পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতে পরিবারটিকে ‘অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা’ খুন করেছে।
কলকাতা: মুর্শিদাবাদে বাড়ির ভিতরে ঢুকে আট বছরের শিশু সহ প্রাথমিক শিক্ষক ও তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জুড়ে গেল রাজনীতির রঙ! মঙ্গলবার জিয়াগঞ্জে রক্তে ভেসে যাওয়া অবস্থায় বাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৫ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষক বন্ধু প্রকাশ পাল (Bandhu Prakash Pal), তাঁর স্ত্রী বিউটি (৩০) ও ছেলে অঙ্গনের লাশ। বিজেপি এবং দলের আদর্শবিষয়ক পরামর্শদাতা Rashtriya Swayamsevak Sangh বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) জুড়ে গিয়েছে এই ঘটনায়। আরএসএসের দাবি, বন্ধু পাল একজন আরএসএস কর্মী (RSS worker) ছিলেন।
বিজয়ার আবহে রাজ্যে খুন প্রাথমিক শিক্ষক ও তাঁর পরিবার
বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র (BJP spokesperson Sambit Patra) মৃতদেহের একটি ভিডিও টুইট করে এর ভয়াবহ প্রকৃতির সম্পর্কে সতর্ক করে লিখেছেন: “এটি আমার বিবেককে নাড়া দিয়েছে ... আরএসএসের (RSS) একজন কর্মী শ্রী বন্ধু প্রকাশ পাল, তার আট মাসের গর্ভবতী স্ত্রী এবং তার শিশুটিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে। উদারপন্থীরা কেউ একটি শব্দও উচ্চারণ করছে না! মমতাকে ৫৯ জন উদারপন্থী কোনও চিঠিও লিখছেন না!”
৬ বছর আগে, পাল পরিবারের সদস্যরা জিয়াগঞ্জে আসেন বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতে পরিবারটিকে ‘অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা' খুন করেছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের এই ঘটনার নৃশংসতায় স্তম্ভিত গোটা জেলা। বিজয়াদশমীতে পুজো মণ্ডপে ওই পরিবারের অনুপস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন প্রতিবেশীরা যখন তাদের বাড়িতে গিয়ে দরজাটি ভেতর থেকে বন্ধ অবস্থায় দেখতে পান তখনই এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। “স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন এবং রক্ত ভেসে যাওয়া মৃতদেহগুলি উদ্ধার করা হয়,” জানিয়েছে পুলিশের এক কর্মকর্তা।
Lynching শব্দটি "পশ্চিমের দেশগুলি থেকে এসেছে," এতে দেশের বদনাম হচ্ছে: আরএসএস প্রধান
বন্ধু পালের ভাই সুজয় পাল সংবাদ সংস্থাকে বলেন, যে তাঁর দাদা ২০ বছর ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন এবং ছেলের লেখাপড়ার জন্য মুর্শিদাবাদে চলে এসেছিলেন। “কারও সঙ্গে তাঁদের কোনও সমস্যা ছিল কিনা তা আমরা জানি না,” বলেন সুজয়। পশ্চিমবঙ্গ আরএসএস-এর সম্পাদক জিষ্ণু বসুর বলেন, বন্ধু পাল একজন আরএসএস কর্মী ছিলেন এবং সম্প্রতি তিনি একটি ‘সাপ্তাহিক মিলন' সভার সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডগুলি পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসার চক্রে একটি বিদ্বেষপূর্ণ অধ্যায় যুক্ত করেছে। এই রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস এবং প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি একে অপরের বিরুদ্ধে খুন এবং হামলার অভিযোগ করেছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বারেবারে এই হিংসার ঘটনায় বেশ দ্বন্দ্বেই রাজ্য রাজনীতি। এই বছরের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচনের সময় বঙ্গে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা তুঙ্গে ওঠে।
“ভয়াবহ, ভয়াবহ অপরাধ এবং সবচেয়ে খারাপ বিষয়টি হল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ জাতীয় ঘটনা বন্ধ করার জন্য কিছুই করা হয়নি। আমি মুখ্যমন্ত্রী (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) এবং ডিজিপিকে চিঠি দিচ্ছি,” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে টুইট করেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা।