কলকাতা: ছবিটির অর্ধেকটা জুড়ে একজন নারীর মুখ, অর্ধেকটা নিয়ে একটা পাখির। সেই মুখে লেগে রয়েছে একটি আধিভৌতিক ও গা-ছমছমে হাসি। এই মুখটিই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে তার ‘শিকার’ হিসেবে খুঁজে যাচ্ছে একের পর এক মানুষকে। খুঁজতে খুঁজতে এসে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে ‘কুখ্যাত’ হয়ে যাওয়া অনলাইন গেম ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’-এর সঙ্গে এই রাজ্যের সম্পর্ক জুড়ে যাওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সিআইডির কপালেও। এতটাই যে, রাজ্য রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার তরফ থেকে টুইট করে অভিভাবকদের এই অনলাইন গেমটি সম্বন্ধে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তাদের এই কথাও বলা হয়েছে যে, কোনওভাবে এই ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’-এর খেলায় তাদের সন্তান জড়িয়ে পড়েছে জানতে পারলে অবিলম্বে যেন তা পুলিশকে জানানো হয়। প্রসঙ্গত, এই চ্যালেঞ্জের নিয়ম হল, ‘খেলোয়াড়’কে শেষমেশ আত্মঘাতী হতে হবে।
তদন্তকারীদের অনুমান জাপান, মেক্সিকো এবং কলম্বিয়ার মতো দেশ থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে খেলার আহ্বান আসছে । শুধু কলকাতার একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীই নয়, জলপাইগুড়ি থেকে উত্তরবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর বা দক্ষিণবঙ্গের হুগলির মতো জেলাতেও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের কাছে ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’-এর আহ্বান আসছে বলে জানা গিয়েছে। দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াঙে চলতি মাসের কুড়ি ও একুশ তারিখ পরপর দুটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তা জনমানসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। যদিও, ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’-এর জন্যই ওই আত্মহত্যার ঘটনাগুলি ঘটেছে কি না, তা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। দার্জিলিং জেলার এসপি অখিলেশ চতুর্বেদীও ওই দুই মৃত্যুর সঙ্গে এই খেলাটির জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের জুলাই মাসের 25 তারিখ মোমো চ্যালেঞ্জ খেলতে গিয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটি সামনে আসে আর্জেন্টিনায়। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, গত দু’বছর ধরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে মোনো চ্যালেঞ্জ খেলার এই ছবিটি।
এই খেলার নিয়ম হল, একটি মেসেজ করে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীকে খেলার নিয়মগুলো জানানো হবে। সেখানে কিছু ‘কাজ’ বলে দেওয়া হবে। যার প্রতিটাই ব্যবহারকারীর পক্ষে ক্ষতিকর। সেই ‘কাজ’টি করার সময় তা ফোনে রেকর্ড করে পাঠাতে হবে। যদি কোনওভাবে ওই কঠিন কর্মভার সামলাতে না পেরে হাল ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ‘খেলোয়াড়’টি, তবে তাকে নানারকম ছবি ও হুমকির মাধ্যমে ফের খেলাটিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।
যে অদ্ভুত ছবিটিকে হোয়াটসঅ্যাপের প্রোফাইল পিকচার করে মোমো চ্যালেঞ্জ খেলার জন্য আহ্বান জানানো হয়, তা জাপানের এক শিল্পীর তৈরি। যদিও, প্রথমে সেই ছবিটির তৈরির কথা স্বীকার করলেও, পরে, এত কিছু ঘটার পর তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
সমাজের এক শ্রেণির মানুষ ভয়ে সিঁটিয়ে আছে এই মোমো চ্যালেঞ্জ নিয়ে। মানুষে মানুষে যোগাযোগ একদম তলানিতে। বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলের মনই মোবাইলে। অভিভাবকদের আশঙ্কা একটাই, একা হয়ে পড়া তাঁদের সন্তানটি এই মারণ খেলাটির শিকার হয়ে যাবে না তো সবার অলক্ষ্যে…