"আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৭০ লক্ষ কর্মসংস্থানের অঙ্গীকার করছি আমরা উত্তরপ্রদেশের মানুষের কাছে। 'মিত্রোঁ', উত্তরপ্রদেশে স্থাপিত হওয়া সমস্ত রোজগার-সংক্রান্ত উদ্যোগের মূল ভাগীদার হবে যে এই রাজ্যেরই ৯০ শতাংশ যুবা, তা সুনিশ্চিত করছি আমরা। সরকার গঠন করার ৯০ দিনের মধ্যেই সমস্ত খালি সরকারি পদ ভর্তি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে"... ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে লখনউতে দাঁড়িয়ে বিজেপির ইস্তাহার থেকে ঠিক এই কথাগুলোই পড়ে শুনিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। যার প্রতিধ্বনি এবার ২০১৮ সালের মধ্যপ্রদেশে শোনা গেল কমলনাথের মুখ থেকে। "বহু মানুষ বাইরের রাজ্য থেকে এই রাজ্যে এসে রোজগার করছেন। তাঁরা বিহার থেকে আসছেন। তাঁরা উত্তরপ্রদেশ থেকে আসছেন। আমি তাঁদের নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। কিন্তু, ঘটনা হল, এর ফলে বঞ্চিত হচ্ছে মধ্যপ্রদেশের যুবসমাজ। এবার থেকে এই রাজ্যে যা কর্মসংস্থান হবে, তার ৭০ শতাংশ থাকবে স্থানীয় বাসিন্দাদের জিম্মায়"...
দেখুন ভিডিও: Prime Time With Ravish Kumar
মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এই কথাগুলো বলেছেন দুই বিপরীত দলের নেতা। এই দুই নেতার বয়ান খুব মন দিয়ে শুনলে উপলব্ধি করা যায় এঁদের দুজনের বক্তব্যের মূলেই যে তীরটি রয়েছে, তা আদতে ছোড়া হয়েছে উত্তরপ্রদেশ আর বিহার থেকে রোজগারের সন্ধানে ভিনরাজ্যে যাওয়া মানুষগুলোর দিকে। এই কথাগুলো শোনার পর এই মানুষগুলোর যদি আপনাদের ওপর তীব্র রাগ হয়, তাহলে তাদের কি দোষ দেওয়া যায়? ব্যাপারটা তো এমন নয় যে, কেবল উত্তরপ্রদেশ আর বিহারের মানুষরাই ভিনরাজ্যে কাজের সন্ধানে যায় আর মধ্যপ্রদেশ বা ছত্তিশগড়ের মানুষরা যায় না! তাহলে?
এই বিতর্কটিকে দুটি স্তরে ভাগ করে দেওয়া যাক বরং। প্রশ্ন ওঠে, কর্মসংস্থান যদি একেকটি রাজ্যজুড়ে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশই স্থানীয়দের কুক্ষিগত হয়ে যায়, তাহলে সেই সিদ্ধান্ত কি ভারতের সার্বভৌমত্বের তত্ত্বের প্রতিও একটি বড়সড় আঘাত নয়? এমন কথা শুনে কেন জানি মনে হয়, কোনওভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন আমেরিকার মতোই আমরাও কি প্রতিটি রাজ্যের মধ্যে একটি করে সিমেন্টের তৈরি উঁচু দেওয়াল খাড়া করে দেওয়ার চেষ্টায় রত? যাতে, কেউ আর রোজগারের লক্ষ্যে নিজের রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে পা-ই রাখতে না পারে? তারপর সেই কর্মসংস্থানের বাস্তব ভিত্তি কী হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাটির হাল কী হতে পারে, তা কি আমরা ভেবে দেখেছি কখনও? নাকি, নেতারা ভেবেছেন?
অমিত শাহ উত্তরপ্রদেশে গিয়ে বলেছিলেন, রাজ্যের কর্মসংস্থানের ৯০ শতাংশ থাকবে স্থানীয় মানুষদের জিম্মায়। এতে কি উত্তরপ্রদেশের যুবসমাজের আদৌ দারুণ কিছু ভালো হয়ে গেল? উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকার গঠন করার পর কতগুলো এমন সংস্থা তৈরি হয়েছে, যেখানে ৯০ শতাংশ কর্মসংস্থান হয়েছে রাজ্যের যুবসমাজের? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নয়ডাতে স্যামসাং-এর কারখানার উদ্বোধন করেছিলেন। সেখানকার হিসেবটাই দিয়ে না হয় ওঁরা জানান যে, ওখানে উত্তরপ্রদেশের ৯০ শতাংশ যুবক বা যুবতীর চাকরি হল কি না! তথ্য কিন্তু বলছে, তা একেবারেই হয়নি। অবশ্য, ইস্তাহারের অঙ্গীকার ভুলে যাওয়া তো নেতাদের প্রাচীন রোগ!
একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক এবার। ছ'বছর আগে, ২০১২ সালে শিবরাজ সিং চৌহান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে মোট কর্মসংস্থানের ৫০ শতাংশের ভাগীদার থাকবে রাজ্যের স্থানীয় যুবসমাজ। মধ্যপ্রদেশের সরকার কি বলতে পারবে আমাদের যে, কতগুলো এমন উদ্যোগ ক্ষমতায় আসার পর সরকার নিয়েছিল, যাতে ৫০ শতাংশ কর্মসংস্থান হতে পারে স্থানীয় যুবসমাজের? কোনও তথ্য আছে সরকারের কাছে, যা থেকে তারা তাদের প্রাক-নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়? নতুন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ কি এই তথ্য সংক্রান্ত কোনও শ্বেতপত্র সাধারণ মানুষের সামনে আনতে পারবেন? অথচ, ইন্টারনেটে সার্চ করলেই কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, গোয়া বা হিমাচল প্রদেশের মতো রাজ্যের পরিসংখ্যান খুব সহজেই চোখের সামনে চলে আসে। এই রাজ্যগুলিতে বহু এমন কর্মসংস্থান তৈরির নজির রয়েছে, যেখানে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা।
এবার, প্রতিটি রাজ্যের সরকারি চাকরির ভর্তি প্রক্রিয়া এবং তার সঙ্গে যুক্ত থাকা সংস্থাগুলির দিকেও চোখ ফেরানো যাক৷ উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মধ্যপ্রদেশ নিয়েই এই লেখা শুরু হয়েছিল, তাই এই তিনটি রাজ্যকে নিয়েই আলোচনাটা হোক। আপনি এই রাজ্যগুলির চাকরি দেওয়ার রেকর্ড দেখুন ভালো করে। এমন অনেক চাকরির কথা শোনা যায়, যা পাওয়ার জন্য ফর্ম তোলে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ, ফর্ম বেচার পয়সা থেকে কোটি কোটি টাকা ঢোকে সরকারের ভাঁড়ারে, অথচ, ফর্ম তোলার পর সেই পরীক্ষার আর নামগন্ধ পাওয়া যায় না৷ আবার, যে পরীক্ষাগুলো হয়েও যায়, সেগুলোর ভাগ্যও বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমার চাপে পড়ে আটকে থাকে লাল ফিতের ফাঁসে।
অমিত শাহ আমাদের একটু জানান যে, প্রতিশ্রুতিমতো ৯০ দিনের মধ্যে কতগুলো পদপূরণ করার প্রক্রিয়া শুরু হল? কতদিনই বা সময় লাগবে পুরোটা সম্পন্ন হতে? তিনি জানান আমাদের। শুধু তিনিই নয়। নীতিশ কুমার, অমরিন্দর সিংহ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানান।
আত্মসমর্পণের জন্য সজ্জন কুমারকে কয়েকদিন সময় দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দিল আদালত
কেমন অন্ধকারে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে আমাদের বেশ কিছু চেনা হিসেব, তা একটা ছোট উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। এই বছর উত্তরপ্রদেশে একটি পরীক্ষা হয়। সহকারী অধ্যাপক পদের পরীক্ষা। মোট ৬৮,০০০ পদ। এই পরীক্ষাতে তুমুল জালিয়াতির ফলে যার শীর্ষে থাকার কথা ছিল, তাকে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়। আর, যার কস্মিনকালেও পাশ করারই কথা ছিল না, সে পৌঁছে গেল শীর্ষে! একবার ভাবুন! পরে, আদালতের নির্দেশে অঙ্কিত বর্মাকে এই পরীক্ষার শীর্ষস্থানাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তাকে, ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছিল! কেবল এটাই নয়। অখিলেশ যাদবের সরকারের আমলে এই ৬৮,০০০ সহকারী অধ্যাপকের শূন্যপদ ভরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। যা, পরের সরকারের আমলে এসে স্থগিত হয়ে যায়। যাঁরা পাশ করেছেন, তাঁদের চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেই নির্দেশে কানও দেয়নি সরকার। চাকরিগুলোও হয়নি তাই৷ নিজের রাজ্যে চাকরি পেতেই হাজার-হাজার অসহায় যুবক-যুবতীকে ধরনা-প্রদর্শনে বসতে হয়। এত কিছুর পরেও, এখনও ওই পরীক্ষাটিতে পাশ করা অন্তত কয়েক হাজার যুবক-যুবতীর চাকরিটা হয়নি।
আমি প্রাইম টাইম-এ চাকরি সংক্রান্ত সিরিজটিতে এই ঘটনাগুলো নিয়ে স্পষ্টতই দিশেহারা যুবসমাজকে নিয়ে ৫০'টির বেশি এপিসোড করেছি। আজও করছি। কেবল, এখন আর এপিসোডের সংখ্যা গুনি না। বন্ধ করে দিয়েছি। পাঠক, এই সিরিজগুলি আপনি চাইলে দেখতে পারেন। এই সিরিজে দিনের পর দিন ধরে এই কথাগুলো বলে যাওয়ার ফলেই ৩০,০০০ যুবক-যুবতীর হাতে নিয়োগপত্র আসে। এরা হল সেই মানুষ, রেজাল্ট বেরোনোর পরও যাদের চাকরিটি সুনিশ্চিতভাবে বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করে যেতে হচ্ছিল। এবার, এই হিসেবটাও কিন্তু অন্তিম হিসেব নয়। তারপরও অনেকের হাতে নিয়োগপত্র এসেছে বলে শুনেছি। আমি কেবল, গোনাটা বন্ধ করে দিয়েছি!
এই কথাগুলো যে নিজের বা নিজের সংস্থার চ্যানেলের ঢাক পেটানোর জন্য বলছি, তা নয়। অন্য কোনও সংস্থার চ্যানেল হলে, সারাদিন ধরে হয়তো এই কথাই বলে চলতো যে, আমাদের জন্য ৩০,০০০ মানুষ তাঁদের নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন...আমার উদ্দেশ্য তা নয়। আমার অভ্যাসও তা নয়। আরেকটি ব্যাপারও এক্ষেত্রে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া ভালো। আমি নিজে এর প্রচার চাই না, তার নেপথ্যে একটি আপাত সরল অথচ অতি নির্মম কারণের বীজ লুকিয়ে আছে। এমন প্রচার শুরু হলে, তার প্রবল মহাভার আমি নিতে পারতাম না। গোটা দেশে কাজের জন্য, খাদ্যের জন্য অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। তারা জিততে চাইছেন হয়তো, কিন্তু জীবন তাদের হারিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে বেশিরভাগ সময়েই। এমনিতেই এই সিরিজটি নিয়ে কাজ শুরু করার পর, শয়ে শয়ে নয়, হাজারে হাজারে এমন বার্তা চলে আসত আমার কাছে যে, মাঝেমাঝে নিজেকেও অসহায় মনে হত। সকলের দাবি একটাই- আমাদের ভর্তি-সংক্রান্ত সমস্যার কথাটাও তুলে ধরুন।
তাই, এই ঘটনা আমাকে যে তাকে 'সাফল্য' ভেবে তা উদযাপনের সুযোগ দিয়েছে, তা নয়। তার কারণ, যতবারই আমার দেখানো খবরটির ফলে এক বা একাধিক মানুষের হকের চাকরি সুনিশ্চিত হয়েছে বলে প্রচারটি হয়েছে, তৎক্ষণাৎঅম বিদীর্ণ করে দেওয়ার মতো বার্তা চলে এসেছে একটা চাকরির জন্য মুখিয়ে থাকা, নিজের যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেও চাকরিটা না পেয়ে বসে থাকা যুবকদের কাছ থেকে। যা পড়ে যা দেখে যা শুনে আমি কেবলই বিষণ্ণ হয়ে পড়তাম। এই পরীক্ষাগুলির সঙ্গে দিনের পর দিন সৎভাবে জড়িয়ে থাকা কত যুবক-যুবতীদের জীবন যে মাটিতে মিশে গিয়েছে, এখনও যাচ্ছে, তার ইয়ত্তা নেই। ভয়াবহ এই সরকারি চাকরির পরীক্ষা-পদ্ধতি। দিন চলে যাচ্ছে, মাস চলে যাচ্ছে, বছর চলে যাচ্ছে, বয়স চলে যাচ্ছে, তবু চেষ্টার কমতি নেই, দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইটার মধ্যেও নেই একচুলও হেরে যাওয়া মনোভাব, তবু, চাকরিটা আর হয় না... কিছুতেই হয় না। এ যে কী ভয়াবহ এবং জ্বলন্ত সত্য, তা, যে এর সামনে পড়েনি, সে কখনও টের পাবে না।
১৯৮৪, ২০০২, ১৯৯৩ এবং ২০১৩ সালের নরহত্যার ঘটনার গালে একটি সপাট চড় কষাল দিল্লি হাইকোর্টের এই রায়
কিন্তু, অপরদিকে, আমার সমস্যাটিও এমন যে, তা অস্বীকার করতে পারি না। প্রতিটি এপিসোডে মন্ত্রের মতো বলতে হয় এই কথাটা যে, আমি সবার সমস্যা এখানে দেখাতে পারব না। কেন বলি, তার কারণ, এই গোটা পদ্ধতিটাকে তো আমি একা সংশোধন করতে পারব না। আমার হাতে সেই ক্ষমতা নেই। আমার হাতে রিপোর্টার নেই। আর, সত্যিই এ দেশে এত এত সমস্যা, এত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যে, আমি সব দেখিয়েও উঠতে পারব না। তাই নিজের ঢাকটাও পেটাতে পারব না। তার কারণ, এই মুহূর্তে আমার প্রশংসার থেকেও বেশি জরুরি ব্যাপার হল, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা কোন রাষ্ট্রকে রেখে যাচ্ছি, তা উপলব্ধি করা। সেটুকু ভাবতে গেলেই স্পষ্ট বোঝা যায়, সমস্যাটা আসলে কতটা গভীরে প্রোথিত হয়ে রয়েছে। তখন আর নিজের ঢাক পেটানোর মতো ব্যাপারগুলি মাথায় থাকে না বিন্দুমাত্র। এই চাকরি না পাওয়া যুবসমাজকে নিয়ে সত্যিই কি ভাবে কোনও মিডিয়া বা সরকার? প্রশ্নটি থেকেই যায়। যে প্রশ্ন খুব সহজ নয়। উত্তরটাতো নয়ই।
একটি মেসেজ এল এই লেখা যখন লিখছি, সেই সকাল নাগাদ। উত্তরপ্রদেশে তিন বছর ধরে দারোগা পদে ভর্তির পরীক্ষা হচ্ছে না। এক বছর আগে উত্তরপ্রদেশ পুলিশে কম্পিউটার অপারেটর পদে লোক নেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণার পরেও তা স্থগিত করে দেওয়া হয়। এক বছর কেটে গিয়েছে। এখনও কেউ জানে না, কবে পরীক্ষাটি হবে। উত্তরপ্রদেশের লোকসেবা আয়োগ থেকে ২০১৩ সালে ইঞ্জিনিয়ার পদের জন্য লোক নেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ সালে পরীক্ষা হয়। দু'বছর কেটে গিয়েছে। তিন বছর হতে চলল। কেউ জানে না এখনও যে, ওই পরীক্ষার রেজাল্ট কবে বেরোবে। ২০১৭ সালের জুলাইতে এলাহাবাদ হাইকোর্টের ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের ১,৯৫০'টি পদে তিন বছরের চুক্তিতে লোক নিয়োগ করার কথা হয়। রেজাল্ট বেরিয়ে গিয়েছে সাতমাস আগে। বছর শেষ হতে চলল। এখনও একজনেরও জয়েনিং হয়নি।
রাজ্য সরকারের কথা না হয় ছাড়ুন। কেন্দ্রীয় সরকারের হালও কিন্তু খুব একটা আলাদা কিছু নয়। স্টাফ সিলেকশন কমিশনের রেকর্ডের দিকে তাকালেই তা বুঝতে পারবেন। ২০১৬ সালে এই পরীক্ষা দিয়ে মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেসে ৬১৪ জনের চাকরি হচ্ছিল না৷ আটকে ছিল। ২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রেজাল্ট বেরিয়ে যায়৷ পাঁচমাস বাদেও নিম্ন মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের এই অল্পবয়সী যুবকরা দিল্লিতে এসে জলে পড়ে গিয়েছিল বেমালুম। ১২ সেপ্টেম্বরের 'প্রাইম টাইম'-এ এই মানুষগুলোর দুর্দশার কথা তুলে ধরা হয়। সেই সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী টুইট করে লেখেন, আমরা দেখছি। তিন মাস হয়ে গিয়েছে তারপর। মন্ত্রীমশাইয়ের 'দেখা' তখনও শেষ হয়নি। কয়েকদিন আগে তিন রাজ্যের বিধানসভায় হারের পর তাঁদের সম্বিত ফিরেছে। এখন পাশ করা পরীক্ষার্থীদের কাছে ধীরে ধীরে নিয়োগপত্র পাঠানো শুরু হয়েছে। ভাবুন, ১০ মাস ধরে ছ'শোর বেশি মানুষকে নিজেদের যোগ্যতায় চাকরির পরীক্ষায় পাশ করেও চাকরির নিয়োগপত্র না পেয়ে দোরে দোরে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে।
যুবসমাজের সঙ্গে দিনের পর দিন ধরে চলা এই ঘোরতর মিথ্যের বেসাতিটা এবার বন্ধ হোক। চাকরি দেওয়া নিয়ে ছেলেখেলাটা বন্ধ হোক। উত্তরপ্রদেশ বা বিহারের অল্পবয়সী চাকরিপ্রার্থীদের মনখারাপ করার প্রয়োজন নেই। বাকি রাজ্যের ছেলেমেয়েদেরও চাকরি পাওয়ার জন্য প্রাণপণ লড়াই করে যেতে হচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত জুড়ে। বিহারের যে বাইশ বা তেইশ বছরের ছেলেটি একটি চাকরির জন্য লড়াই করে চলেছে, তার থেকে মহারাষ্ট্রের ঠিক ওই বয়সী ছেলের চাকরির জন্য লড়াইটা খুব আলাদা কিছু নয়। যে কোনও লড়াইয়ের মতোই, এই লড়াইটাও আসলে সবার। লড়াইটা আসলে, নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি না করে একজোট হয়ে হাতে হাত রেখে মনটাকে শক্ত করে অদম্যভাবে ময়দানে নামার। শুধু দেখতে হবে, সরকার যে বছরের পর বছর ধরে তাদের বোকা বানিয়ে যাওয়ার খেলাটা খেলে যাচ্ছে, তা যেন বন্ধ করা যায়। নিজের রাজ্যে ভর্তির সময় কোন নেতা তাদের বাধা দিচ্ছে, কোন নেতাই বা তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, বুঝে নিতে হবে সেটাও। বুঝে নিতে হবে একসঙ্গে। একতাই আনতে পারে চেনা ছাঁদের আমূল বদল।
বেসরকারি চাকরির অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। তবে, সরকারি চাকরির হাল তার থেকেও খারাপ। চাকরি নিয়ে ধ্বংসের খেলা শুরু হয়েছে। চাকরি প্রায় নেইই, কিন্তু, যেগুলো আছে, সেগুলো আবার সময়ে হাতে আসে না। সরকারের কাছে এই মুহূর্তে কত চাকরি রয়েছে, তা জানারও কোনও উপায় নেই আমাদের কাছে। লেখার একদম অন্তিমলগ্নে এসে, অত্যন্ত উদ্বিগ্নভাবেই আমার তাই শেষ দুটো প্রশ্ন- কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় এসে কি নতুন কিছু করবে? বিজেপি সরকারকি এখন প্রকৃত ইতিবাচক কিছু কাজ করার কথা ভাববে?
প্রশ্ন দুটোর ভিতরেই অতি সামান্য হলেও রয়েছে আশার ছিটে। যে, হতেও তো পারে! হতে কি পারে না সত্যিই? এই লেখার শেষে সেই আশাটুকুই না হয় থাক।
রভিশ কুমারের আরও ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের Youtube চ্যানেলে।