সেলফি তুলে ট্রোলের শিকার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
তিরুবনন্তপুরম: ফের বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী আলফনস কান্ননথানম। পুলওয়ামার জঙ্গি হানায় নিহত সিআরপিএফ জওয়ানের কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সেলফি তুললেন তিনি। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পরই নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। নেটিজেনরা সমস্বরে বলতে থাকে, একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছ থেকে এত ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন' আচরণ আশাই করা যায় না। অনেকেই বলেন, মন্ত্রী শোকের স্থানে গিয়ে নিজের ‘আত্মপ্রচার'-এ ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ঘটনার সূত্রপাত শনিবার। কেরালার ওয়ায়নাড় জেলায় পুলওয়ামা জঙ্গি হানায় মৃত সিআরপিএফ জওয়ান বসন্ত কুমার ভিভি'র কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ যখন তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ব্যস্ত, সেই সময়ই সেলফিটি তোলেন মন্ত্রী।
সেলফির সঙ্গে একটি ক্যাপশনও দিয়েছিলেন তিনি। যাতে লেখা ছিল- "সিআরপিএফ জওয়ান বসন্ত কুমারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হচ্ছে তাঁর বাড়িতেই। তাঁর মতো মানুষদের জন্যই আমি এবং আমরা শান্তিতে বেঁচে থাকতে পারি। দেশ তাঁকে ভুলবে না"।
“আমার মনে আগুন জ্বলছে”: পুলওয়ামা হামলা নিয়ে বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
যদিও, তাঁর লেখা এই শব্দগুলোতে আদতে ‘চিঁড়ে ভেজেনি'। এক নেটিজেন লেখেন- স্যার, আরও ভালো একটা ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারতেন সেলফি তোলার সময়। এই ক্যামেরায় তো আপনার মুখের লজ্জাটাও ঠিকঠাক প্রকাশ পাচ্ছে না! আরেকজন লেখেন- এইটা কি নাটক করার আদর্শ সময় বলে মনে হল আপনার?
স্মরণকালের মধ্যে সেনাবাহিনীর ওপর সবথেকে ভয়াবহ আক্রমণের ঘটনাটি ঘটে গেল বৃহস্পতিবার। জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় সিআরপিএফের বাসে ভয়াবহ জঙ্গিহানার ফলে শহিদ হলেন প্রায় ৪০ জনের বেশি সেনা। আহতের পরিমাণও প্রায় সমান। শ্রীনগরের সেনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাদের। অবন্তীপুরায় এই হামলার দায় স্বীকার করেছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। এই হামলার তীব্র নিন্দা করেন প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারাই। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন, "অত্যন্ত কাপুরুষের মতো কাজ এটা। এতজন সেনার শহীদ হয়ে যাওয়া মেনে যাওয়া না। আমি তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি। তাঁদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই। আহতদেরও দ্রুত আরোগ্য কামনা করি"। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি টুইট করে বলেন, "যারা এই অপরাধ ঘটাল, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। এমন শাস্তি, যা ওরা কখনও ভুলতে পারবে না"। এর আগে ২০১৬ সালে সেপ্টেম্বর মাসে উরির সেনা ছাউনিতে আক্রমণ করা হয়েছিল। সেই সময় শহিদ হন ১৯ জন সেনা। আজকের হামলায় এখনও পর্যন্ত সেনাদের মৃত্যুর সংখ্যা সেই হামলাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে।
পুলওয়ামা নিয়ে ভুয়ো ছবি ও পোস্টের বিষয়ে সতর্কবার্তা সিআরপিএফের
যে গাড়ি বিস্ফোরণের ফলে অন্তত এতজন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু হল, সেই গাড়িটি চালাচ্ছিল জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গি আদিল আহমেদ দার। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই কথা জানানো হয়। কাকাপোরার বাসিন্দা আদিল আহমেদ দার গত বছরই এই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে নিজের নাম লেখায়। তার অন্য দুটি নাম হল ' আদিল আহমেদ গাড়ি টকরানেওয়ালা' এবং 'ওয়াকস কম্যান্ডো অব গুন্দিবাগ'। প্রায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানকে নিয়ে যাচ্ছিল যে বাসটি সেই বাসটিতে ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক বোঝাই স্করপিও নিয়ে হানা দেয় আদিল আহমেদ দার। এই ভয়াবহ হানার পরেই তার ছবি এবং ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হতে থাকে। ২০১৬ সালের উরিতে হানার পর এত ভয়াবহ জঙ্গিহানা সেনার ওপরে এই দেশ আর দেখেনি।