প্রথমে মুসলিম হয়ে জৈনকে বিয়ে। তারপর সিঁথিতে সিঁদুর, গলায় মঙ্গলসূত্র, হাতে চুড়া পরে সংসদে শপথবাক্যপাঠ। একের পর এক বিতর্কিত পদক্ষেপ করায় মুসলিম ধর্মগুরুদের ফতোয়া-র মুখে পড়তে হয়েছিল নতুন নির্বাচিত সাংসদ নুসরত জাহানকে (Nusrat Jahan)। তখনই তিনি বলেছিলেন, তাঁর সাজ-পোশাক নিয়ে কথা বলার অধিকার কারোর নেই। রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মেলানো উচিত নয়। সেই চিন্তাভাবনাকে ধরে রেখেই বৃহস্পতিবার কলকাতার মিন্টো পার্কে ইস্কনের রথযাত্রায় (Rath Yatra) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পাশে দেখা গেল নুসরত জাহানকে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনিও টান দেন রথের রশিতে। আর এভাবেই যেন তিনি বার্তা দিলেন, ধর্ম নিয়ে গোঁড়ামির বিরুদ্ধে এভাবেই লড়বেন তিনি। তাঁর সেই বার্তায় যেন সিলমোহর দিল ইস্কনের মত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
রীতি-নিয়ম পালনের পরেই উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে নুসরত বলেন, "আমাদের ইদে দিদি আসেন। উৎসব নিয়ে রাজনীতি করেন না আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। একই ভাবে তাই আজ আমি ইস্কনের রথযাত্রায় এসেছি। আার আন্তরিক অনুরোধ, ধর্ম আর রাজনীতিকে আলাদা রাখুন। সবাইকে সবার বিশ্বাস নিয়ে নিজের মতো করে চলতে দিন।"
একই সঙ্গে মুসলিম ধর্মগুরুের উদ্দেশ্যে বলেন, কারোর চোখরাঙানিতে ভয় পান না তিনি। কারণ, তিনি অন্তরে মুসলিম।
এরপরেই তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান ইস্কনকে। তাঁকে এই বিশেষ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, "ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গড়ার লক্ষ্যে, নতুন প্রজন্ম যেন মানবতার পক্ষে দাঁড়ায়।"
আজকের অনুষ্ঠানে নুসরতের পাশে দেখা যায় তাঁর স্বামী নিখিল জৈনকেও। নুসরতকে তিনি "নয়না" নামে ডেকে বলেন, এমন স্ত্রী পেয়ে তিনি সত্যিই গর্বিত।
নুসরত জাহানের এই উপস্থিতিকে সর্বধর্মসমন্বয়ের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ বলে বর্ণনা করেন ইস্কনের প্রতিনিধি রাধারমন দাস (Iskcon official Radharaman Das)। তাঁর দাবি, আজকের এই রথযাত্রা শহরের বুকে ইতিহাস তৈরি করল। কলকাতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, এখানে হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই হয়ে রথের রশি টানে। ঠিক যেভাবে ইস্কনের রথ তৈরির পেছনে হাত রয়েছে মুসলিম কারিগরদের।