ফায়াজ বিমান নির্মাণের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণও নেন। স্বপ্নের প্লেন বানাতে বেচে দেন নিজের জমি, সামান্য সঞ্চয়ও।
ইসলামাবাদ: অকাজের জিনিস, বা বাতিল হয়ে যাওয়া জিনিসপত্র দিয়ে মানুষ কতকিছুই বানান। তবে নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিস দিয়ে আস্ত একটা এরোপ্লেন? এও কি সম্ভব? পাকিস্তানের এক মানুষ এমন অবাস্তবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন। তাজ্জব হয়ে যেতে হয় মানুষটির পেশা শুনলে। ওই ব্যক্তি পেশায় একজন পপকর্ন বিক্রেতা (popcorn seller in Pakistan)। বাড়িতে বানানো প্লেনকে আকাশের গন্ধ চেনাতে যিনি এখন অপেক্ষা করছেন দেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটির বা Civil Aviation Authority (সিএএ) অনুমতির। পুলিশ প্রশাসন তাঁকে নিজের হাতে গড়া এই প্লেন ওড়ানোর অনুমতি দিচ্ছে না। ৩১ মার্চ মুহাম্মদ ফায়াজের (Muhammad Fayaz) থেকে ওই বিমানটি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। বিমান ওড়াতে নিজের গ্রামের কাছেই অস্থায়ী রানওয়ে হিসাবে একটি ধাতব সংযোগ রাস্তা ব্যবহার করছিলেন ফায়াজ, পুলিশ তা বন্ধ করে দেয়।
গণ্ডার মারতে আসা শিকারীকে পিষে দিল হাতি, মৃতদেহ নিয়ে সিংহের ভুরিভোজ!
স্কুলে পড়তে পড়তেই এয়ারফোর্স পাইলট হয়ে উঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন ফায়াজ, ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে নিশ্চয়ই বিমান ওড়াবেন। কিন্তু অভাবের তাড়নায় পাইলট হওয়া দূরস্থান স্কুলেই যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। তবে ইচ্ছে আর স্বপ্নরা তো মরে না। ফায়াজ বলেন, “যখনই আমি আকাশে প্লেন দেখতাম, মনে মনে বলতাম, একবার না একবার আমি তো প্লেন ওড়াবই! তখন আমি ভাবলাম যে, আমার মধ্যে যে সৃজনশীলতা ভগবান দিয়েছেন তাই ব্যবহার করি, নিজেই বিমান বানাই, সেটাই ওড়াব।"
পাঞ্জাব প্রদেশের পাকপট্টনের বাসিন্দা ফায়াজ বিমান নির্মাণের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণও নেন। স্বপ্নের প্লেন বানাতে বেচে দেন নিজের জমি, সামান্য সঞ্চয়ও। ৯০০০০ টাকা খরচ করেছেন এখনও অব্দি, শুধু একটিবার আকাশ ছোঁবেন বলে।
মাঝে মাঝেই ফিনক্সের মতো স্বপ্ন চাগাড় দিত বলেই দিনের বেলা পপকর্ন বিক্রি করে রাতের বেলা চৌকিদারের কাজ করে টাকা জমিয়েছিলেন ফায়াজ। এবং শেষমেশ, কারও থেকে কোনও রকম প্রযুক্তিগত সাহায্য না নিয়েই একবছর আগে নিজের সেই বিমান বানানো শুরু করেন তিনি।
মানবিকতায় উজ্জ্বল! জমানো ১০ টাকা নিয়ে মুরগির প্রাণ বাঁচাতে হাসপাতালে ছোট্ট শিশু
সেই কোন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েছিলেন বায়ুর চাপ এবং হাওয়ায় ভেসে থাকার পাঠ (air pressure and flying techniques), হাতে কলমে যেমন সকলে পরীক্ষা করে, তেমনই করেছিলেন। কেবল ভুলে যাননি। বিমান কেন ক্র্যাশ করে এবং বিমানের বিভিন্ন অংশ কীভাবে বানানো হয় এবং তাদের কাজ বোঝার জন্য, জানার জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের (National Geographic channel) ‘এয়ার ক্র্যাশ ইনভেস্টিগেশন' (Air Crash Investigation) শো নিয়মিত দেখতেন ফায়াজ। লাহোরের চৌবুরজি স্কোয়ারে জনসাধারণের জন্য প্রদর্শিত পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বিমানও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। তবে বিমান ওড়ানোর অনুমতি চেয়ে পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার বারে বারে আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি। ফায়াজ বলেন, প্রায় এক বছর আগে একটি ছোট্ট ইঞ্জিন দিয়ে নিজেরই গ্রামে কয়েক দফা ওই এক আসনের প্লেনটি উড়িয়েছিলেন তিনি।
‘মিনি বিমান' সৃষ্টিকর্তার আবেগ এবং দক্ষতার প্রশংসা করে CAA জানিয়েছে আরও দক্ষতা অর্জনের জন্য ফায়াজকে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা সরবরাহ করবেন তাঁরা। ২০১৯ সালের নতুন বিমান নীতির অধীনে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এই সেক্টরকে উন্নত করতে এবং নতুনত্বকে সমর্থন জানাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে বলেই তাঁদের আশ্বাস।
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদনা করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে।)