সানাউল্লা গত ৩০ বছর ধরে আর্মিতে ছিলেন। এরপর তিনি অসম সীমান্ত পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন।
হাইলাইটস
- প্রাক্তন আর্মি কর্মীকে ‘বিদেশি’ চিহ্নিত করে আটক করা হয়।
- সানাউল্লা গত ৩০ বছর ধরে আর্মিতে ছিলেন।
- এরপর তিনি অসম সীমান্ত পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন।
গৌহাটি: অসমের (Assam) প্রাক্তন সেনা কর্মী মহম্মদ সানাউল্লা (Mohammad Sanaulla), যাঁকে ‘বিদেশি' বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেই কেস রিপোর্টে সই করা তিন ব্যক্তি এবার দাবি করলেন, এই ঘটনার কোনও তদন্তই হয়নি। ওই ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন, এই কেসের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক চন্দ্রমল দাস জাল তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন। ওই রিপোর্টের উপরেই নির্ভর করে গত সপ্তাহে সানাউল্লাকে গ্রেফতার করে এক বন্দিশালায় তাঁকে আটকে রাখা হয়। সানাউল্লা গত ৩০ বছর ধরে আর্মিতে ছিলেন। এরপর তিনি অসম সীমান্ত পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি অন্য দেশের নাগরিক হয়ে এই দেশে বেআইনি ভাবে বসবাস করছেন।
আপনারা সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না: কেন্দ্রের হিন্দি আগ্রাসন নিয়ে মমতা
অসম সীমান্ত পুলিশ বাহিনীর অফিসার চন্দ্রমল দাস, যিনি বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত, তিনি NDTV-কে জানিয়েছেন, আর্মি সুবেদার মহম্মদ সানাউল্লা সেই ব্যক্তি নন, যাঁকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। কিন্তু তিনি যে ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন, তাঁর নামও সানাউল্লা। তাঁর মতে, সেই কারণেই সম্ভবত প্রশাসনিক স্তরে এই রিপোর্ট নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।
তবে এখনও পরিষ্কার নয়, কী করে কামরূপ জেলায় অবস্থিত সানাউল্লার গ্রাম কোলোহিকাশের ব্যক্তিদের সাক্ষ্য ওই রিপোর্টে এল।
অন্যতম সাক্ষী কুরান আলি NDTV-কে বলেন, ‘‘ওই পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে আমার দেখাই হয়নি বা আমাকে আমাকে তদন্তের জন্য ডেকেও পাঠানো হয়নি। ২০০৮-০৯ সময়কালে আমি ওই গ্রামেই থাকতাম না। আমি ছিলাম গৌহাটিতে। সরকারের কাজ করছিলাম। এমনকী, সানাউল্লাও এখানে ছিল না। ও আর্মিতে ছিল।''
যে সময়ে তদন্তের কথা বলা হচ্ছে, সেটা ২০০৮-এর মে থেকে ২০০৯-এর অগস্ট। সেই সময় সানাউল্লা ছিলেন মণিপুরে। তাঁর চাকরির নথি জানাচ্ছে, তিনি বিদ্রোহ-দমন শাখায় কর্মরত ছিলেন।
টুইটার এবং ফেসবুকে মমতার প্রোফাইলে জুড়ল জয় হিন্দ, জয় বাংলা শব্দ দুটি
চন্দ্রমল দাসও মেনে নিয়েছেন, সানাউল্লা ওই সময় অসমে ছিলেন না।
কুরান আলি এবং আরও দুই সাক্ষী সাহাবান আলি ও আমজাদ আলি পৃথক পৃথক ভাবে পুলিশের কাছে চন্দ্রমল দাসের নামে অভিযোগ জানিয়েছেন।
এক সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক ভাস্করজ্যোতি মহন্ত NDTV-কে বলেন, তাঁরা আইন অনুযায়ী চলছেন ও ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ মেনে চলবেন।
কিন্তু এই কেস ও বিদেশিদের ট্রাইব্যুনালের পদ্ধতি ঘিরে স্থানীয়দের সন্দেহ দানা বাঁধছে। বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে সরিয়ে দেওয়া হয় ওই পদ্ধতিতে।
অসমের সীমান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ। নিয়মিত এখান থেকে অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ রুখতে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু স্থানীয়রা জানাচ্ছেন অতিরিক্ত ধরপাকড়ের ফলে অনেক সময়ই বিদেশি খুঁজতে গিয়ে সত্যিকারের ভারতীয় নাগরিকদেরও বিব্রত করা হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয়রা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই একই পদ্ধতিই হয়তো অনুসরণ করা হয়েছে নাগরিক পঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা বানানোর সময়।
কুরান আলি বলছেন, ‘‘আমরা সত্যিই বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে। একেকজনকে তিনবার নোটিশ ধরানো হচ্ছে। হিয়ারিংয়ে গিয়ে নিজেদের নামের ব্যাপারে সংশয় দূর করিয়ে আসছেন। তারপরই আবার নোটিশ আসছে।''
মহম্মদ ফয়জল হক, এক গ্রামবাসী, জানাচ্ছেন, ‘‘নতুন সরকার আসার পরে কেসের সংখ্যা বেড়েছে। সানাউল্লার মতো লোককে যদি জেলে যেতে হয়, আমাদের মতো সাধারণ লোকের কী হবে? নাগরিক পঞ্জী দেখুন। এক রাতে ৩ লক্ষ অবজেকশন জমা পড়েছে প্রকৃত নাগরিকদের বিরুদ্ধে।''