Pollution Kolkata : কতটা বিষাক্ত কলকাতার আকাশ ?বিপদসীমার কতটা ওপরে কলকাতার দূষণ? (প্রতিকী ছবি)
কলকাতা: দিল্লি যখন গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। গোটা রাজধানীজুড়ে যখন ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে, বিশ্বের তাবড় তাবড় রাষ্ট্রনেতারা যখন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজধানী দিল্লির দূষণ নিয়ে,অনেকে আবার সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন, ঠিক তখনই (Pollution Kolkata)কলকাতার বাসিন্দাদের কাছে একটাই প্রশ্ন আমার শহর কেমন আছে? দূষণের মাত্রা কি পরিমাণে রয়েছে এই শহরে? কলকাতা কি আদৌ সুরক্ষিত? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে NDTV বাংলা যোগাযোগ করেছিল পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ শ্রী এস এম ঘোষের সঙ্গে । এই মুহূর্তে কলকাতার(Pollution Kolkata) বাতাসের গুণগতমানের পরিমাণ 150 থেকে 200 মাইক্রো গ্রাম প্রতি ঘনমিটার রয়েছে, বলছেন তিনি ।
WHO র নিয়ম অনুসারে মানুষকে সুস্থ রাখতে হলে বাতাসের গুণগত মানের সূচক রাখতে হবে 25 মাইক্রো গ্রাম প্রতি ঘনমিটার। আর ২০০৯ সালে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে তা 60 মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘন মিটার রাখতে হবে, এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সরকারের তরফে। ১০ বছরে পরিবেশ পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে,কিন্তু নিয়মের যে নবিকরণ দরকার তা বোঝা গেলেও, হয় নি।সে ক্ষেত্রে দেশীয় মাত্রার মাপকাঠিতেও কলকাতার বাতাসের গুণগত মানের সূচক নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে আড়াই গুণ বেশি ! আর যদি WHO এর মাপকাঠিতে বিচার করা যায় , সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কলকাতার বাতাসের গুণগত মানের সূচক নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে প্রায় ছয় গুণ বেশি, যা বিপদসীমার অনেকটাই ওপরে , বলছেন পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ শ্রী এস এম ঘোষ।
পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েছেন যে তার আশঙ্কা ,নভেম্বরের শেষের দিকে যখন আরও ঠাণ্ডা পড়বে অর্থাৎ শীত পাকাপাকিভাবে এ রাজ্যে প্রবেশ করবে, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে এবং দূষণের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যাবে এই শহরে। তিনি আরও জানিয়েছেন ,যে সমস্ত যন্ত্রের মাধ্যমে বাতাসের গুণগতমান বিচার করা হয় সেই সমস্ত যন্ত্র কলকাতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কম পরিমাণে রয়েছে। যেখানে দিল্লিতে চল্লিশটিরও বেশি যন্ত্র রয়েছে ,সেখানে কলকাতায় রয়েছে মাত্র সাতটি। পাশাপাশি তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে দিল্লির ক্ষেত্রে এই সমস্ত যন্ত্রগুলি জনবহুল এলাকা, যেখানে জনঘনত্ব বেশি, যেখানে দূষণের মাত্রা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা, সেই সমস্ত জায়গাতেই বসানো রয়েছে কিন্তু কলকাতার (Pollution Kolkata) ক্ষেত্রে তা একেবারেই অন্যরকম, অভিযোগ করেছেন শ্রী এস এম ঘোষ ।
তাঁর অভিযোগ কলকাতার ক্ষেত্রে বাতাসের গুণগত মান পরীক্ষা করার যে যন্ত্রগুলি, সেগুলির মধ্যে অনেক গুলি বসানো রয়েছে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় । যেমন রবীন্দ্র সরোবর , ভিক্টোরিয়া চত্বর ,ময়দান চত্বর, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অথচ যেখানে জনঘনত্ব বেশি যেমন খিদিরপুর,একবালপুর, মোমিনপুর,গার্ডেনরিচ,মৌলালি,পার্ক সার্কাস,রাজাবাজার,ট্যাংরা, তোপসিয়া,শ্যামবাজার, বেহালা,টালিগঞ্জ এলাকায় বাতাসের গুণগত মান পরীক্ষা করার যন্ত্রই নেই। আর তাই কলকাতাকে দূষণমুক্ত করার সদিচ্ছাকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি! জোর দিয়ে তিনি বলেছেন যে কলকাতার এই সমস্ত জনবহুল এলাকায় যদি দূষণ বা বাতাসের গুণগতমান পরীক্ষা করার যন্ত্র বসানো যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে দিল্লির মতই ভয়ঙ্কর অবস্থা কলকাতার বাতাসেরও।
বাতাসের গুণগত মানের সূচক যদি অনেকটাই উপরে চলে যায় অর্থাৎ 200-300 তে পৌঁছে যায় সেক্ষেত্রে সবক্ষেত্রেই যেটা দেখা যায় সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং করা হয় ,মানুষকে সতর্ক করা হয় যাতে তারা যতটা সম্ভব বাড়ির ভিতরে থাকেন বা যাদের বেরোতে হবে, ঠিক কী ধরনের সুরক্ষা নিয়ে তারা বেরোবেন, মাইকিং করে তাদের জানানো হয়। কিন্তু কলকাতার ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনও জনসচেতনতার উদ্যোগ এখনও সেভাবে চোখে পড়েনি এমনটাই অভিযোগ করেছেন পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ। দূষণ মানচিত্রে এইমুহূর্তে কলকাতার অবস্থান ঠিক কোথায় সেই চিত্রই তুলে ধরা হচ্ছে না কেন ? প্রশ্ন তুলেছেন শ্রী এসএম ঘোষ।
এদিকে কলকাতার দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান শ্রী কল্যাণ রুদ্রর সঙ্গেও NDTV বাংলা যোগাযোগ করেছিল, তিনি অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন দূষণের নিরিখে কলকাতার পরিস্থিতি দিল্লির থেকে অনেকটাই ভালো, বেশকিছু জনসচেতনতার উদ্যোগ খুব শীঘ্রই নেওয়া হচ্ছে যাতে দূষণমুক্ত করা যায় কলকাতাকে।শুধু কলকাতাই নয় গোটা রাজ্যে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ চলছে জানিয়েছেন শ্রী কল্যাণ রুদ্র।