কলকাতা: বাংলা নববর্ষ ১৪২৬; পয়লা বৈশাখ; বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখ। বৈশাখের ১ তারিখই বাংলা নববর্ষের সূচনা হিসেবে পালিত হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশে এই দিনটিকে নববর্ষ উদযাপনের বিশেষ উৎসবের দিন হিসেবেই পালন করা হয়। বস্তুত বাঙালিরা যেখানেই রয়েছেন সেখানেই পালিত হয় এই বিশেষ দিন। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে চন্দ্রসৌর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৫ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ পালিত হয়।
মুক্তি পেল কণ্ঠ সিনেমার ট্রেলার; স্তব্ধতার ভাষায় কথা বলেছেন শিবপ্রসাদ
এই উৎসবের দিনে বাংলাদেশের বিশেষ মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজিত হয়, সম্প্রতি কলকাতাতেও বাঙালিরা মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করছেন। তবে শুধু শোভাযাত্রা নয়, পান্তাভাত খাওয়া এবং হালখাতা খোলার রেওয়াজ এখনও অমলিন। ২০১৬ সালে, ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রাকে “মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” ঘোষণা করে। আজ রাত থেকেই শুরু হবে বাঙালিয়ানার এই বিশেষ দিনের শুভেচ্ছা বার্তা বিনিময়। আপনাদের জন্য এখানে রইল কিছু বিশেষ বার্তা।
ঠিক কবে থেকে কেন বাংলা নববর্ষ পালিত হচ্ছে?
ঐতিহাসিকরা নানা মত জানান এই বিষয়ে। একদল বলেন, ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষির খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সাল চাঁদের উপর নির্ভর করে তৈরি হত বলে তা কৃষির ফলনের সাথে মিলত না। ফলত অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা দিতে বাধ্য করা হত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা নিয়ে আসতে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন বলে অনেকে মনে করেন। সম্রাটের আদেশে রাজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরি সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সালের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় অর্থাৎ ৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬ সালে। প্রথমে এই বছরের নাম ছিল ফসলি সাল, পরে ‘বঙ্গাব্দ' বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
পয়লা বৈশাখের ভুরিভোজ; কলকাতায় পরোটার নানা রূপ চেখে দেখার সুযোগ
ঐতিহাসিকরা বলেন, বাংলার মুঘল সুবাদার মুর্শিদ কুলি খাঁ প্রথম পুন্যাহ রীতি শুরু করেন, যার অর্থ হল ‘ভূমি রাজস্ব আদায়ের উৎসবের দিন', এবং তিনি বাংলা দিনপঞ্জির সূচনার জন্য আকবরের রাজস্ব নীতি ব্যবহার করেন।
আবার অন্য ঐতিহাসিকদের মতে, পয়লা বৈশাখ উৎসবটি ঐতিহ্যগত হিন্দু নববর্ষ উৎসবের সাথে সম্পর্কিত যা বৈশাখী (Vaisakhi) নামেও পরিচিত। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে একই দিনে এই উৎসব পালিত হয়। মূলত শিখ ধর্মাবলম্বীরা এই উৎসব পালন করেন।
আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের প্রথম নজির মেলে ১৯১৭ সালে। সে বছর পয়লা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পুজোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও একইভাবে পালন হয় এই উৎসব।