পওয়েহির চিত্রটি মেসিয়ার 87 এর কেন্দ্রে অবস্থিত ব্ল্যাক হোলের, যা বৃহত্তম গ্যালাক্সি (Messier 87, the largest galaxy), প্রায় ৫৪ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
নিউ দিল্লি: একালের অন্যতম সেরা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বলা যেতে পারে ব্ল্যাকহোলের (first-ever black hole) সদ্যপ্রাপ্ত ছবিটিকে! প্রথম চিত্রিত সেই কৃষ্ণ গহ্বরের নামকরণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। ‘পওয়েহি' নামে অভিহিত করা হচ্ছে এই ব্ল্যাকহোলকে যার অর্থ অনন্ত সৃষ্টির অন্ধকার উত্স। জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিখ্যাত হাওয়াইয়ান ভাষা অধ্যাপক ল্যারি কিমুরা ( Hawaiian language professor, Larry Kimura) আলোচনা করে এই নামটি ঠিক করেছেন।
জানেন, কৃষ্ণগহ্বরের প্রথম ছবি প্রকাশ্যে আনলেন কোন বিজ্ঞানী?
কৃষ্ণ গহ্বরের প্রদত্ত নাম, ‘Powehi' আসলে একটি হাওয়াইয়ান শব্দ ‘Kumulipo' থেকে উদ্ভূত। মহাবিশ্বের সৃষ্টি বর্ণনা একটি আদিম মন্ত্রোচ্চারণ (primordial chant describing the creation of the universe) থেকেই এই শব্দটির উৎপত্তি। Po, বা অসীম সৃষ্টির গভীর অন্ধকার উত্স (profound dark source of unending creation) শব্দটি ওই মন্ত্রে বারে বারে উচ্চারিত হয়। ওয়েহি, বা ওয়েহিওয়েহি হল ওই মন্ত্রে বর্ণিত পো' এর একটি রূপ (one of many descriptions of po in the chant)।
হাওয়াই আইল্যান্ডে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপগুলির মধ্যে দুটি এই কৃষ্ণ গহ্বরের প্রথম ছবি (world's very first image of a black hole) তৈরির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলেই এর হাওয়াইয়ান নামকরণ করা হয়েছে।
অধ্যাপক কিমুরা বলেন, “এটা চমৎকার বিষয় যে আমরা হাওয়াইয়ারা অনেক আগে থেকেই এই পরিচয়কে সংযুক্ত করতে সক্ষম, যেমন কুমুলিপোর মন্ত্রের ২১০২ টি লাইন এখানেই উচ্চারিত হয়, আমাদের এই গোটা বিষয়টার মধ্যে এক অদ্ভুত উত্তরাধিকারিত্ব রয়েছে যেন...।”
কেমন দেখতে সর্বগ্রাসী কৃষ্ণ গহ্বর? প্রকাশ পেল মহাজাগতিক বিস্ময়ের প্রথম ছবি!
পওয়েহির চিত্রটি মেসিয়ার 87 এর কেন্দ্রে অবস্থিত ব্ল্যাক হোলের, যা বৃহত্তম গ্যালাক্সি (Messier 87, the largest galaxy), প্রায় ৫৪ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। নতুন ছবিটি ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (Event Horizon Telescope) থেকে তোলা। এটি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা ১০ টি রেডিও টেলিস্কোপের নেটওয়ার্ক এবং এটি একটি একক রিসিভার হিসাবে কাজ করছে, যা উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও তরঙ্গগুলির সাথে সংযুক্ত।
চিত্রটিতে কৃষ্ণ গহ্বরের চারপাশে আলো এবং অন্ধকারের সীমান্ত দেখা যাচ্ছে। যাকে বলে ইভেন্ট হরাইজন। এটি হল পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন অর্থাৎ, যেখানে ব্ল্যাক হোলের মাধ্যাকর্ষণ এতই চরম হয়ে যায় যে, প্রবেশ করে গিয়েছে এমন কোনও কিছুই আর ফিরে আসতে পারে না। ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রস্থলে, সময় ও স্থান নিজেদের মধ্যেই এত বক্র হয়ে যায় যে পদার্থবিজ্ঞানের কোনও নিয়ম কানুন সেখানে খাটে না।
পওয়েহির ছবি প্রকাশের পরে ইউরোপীয় কমিশন টুইট করে, “কৃষ্ণ গহ্বরকে জানতে পারার মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞানের জগতে এক অন্যরকের দিশা বদল ঘটবে, আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্বের পূর্বাভাসকেই ফের নিশ্চিত করল এই ছবি এবং আমাদের মহাবিশ্বের অনুসন্ধানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল।”