নিজেকে পলিথিনে মুড়ে পরিবেশের বার্তা দিতে চান বিষ্ণু ভগত
ময়ূরভঞ্জ (উড়িষ্যা): রাস্তায় বেরিয়ে যদি দেখেন জীবন্ত এক ডাস্টবিন? মাথা থেকে উপচে পড়ছে নোংরা, গায়ে পানের পিক আর ময়লার নকশা? হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে আপনারই সামনে দিয়ে, গা গুলিয়ে উঠবে তো? এই দৃশ্য কিন্তু নতুন নয় উড়িষ্যা শহরে। ৩৬ বছর বয়সী বিষ্ণু ভগত রঙিন পলিথিনের ব্যাগের পোশাক পরে ডাস্টবিন সেজেই প্রতিদিন নিজের কাজে বেরোন। অনেকেই মজা করে ‘জীবন্ত ডাস্টবিন' বলে ডাকেন বিষ্ণুকে। বিষ্ণুর অবশ্য তাতে কিছু এসে যায় না। কারণ তিনি জানেন এক গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্নিহিত বার্তা তিনি প্রকাশ করতে চান। "যদি আমাকে দেখে আপনার কুৎসিত মনে হয়, তাহলে ভাবুন পৃথিবীকে কেমন লাগে। যাকে আমরাই প্রতিদিন নোংরা করে তুলছি”। "ভবিষ্যৎ বাঁচান", "পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করবেন না"- এসব নানা বার্তা বিষ্ণুর পোশাকের উপর লেখা। ডাস্টবিন সেজেই তিনি নিয়মিত নানা স্কুলে যান এবং পলিথিন ব্যবহারের ফলে ক্ষতিকর পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য শিশুদের সাথে কাজ করেন।
পরিবেশের উপর কীভাবে পলিথিন প্রভাব ফেলে তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন বিষ্ণু ভগত।
"একটা গরুকে আমি পলিথিনের ব্যাগে মোড়া খাবার খেতে দেখি। শুধু খাবার নয়, গরুটা প্লাস্টিকও খেয়ে ফেলে। কয়েকদিন পর গরুটা মারা যায়। এই ঘটনাটি আমাকে উত্তেজিত করে তোলে এবং আমি পরিবেশ এবং প্রাণীদের জন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নিই।" জানান বারিপদের বাসিন্দা বিষ্ণু।
স্কুল পড়ুয়া সঞ্জনা বলেন, " বিষ্ণু ভগতের কাছ থেকে আমি জানতে পেরেছি যে আমাদের পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করা একেবারেই উচিৎ না এবং আমার বন্ধুদের এবং পরিবারের সদস্যদেরও এর ব্যবহার বন্ধ করতে উত্সাহিত করি।"
বিষ্ণু ভগতের সকলের কাছে বার্তা দেন- "পলিথিন ব্যবহার করবেন না"।
ময়ূরভঞ্জের একটি বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আলোক দত্ত বলেন, “বিষ্ণু স্কুলে ঢুকলেই পড়ুয়াদের মধ্যে অদ্ভুত উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ওরা জানে যে ভগত পলিথিন সম্পর্কিত কিছু বিষয়ে কথা বলবেন। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে নিজের পোশাক তৈরির অনন্য যে ধারণা ভগত এনেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এভাবে এই কারণেই বাচ্চারা ওর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ জীবনশিক্ষা লাভ করছে।" ভগতের প্রচেষ্টার তারিফ করেছেন কর্তৃপক্ষও।
ময়ূরভঞ্জের কালেক্টর বীরেন্দ্র ভরদ্বাজ জানান, তাঁর প্রচেষ্টা জেলায় গণ আন্দোলনের রূপও নিতে পারে এবং প্রত্যেকে মিলে একটি ভাল ভবিষ্যতের দিকে এগো যেতে পারে।
আরও খবর পড়ুন এখানে