এই মাসের শুরুর দিকেই রাজ্যের সচিবালয় নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোর সাক্ষাৎ করেন
কলকাতা: এক মাসে দুইবার! ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের কৌশল ঠিক করার জন্য যে রাজনৈতিক কৌশলী প্রশান্ত কিশোর (Poll strategist Prashant Kishor) যে প্রধান ভূমিকা নিতে চলেছেন এই নিয়ে রাজনৈতিক মহল একরকম নিশ্চিতই বলা যায়। তাঁদের নিশ্চয়তা আরও খানিক পাকা করেছে বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Trinamool Congress (TMC) supremo Mamata Banerjee) সঙ্গে নির্বাচনী কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোরের (Poll strategist Prashant Kishor) দ্বিতীয় বৈঠক।
২০১৪ সালের পরে হঠাৎ পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) গভীর প্রভাব বাড়ার পরেই রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূলকে নিজের আসন ধরে রাখার চেষ্টা হিসেবেই প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে এই ঘন ঘন সাক্ষাৎ বলে মনে করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় (সিএমও) সূত্রের খবর, গতকাল রাজ্যের সচিবালয় নবান্নে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাক্ষাৎ করেন এবং প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের সাংসদ ও মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
নেত্রীর কথার ভুল ব্যাখ্যা করেছে কংগ্রেস ও সিপিআই(এম), দাবি তৃণমূলের
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের (2021 West Bengal Assembly polls) জন্য তৃণমূলের হয়ে রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে তাঁর সম্ভাব্য নিয়োগের বিষয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন প্রশান্ত কিশোর এবং তৃণমূল নেতৃত্বও। তবে সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত কিছুই চূড়ান্ত করা হয়নি।
ওই সূত্রের খবর, “প্রশান্ত কিশোরের কাজ করার নিজস্ব ঘরানা রয়েছে। কোনও পরামর্শ বা মতামত দেওয়ার আগে তিনি সেই বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনার জন্য অনেকটা সময় ব্যয় করেন। তাঁকে যদি নিযুক্ত করা হয়, তাহলে সকলেই জানতে পারবেন।"
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরর পাশাপাশি হাতে গোনা কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় তৃণমূল নেতাই একমাত্র জানেন এই বৈঠকে কী কী আলোচনা হয়েছে। সূত্রের খবর, মমতার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন প্রশান্ত। অনুমেয় যে, রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে প্রশান্ত কিশোরের আনুষ্ঠানিক নিয়োগ এবং তৃণমূলের জন্য কর্মসূচি প্রণয়নের বিষয়ে তিনি এবং তাঁর দল কী কী ভূমিকা পালন করবেন সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রশাসনের অন্দরের খবর, যদি প্রশান্ত দায়িত্ব নেন, তবে তিনি ও তাঁর দল রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা ধরে ধরে আগে পড়াশোনা করবেন এবং তারপরই রাজনৈতিক কৌশল প্রস্তুত করবেন।
মমতার 'ব্যর্থতা'ই বাংলায় বিজেপির উত্থানের কারণ:অধীর রঞ্জন চৌধুরী
এই মাসের শুরুর দিকেই রাজ্যের সচিবালয় নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোর সাক্ষাৎ করেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী যদিও তাঁর নিয়োগের সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেন।
অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের বৈঠক বিষয়ে ফের কটাক্ষ করেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতা মুকুল রায় (Senior BJP leader Mukul Roy)! মুকুল বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিৎ প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসাবে পদত্যাগ করা এবং তারপর প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে আলোচনায় বসা। উনি তো দু'টো বিভাগের দায়িত্বেই চূড়ান্ত ব্যর্থ।”
মুকুল রায় দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষজন মুখ্যমন্ত্রীর উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন এবং কোনও নির্বাচনী কৌশলবিদই রাজ্যের নির্বাচনী জোয়ারের গতিমুখ বদলাতে পারবেন না।
পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যের ৪২ টি আসনের মধ্যে ১৮ টি আসনে জিতেছে, যা শাসকদল তৃণমূলের চেয়ে মাত্র চারটি আসন কম। লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির চমকপ্রদ ফলাফলের পর বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, তাঁদের এখন একটাই লক্ষ্য। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে গদিচ্যুত করাতেই জান প্রাণ লড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।