CAA: গত সপ্তাহে পাস হওয়া নাগরিত্ব আইনের প্রতিবাদে দেশজুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে
হাইলাইটস
- নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আজ ১০ টি শহরে উঠবে বিক্ষোভের ঝড়
- গত বুধবার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাসের পরেই প্রতিবাদ শুরু হয়
- অন্যান্য রাজ্যের মতো আজও প্রতিবাদে সোচ্চার হবে পশ্চিমবঙ্গ
নয়াদিল্লি:
সারা ভারত জুড়ে চলছে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ। বিক্ষোভের মুখে পরে পুলিশের গুলিতে নিহত ৩, আহত বহু মানুষ। এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পথে নেমেছেন ১০ রাজ্যের মানুষ, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটকের বিভিন্ন এলাকা, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি কার্যতর অবরুদ্ধ। প্রায় সমস্ত রাজ্যে বিক্ষোভের অনুমতি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল কিন্তু উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, কর্ণাটক এবং মধ্য প্রদেশে বিক্ষোভ মারাত্মক আকার ধারণ করে, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়, এমনটাই দাবি করা হয়েছে। মেঙ্গালুরুতে,কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে পুলিশের গুলিতে দুজন মারা যান এবং বিক্ষোভের দাপটে আহত ২০ জন পুলিশ কর্মী। লখনউতে মৃতের সংখ্যা ১ এবং আরও তিনজন আহত। দিল্লিতে, বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, রাস্তায় নেমে আসেন বহু বিক্ষোভকারী, যার জেরে বহু বিরোধী নেতাকে সাময়িকভাবে আটক করা হয়। দিল্লি-হরিয়ানা সীমানাও বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি উড়ান পরিষেবাও ব্যাহত হয়। বেঙ্গালুরুতে ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ সহ ১০০-এর বেশী জনকে আটক করা হয়, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার সময়েই তাঁকে আটক করে পুলিশ। লখনউ এবং আহমেদাবাদে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
দেখুন ১০ টি তথ্য:
নয়া নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে দেশের ১৩টি রাজ্যে বিক্ষোভের অষ্টম দিনে পা দিল, বিষয়টি ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নরেন্দ্র মোদির। ২০১৪-এর আগে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা ভারতে আসা অমুসলিম মানুষদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পথ সহজ করা হয়েছে নয়া আইনে। সমালোচকদের দাবি, নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে জাতপাতকে বিবেচনায় আনা ভারতের ধর্মনিরেপেক্ষ সংবিধানের ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেবে।
মেঙ্গালুরুতে পুলিশের গুলিতে দুজন মারা গিয়েছেন, স্থানীয় পুলিশ সূত্রে এর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত সেখানে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে এবং পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার জন্য মোবাইল ইন্টারনেট স্থগিত করার আদেশ দেওয়া হয়। দিনের বেলায় বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের সময় প্রকাশ্যে গুলি চালায় পুলিশ।
দিল্লিতে, মাণ্ডি হাউজ এবং লালকেল্লার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে বহু বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। আটকদের তালিকায় রয়েছেন বিরোধী নেতা ডি রাজা, সীতারাম ইয়েচুরি, নীলোৎপল বসু, বৃন্দা কারাত, অজয় মাকেন, সন্দীপ দীক্ষিত এবং শিক্ষাবিদ ও রাজনতিক যোগেন্দ্র যাদব ও উমর খালিদ।
বিক্ষোভের মধ্যে, বিজেপির কর্মরত সভাপতি জে পি নাড্ডা আফগানিস্তান থেকে আসা শিখ শরণার্থীদের সাথে বৈঠকের পর দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছিলেন যে "সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করা হবে এবং ভবিষ্যতে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধীকরণও প্রযোজ্য হবে"।
দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় ভয়েস, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, মাণ্ডি হাউজ, সিলমপুর, জাফরবাদ, মুস্তাফাবাদ, জামিয়ানগর, শহিন বাগ এবং বাওয়ানা ও আইটিও এলাকাতেও পরিষেবা ব্যহত হয়।
প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানা থেকে দিল্লিতে ঢোকার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা, ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয় সীমানা, ফলে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। আটকে পড়েন বিমানবন্দরগামী যাত্রীরা, এবং ১৫টিরও বেশী উড়ান দেরীতে চলে। ৮ ঘন্টা পর ব্যারিকেড তোলা হয়।
এদিন সকালে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়, তবে সেখানেও বিক্ষোভ হিংসাত্মক আকার নেয়। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ, প্রায় ১০টি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বারাণসীতেও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বহু গাড়ি, বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাদের অনেকেই প্রবীণ চককে টার্গেট করে। সম্ভলে বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
মুম্বইয়ে বিক্ষোভে অংশ গ্রহণ করেন প্রায় ১৫,০০০ জন চেন্নাইয়েও বিক্ষোভ হয়, বিক্ষোভের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। “গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ না করার জন্য” পুলিশকে অনুরোধ করেন অভিনেতা রাজনীতিবিদ কমল হাসান।
কলকাতায়, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জী নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের নজরদারিতে গণভোটের দাবি তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উদ্দ্যেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একটা ভোট করা হোক। কারণ আপনাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, আপনারা যা কিছু করতে পারেন না। আপনারা সব কিছুতে ভয় দেখাচ্ছেন, সমাজের স্তম্ভকে”।
কংগ্রেসের দাবি, প্রত্যেক ভারতীয়ের অধিকার প্রতিবাদ করা, ফলে তাদের ওপর পুলিশের ওপর পদক্ষেপ নিয়ে বিজেপির লজ্জা হওয়া উচিত। রাহুল গান্ধি ট্যুইট করেন, “কলেজ, টেলিফোন এবং ইন্টারনেট বন্ধ করার কোনও অধিকার নেই সরকারের, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বন্ধ করতে এবং ভারতের কণ্ঠরোধ করতে ১৪৪ ধারা জারি করার কোনও অধিকার নেই সরকারের। এটি ভারতের আত্মার অপমান”।
Post a comment