আলাপ-আলোচনার পর এই পদক্ষেপ। দুই দেশের (Indo-China standoff) সামরিক পার্থক্যেকে সংঘাতে পরিণত করতে নারাজ ইন্দো-চিন। এই বিষয়ে সহমত হয়েই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দু'কিমি পিছনে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লাল ফৌজ। এদিন এক বিবৃতি জারি সরকার বলেছে, "আরও আগে এই ডিজএনগেজমেন্ট দরকার ছিল। আরও আগে উত্তেজনা প্রশমিত হতো। তাই স্থিতাবস্থা বজায়ে" আগামি দিনেও এই ডিসজএনগেজমেন্ট জারি থাকবে।"
এই পরিবেশের মধ্যেই রবিবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে টেলিফোনে বৈঠক করেন চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। তাঁরাও সহমত সীমান্তে স্থিতাবস্থা ও শান্তি ফেরাতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং পর্যবেক্ষণ জরুরি।
জানা গিয়েছে, লাল ফৌজ তাঁদের অস্থায়ী ছাউনি ভেঙে দিয়েই অন্তত এক কিলোমিটার দূরে সরেছে। একইভাবে পিছু হটেছে ভারতীয় সেনা। ফলে বিতর্কিত এলাকায় সাময়িক স্থিতাবস্থা ফিরেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে এমনটাই খবর।
শুক্রবারই লাদাখে ভারতীয় সেনা ছাউনিতে সটান হাজির হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতীয় সেনাদের উৎসাহিত করতে বেশ কিছু কথাও বলেন তিনি। চিনের নাম না করেই প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, "আগ্রাসনের যুগ শেষ। এখন প্রগতির যুগ। আগ্রাসীরা শান্তি নষ্ট করে। জল, স্থল, এমনকী অন্তরীক্ষেও শক্তি বাড়িয়েছে ভারত। লাদাখ চক্রান্ত ব্যর্থ করেছে ভারতীয় সেনা।"
গত সপ্তাহেও, গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষের পরে সমাধান খুঁজতে তৃতীয় দফায় আলোচনায় বসেন ভারত ও চিনা সেনাবাহিনীর শীর্ষকর্তারা। যদিও পরে জানা যায়, সেই বৈঠক থেকে কোনও রফাসূত্র মেলেনি।
এরপরেই লাদাখে গিয়ে ভারতীয় সেনা জওয়ানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির সাক্ষাৎ ও আলোচনা চিনের উদ্দেশে এক কড়া বার্তা হিসাবেই যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রধানমন্ত্রী সেনা জওয়ানদের উদ্দেশে বলেন, "মাতৃভূমির রক্ষায় আপনাদের সাহস অসমান্তরাল। যতটা উঁচুতে আপনারা রয়েছেন তার থেকেও অনেক বেশি আপনাদের সাহস। আপনাদের বাহু ততটাই শক্ত, যতটা শক্ত পর্বত আপনাদের ঘিরে রেখেছ। আপনাদের আত্মবিশ্বাস, দৃঢ়তা আর বিশ্বাস একটি পর্বত শিখরের মতোই অটল"।
তিনি আরও বলেন, "ভারত মায়ের শত্রুরা আপনাদের প্রত্যাঘাত দেখেছ। এই পরিস্থিতিতেও আপনারা নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন। দুর্বলতা শান্তি আনতে পারে না। সাহসীরাই পারে। আপনারা সেটাই করে দেখাচ্ছেন। বিশ্বের অন্য সব দেশের বাহিনীর চেয়ে ভারতীয় সেনারা যে শক্তিশালী সেটা প্রমাণ হয়েছে। আমি আপনাদের, কুর্ণিশ করি। যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের শ্রদ্ধা জানাই । লাদাখের সব নদী, সব স্রোত, সব নুড়ি জানে এটা ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।"
এর আগে 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে খুব স্পষ্টগলায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, "যারা লাদাখে ভারতীয় ভূখণ্ডের দিকে তাকানোর সাহস দেখিয়েছে, তাদের যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে। কী ভাবে বন্ধুত্ব রাখতে হয়, সেটা যেমন ভারত জানে, তেমনই কী ভাবে কারও সঙ্গে যুঝতে হয় এবং জবাব দিতে হয়, সেটাও দেশের জানা রয়েছে। কারওকে ভারত মাতার সম্মান খর্ব করার অনুমতি যে দেওয়া হবে না, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন আমাদের সাহসী জওয়ানরা।"
তবে চিন স্বীকার করুক আর নাই করুক, সীমান্তে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে হওয়া সংঘর্ষে ক্ষতির মুখে পড়ে লাল ফৌজের শিবিরও। ভারতীয় সেনা বিশ্বাস করে যে কমবেশী ৪৫ জন চিনা সেনা হতাহত হয় ওই দিন।